দীপাবলির আগে টেরাকোটা প্রদীপের চাহিদা বাড়ায় কালিয়াগঞ্জে মৃত শিল্পীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে


শনিবার,৩১/১০/২০১৫
713

বিকাশ সাহাঃ    আলোর উৎসব দীপাবলিকে কেন্দ্র করে বাজার মাতিয়েছে রংবেরঙ্গের বৈদ্যুতিক লাইট। যা টুনিবাল্প নামে পরিচিত। এই টুনিবাল্পের দৌড়ত্বে প্রতিবছর মার খেয়েছে জেলার প্রদীপ শিল্পীরা। আর তাই টুনিবাল্পের সঙ্গে পাল্লা দিতে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ৮ নম্বর মুস্তফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কুনোরের হাটপাড়া গ্রামের টেরাকোটা শিল্পীরা। তাঁরা সাবেকী প্রদীপ বানানোর পাশাপাশি সাধারন মানুষদের নজর কারতে এবারে নতুন মডেলের প্রদীপ তৈরি করছেন। বাকুড়া, বীরভূমের টেরাকোটার আদলে কালিয়াগঞ্জের হাটপাড়ার মৃৎ শিল্পীদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। তাই নাওয়া খাওয়া ভুলে এই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সকল সদস্য মিলে টেরাকোটার আধুনিক ডিজাইনের প্রদীপ বানিয়ে চলেছেন। সাধারনত এঁটেল মাটি দিয়েই এই প্রদীপ গুলি বানানো হয়। হাটপাড়া গ্রামের মৃৎ শিল্পীরা স্থানীয় পিছলা বিল থেকে মাটি কেটে রিক্সা ভানে তা নিয়ে আসেন। এরপর তাতে জল মিশিয়ে মেখে আটা শানার মত করতে হয়। সেই মাটিকে বিভিন্ন ডিজাইনের সাঁচে ফেলে হরেক রকম অত্যাধুনিক মাটির মুখোশ সহ ছোট থেকে বড় প্রদীপ তৈরি করা হয়। সেগুলিকে একের পর এক জোড়া লাগিয়ে সুজজ্জিত প্রদীপের ঝাড় বা স্ট্যান্ড প্রদীপ ও পঞ্চ প্রদীপ তৈরি করা হয়। এবছর এই গ্রামের মৃৎ শিল্পীরা কয়েক হাজার এরকম প্রদীপ বানিয়েছেন। তা এখন রোদে শুকিয়ে আগুনে সযত্নে পুড়িয়ে বাজারজাত করার অপেক্ষায় রয়েছে। আজ তাঁদের প্রদীপ শুধু জেলার মধ্যেই সিমাবদ্ধ নেই, এরই মধ্যে অন্যান্য জেলা সহ ভিন রাজ্য থেকে হাটপাড়ার মৃৎ শিল্পীদের কাছে একাধিক ডিজাইনের প্রদীপের অর্ডার এসে পৌঁছেছে। আর তাই হাড়ি, সরা ও সাবেকী প্রদীপ বানানোর সঙ্গে সঙ্গে অত্যাধুনিক টেরাকোটার প্রদীপ বানাতে বেশি উৎসাহ দেখাছেন তাঁরা। গোটা ভারত বর্ষ জুড়ে যখন চাইনা মোমবাতি ও টুনিবাল্পের রমরমা ঠিক সেই সময় দাঁড়িয়ে কালিয়াগঞ্জের হাটপাড়ার বাসিন্দা দুলাল রায়, গোপাল রায় সহ গোটা গ্রামের মৃৎ শিল্পীরা বিদেশী মোমবাতি ও টুনিবাল্পকে টেক্কা দিতে বদ্ধপরিকর। এলাকার মৃৎ শিল্পীরা জানান, ছেলে সহ মেয়ে বাড়ির গৃহিণীরাও এবার অত্যাধুনিক টেরাকোটার প্রদীপ বানাতে সহযোগিতা করছেন।
হাটপাড়ায় অত্যাধুনিক টেরাকোটার প্রদীপের অর্ডার দিতে আসা বিহারের ব্যবসায়ী সুনীল রায় বলেন, এখানের মৃৎ শিল্পীরা প্রতি বছর নতুন নতুন ডিজাইনের প্রদীপ তৈরি করেন। এর আগেও অনেক প্রদীপ নিয়ে গিয়েছি। এবছর প্রদীপের নতুনত্ব দেখে এবার আমি এক হাজার প্রদীপের অর্ডার দিলাম। এবার আমি পঞ্চ প্রদীপ, এক প্রদীপ ও লণ্ঠন প্রদীপের অর্ডার দিয়েছি। আমরা বিহারের কাটিহার সহ পূর্ণিয়া এলাকায় এই প্রদীপ বিক্রি করি। বিহারে টেরাকোটার প্রদীপের খুব চাহিদা, ফলে বেশি লাভের আশায় এতদুর আমি এসেছি।
টেরাকোটা শিল্পী দুলাল রায় বলেন, বাজারে টুনি বাল্পের যতই রমরমা থাকুক না কেন, দিন দিন এই টেরাকোটার প্রদীপের চাহিদা বেড়েই চলেছে। শুধু জেলা নয় ভিনরাজ্য থেকে ব্যবসায়ীরা এসে টেরাকোটার প্রদীপের অর্ডার দিয়ে যাচ্ছে। একটা টুনি বাল্প ক দিন চলবে? এই প্রদীপ ব্যবহারের পর যত্ন করে রাখলে তা বেশ কয়েক বছর চলে যাবে। বাড়ি থেকে প্রদীপ পাইকারের হাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি আমরা কোলকাতা, আসানসোল, বর্ধমান, শিলিগুড়ি সহ ভিন রাজ্যের বিভিন্ন মেলাতে অংশ নিই। ডিজাইন অনুযায়ী প্রতিটি প্রদীপ ৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ১০০০ টাকা দামের প্রদীপ তৈরি করতে খরচ হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। ফলে ১০০০ টাকা দামের প্রদীপ বিক্রি করে লাভ হয় ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। এই টেরাকোটার প্রদীপ বানিয়ে বেশি লাভ পাওয়া যায় বলে আমরা বিভিন্ন ডিজাইনের টেরাকোটার প্রদীপ বানানোর বেশি জোর দিই। এই কাজ করে সচ্ছল ভাবে আমাদের সংসার চলে যাচ্ছে।
টেরাকোটা শিল্পী তারা রায় বলেন, টেরাকোটার মাটির প্রদীপের খুব চাহিদা থাকায় আমরা বাড়ির সবাই মিলে মাটির প্রদীপ তৈরির কাজে হাত লাগাই। ছেলে মেয়েরা পড়াশুনার সাথে সাথে প্রদীপ বানাতে বাবার সঙ্গে এ কাজে হাত লাগায়।DSCN8170

Loading...
https://www.banglaexpress.in/ Ocean code:

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট