বিকাশ সাহাঃ কালি পূজার দিন সূর্য ডোবার পর প্রতিমা তৈরি করে পূজা দিয়ে সেই প্রতিমা সূর্য ওঠার আগেই বিসর্জন দেওয়ার রেওয়াজ আজও চলে আসছে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের দেবীনগরের কালিবাড়িতে। এই পূজোর ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, দিনাজপুরের রাজা জগদীশ নাথ রায়চৌধুরী রায়গঞ্জ সংলগ্ন ভূপালপুরের রাজা ভূপাল চন্দ্র রায়চৌধুরীর সাথে দেখা করে ফিরছিলেন। আসার পথে দেবীনগরের কাছে রাজা জগদীশ নাথ রায়চৌধুরীর ঘোড়া আর সামনের দিকে যাচ্ছিলোনা। তখন তিনি পথের পাশে একটি গাছের নীচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। গাছের নিচেই তিনি তখন ঘুমিয়ে পরেন। ঘুমের মধ্যেই দেবী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন। মা কালি রূপে এখানে পূজা করতে দেবী স্বপ্নে রাজাকে নির্দেশ দেন । সেই মতো রাজা জগদীশ নাথ রায়চৌধুরী সেখানে মা কালীর পূজো করেন। সেই সময় থেকেই মা কালি রূপে দেবী এখানে পূজিত হয়ে আসছে।
বয়সে প্রবীণ মানুষ হিসেবে পরিচিত কালি পূজো কমিটির ট্রাষ্টি সদস্যরা বলেন, দেবী নগরের কালি বাড়ির দেবীকে সূর্যের আলো দেখানো হয় না। কবে থেকে এই পূজোর প্রচলন হয় তা আজ পর্যন্ত কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারেনি। এখানে আগে শ্মশান ছিল। এলাকার প্রবীণ লোকদের কাছে ছোট বেলায় শুনতাম আগে ডাকাতরা নাকি এখানে পূজা করত। পূর্ব পুরুষের আমোল থেকে বংশ পরম্পরায় এখানে প্রতিমা গড়েন স্বপন চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরা। এখানকার প্রতিমার উচ্চতা দের হাত। প্রতিমাকে পূজো দেওয়ার পর রীতি মেনে তা বিসর্জন দেওয়া হয়। সূর্য অস্ত যাবার পর প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়। দেবীকে পূজো দিয়ে আবার সূর্য ওঠার আগেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। দেবীর নির্দেশ মতো আজও দেবীর মন্দিরে কোনও ছাদ নেই। দিনাজপুরের রাজার পর ভূপালপুরের তথকালীন রাজা ভূপাল চন্দ্র রায়চৌধুরী এই পূজা করতেন। এই পূজো করার জন্য কারও কাছে চাঁদা নেওয়া হয়না। প্রতি মঙ্গল ও শনিবার নিত্য পূজা বাবদ যে দক্ষিণা পাওয়া যায় তা নিয়ম করে ব্যাঙ্কে জোমা দেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে পূজোর যাবতীয় খরচা করা হয়।
কথিত আছে এই দেবীর কাছে মানত করলে কাওকে খালি হাতে ফিরতে হয়না। রায়গঞ্জ শহর সহ দুর দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত প্রাণ মানুষ তাঁদের মনস্কামনা পূরণের লক্ষ্যে কালি পূজার রাতে এখানে আসেন । বছরের অন্য সময়েও এখানকার ছাদহীন থানে নিয়মিত পূজো দেন ভক্তরা।
পূজোর রাতেই প্রতিমা তৈরী সহ বিসর্জন দেওয়ার চল রয়েছে রায়গঞ্জের দেবীনগর কালীবাড়িতে
রবিবার,০৮/১১/২০১৫
690