ক্যান্সারের জন্য দায়ী যে ৮ খাবার

‌ডি‌জিটাল ডেক্স: এই আট ধরনের খাবার থেকে যে ক্যান্সার হতে পারে তা প্রমাণিত। আর টিউমার বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে সবসময় সাবধান করে আসছেন।
স্বাস্থ্যবিষয়ক এক ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য মতে, ক্যান্সার হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে জিনগত সমস্যা, জীবনযাপন, ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম, কিছু নির্দিষ্ট সংক্রমণ, বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের কারণে হওয়া বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যা ইত্যাদি অন্যতম।
গবেষণা বলছে, ভুলভাল খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব- একজন ব্যক্তির ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম প্রধান দুটি কারণ। ভরসার কথা হল বিষয়টা আপনার নিয়ন্ত্রণে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ধূমপান বর্জন করা ছাড়াও আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা উচিত। যেমন- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা, পুষ্টিকর খাবার, বিশেষত উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার খাওয়া ইত্যাদি।

‘ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার রিসার্চ ফান্ড’য়ের মতে, আমেরিকাতে ২০ শতাংশ ক্যান্সার রোগীরই রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণ শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, মেদ, অতিরিক্ত মদ্যপান ও অপুষ্টি। সবগুলো কারণই মোকাবেলা করা সম্ভব, তাই খাদ্যাভ্যাস থেকে বাদ দিতে কিছু খাবার।

প্রক্রিয়াজাত ও কৃত্রিম চিনি: শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত চিনি ক্যান্সার কোষের প্রিয় খাবারগুলো মধ্যে অন্যতম। অর্থাৎ এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে সহায়ক। মেডিসিন বিভাগে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত জার্মান চিকিৎসক ওটো ওয়ারবার্গ ১৯৩১ সালে প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন যে টিউমার ও ক্যান্সার কোষ বেড়ে উঠতে উচ্চ মাত্রায় ‘ফ্রুক্টোজ’যুক্ত চিনির উপর নির্ভরশীল।
তাই প্রক্রিয়াজাত কিংবা কৃত্রিম চিনির পরিবর্তে মধু, গুড়, ম্যাপল সিরাপ ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।

প্রক্রিয়াজাত মাংস: যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই’য়ের করা এক গবেষণা অনুযায়ী, প্রক্রিয়াজাত মাংস অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় প্রায় ৬৭ শতাংশ। এতে থাকে উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ ও খাদ্য সংরক্ষক। আরও থাকে নাইট্রেইট, যা এর স্বাদ বাড়ায়। তবে ‘কারসিনোজেন’ ধরনের বিষ হিসেবে এর পরিচিত আছে।

‘স্মোকড মিট’ বা কাঠের ধোঁয়ার প্রস্তুতকৃত মাংস খাওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য সুবিধার নয়, কারণ এই ধরনের খাবার তৈরির সময় মাংসে ‘টার’ অর্থাৎ ধোঁয়া থেকে সৃষ্টি বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করে নেয়।
তাই খেতে হবে চর্বিহীন মাংস অথবা মাংস ঘরেই রাঁধতে হবে।

চাষ করা মাছ: বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা মাছ যেমন- স্যামন, অত্যন্ত জনাকীর্ণ পরিবেশে বড় হয়। মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবির আক্রমণ থেকে বাঁচতে ব্যবহার হয় বিভিন্ন জীবণুরোধকারী ওষুধ, কীটনাষক ও অন্যান্য ‘কারসিনোগেনিক’ রাসায়নিক উপাদান। প্রাকৃতিক মাছের তুলনায় চাষ করা মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণও কম থাকে।

তাই যতটা সম্ভব নদী বা সমুদ্রের মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
আচার ও ধোঁয়ার প্রস্তুতকৃত খাবার: এসব খাবারে সাধারণত খাদ্য সংরক্ষক উপাদান যেমন, ‘নাইট্রেইট’ থাকে। দীর্ঘদিন এসব খাবার খেলে ওই খাদ্য সংরক্ষক উপাদানগুলো শরীরে জমা হতে থাকে। ফলে একসময় এই বিষাক্ত উপাদানগুলো কোষের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং ক্রমেই ক্যান্সারের দিকে এগিয়ে যায়।

আবার ধোঁয়ার প্রস্তুতকৃত খাবার উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা হলে এতে থাকা ‘নাইট্রেইট’ পরিণত হয় আরও বেশি ক্ষতিকর ‘নাইট্রাইটস’য়ে। তাই এ ধরনের খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

হাইড্রোজেনেইটেড অয়েল বা ট্রান্স-ফ্যাট: মানুষের তৈরি এই উপাদান রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত করা হয়। আবার এর গন্ধ ঢাকতে ও স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক পদার্থ।

গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে, বাণিজ্যিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা খাবারে থাকা ‘হাইড্রোজেনেইটেড’ ও আংশিক ‘হাইড্রোজেনেইটেড’ উদ্ভিজ্জ তেল স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় দ্বিগুণ। তাই এর পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে ‘এক্সট্রা-ভার্জিন অলিভ অয়েল’, ‘এক্সট্রা-ভার্জিন কোকোনাট অয়েল’ কিংবা ‘পাম অয়েল’
আলুর চিপস: ‘হাইড্রোজেনেইটেড ভেজিটেবল অয়েল’য়ে ভেজে তৈরি করা হয় এই চিপস, সঙ্গে থাকে অতিরিক্ত লবণ।

নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, প্রতিদিন মাত্র ১ আউন্স চিপস খেলেই বছরে গড়ে প্রায় দুই পাউন্ড ওজন বাড়তে পারে। পাশাপাশি এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স-ফ্যাটও থাকে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। আর লবণে থাকা সোডিয়াম বাড়ায় রক্তচাপ। আলুর চিপসকে মচমচে বানানোর জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা হয়। এতে ‘অ্যাক্রিলামাইড’ নামক ‘কারসিনোজেন’ ধরনের বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়। যা সাধারণত সিগারেটে মেলে।

এজন্য দোকান থেকে চিপস কেনার পরিবর্তে ঘরেই চিপস বানিয়ে খাওয়া অভ্যাস করতে হবে।
মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন: খাওয়া সহজ এবং তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর একটি স্ন্যাকস পপকর্ন। তবে, ঝামেলা হল এর প্যাকেটে। বেশিরভাগ মাইক্রোওয়েভ পপকর্নের প্যাকেটের গায়ে থাকে ‘পারফ্লুরোঅক্টানোইক’ অ্যাসিড নামক রাসায়নিক উপাদান। যা স্তন, বৃক্ক, মুত্রথলি, কোলোরেক্টাল, প্রোস্টেট, ফুসফুস, থাইরয়েড, লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

পরিশোধিত সাদা আটা:
আটা পরিশোধনের সময় এর প্রায় সকল পুষ্টিগুণই নষ্ট হয়ে যায়। পরে একে ক্লোরিন গ্যাসের সাহায্যে ব্লিচ করা হয় ক্রেতার চোখে আকর্ষণীয় করার জন্য। এই আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রাও অনেক বেশি। অর্থাৎ শরীরে পুষ্টি সরবরাহ ছাড়াই ইনসুলিনের মাত্রা হুট করে বাড়িয়ে দিতে পারে।
তাই পরিশোধিত সাদা আটার পরিবর্তে গম, কাঠবাদাম বা বার্লির আটা খাওয়া ভালো।

admin

Share
Published by
admin
  • https://www.banglaexpress.in/ Ocean code:

Recent Posts

সিএএ নিয়ে প্রচারে মনোরঞ্জন, সাবধান করছেন এলাকার

২৪ এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে সিএএ। বিজেপির পক্ষ থেকে এই নিয়ে…

4 days ago

সন্দেশখালির ঘটনা সাজানো, বিজেপির পরিকল্পিত চিত্রনাট্য, ভাইরাল ভিডিয়োই দাবি বিজেপি নেতার

সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে এবার নয়া মোড়। সন্দেশখালি আন্দোলন থেকে শুরু করে যা যা ঘটেছে সম্পূর্ণটাই…

4 days ago

“আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে”- কুনাল ঘোষের গলায় কেন এই গান?

বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দলবিরোধী কথা বলছিলেন। বিশেষ করে…

4 days ago

“সনাতন বিরোধী তৃণমূল”- দৈনিক সংবাদপত্রে বিজেপির বিজ্ঞাপন , প্রচারে ‘ধর্ম’ ব্যবহার করায় কমিশনে তৃণমূল

বিজেপির বিজ্ঞাপনে 'ধর্ম' হাতিয়ার, নির্বাচন কমিশনের নজরে আনল তৃণমূল কংগ্রেস। যেখানে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকায় স্পষ্ট…

4 days ago

বিগত বছরে বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি হয় নি, দাবি WBSEDCL এর

বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি হয়েছে বলে মিথ্যে রটনা শুরু হয়েছে। বিগত বছরে এমন কোন মাশুল বৃদ্ধি…

4 days ago

হেলিকপ্টারে আগুনের ঘটনায় থমকে নেই দেব, শনিবার দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে চুটিয়ে প্রচার

হেলিকপ্টারে হঠাৎ আগুন। বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান অভিনেতা তথা তৃণমূল প্রার্থী দেব। তবে…

4 days ago
https://www.banglaexpress.in/ Ocean code: