এমন দেশটি কোথাও খুঁজে


সোমবার,২৩/০৪/২০১৮
1118

অশোক মজুমদার: আমার এ রাজ্যেই জন্ম। থেকেছি গ্রাম ও শহর দু’জায়গাতেই। কিন্তু এমন বাঙালি পরিবার কোথাও দেখিনি। টিভি এদের বাসস্থান। সকাল সন্ধ্যায় সুইচ টিপলেই এরা বেরিয়ে আসেন। নিজেদের কাজকর্মে পাবলিককে জাস্ট চমকে দেন। মাথা ভোঁ ভোঁ করে, গা গুলোয়, শরীরে চিমটি কেটে বুঝতে হয় যা দেখছি ঠিক দেখছি তো! পৃথিবীর কোন দেশ, কোন সভ্যতায় যা হয়না তা ঘটে বাংলা সিরিয়ালে। এবং এ ঘটনা ঘটান বাঙালি পরিবারের লোকজনেরাই। এই লোকজনদের খুনি, ধর্ষক, কুচুটে, ন্যাকা, বোকা, ধাপ্পাবাজ, অবুঝ, সাহসী, ভীরু, বিয়েপাগলা ও প্রেমিক এই কটি গোত্রে ভাগ করে নেওয়া যায়। সেখানে একই ছাদের নিচে কোন শাশুড়ি বিষ মিশিয়ে দিচ্ছেন তার পুত্রবধূর রঙিন শরবতে, কোথাও বা একাধিক বিয়ে করা স্বামীর অবহেলিত স্ত্রী হাসিমুখে যত্ন করে ভাত বেড়ে দিচ্ছেন স্বামীকে। কোথাও চলছে তন্ত্র শক্তিতে বশ করে কারো সম্পত্তি হাসিল করার চক্রান্ত। এখানেই আপনি দেখা পাবেন বিয়ে করার জন্য লাইন লাগিয়ে ইন্টারভিউ দিতে আসা পাত্রপাত্রীদের। শিল্প সংস্কৃতি ও প্রগতির গর্ব করে চলা পশ্চিমবঙ্গে এমন ঘটনা দীর্ঘকাল ঘটছে। এ বাংলা ও বাঙালিকে আমরা কেউ চিনিনা। ডি এল রায়ের ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে’ গানটা মনে পড়ে আমার। এমন বাংলাকে আমরা কোথাও খুঁজে পাই না।

Affiliate Link কলকাতার খবর | Kolkata News

সিরিয়ালের নামে এই বিকৃত বাংলাকে যারা আমাদের কাছে হাজির করছেন, যারা এগুলো বানান এবং অভিনয় করেন ছবি তোলার সূত্রে তাদের অনেককেই আমি চিনি। তাদের জিজ্ঞাসা করলেই উত্তর পাই লোকে এসব ভালো খায়, প্রোগ্রামের টি আর পি বাড়ে। আমাদেরও তো বেঁচে থাকতে হবে। কিন্তু এই অস্বাস্থ্যকর ভোজনে বুদ্ধিশুদ্ধির যে একেবারে নাভিশ্বাস উঠেছে,এতে যে হিংসা, কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে তা এরা বোঝেন না। অথচ এরা অনেকেই কৃতী, শিক্ষিত ও রুচিশীল মানুষ। পাবলিককে ‘খাওয়ানোর’ নামে এদের দায়িত্বজ্ঞানহীন বেনিয়াগিরি দেখে আমি অবাক হই। জিজ্ঞেস করলেই বলেন, দাদা সমাজে এসবও তো ঘটছে। আমরা দেখালেই দোষ?

এটা অত্যন্ত ছেঁদো যুক্তি। এক, সিংহভাগ বাঙালি পরিবারে দিনের পর দিন এমন হিংসা ও কুসংস্কারের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটেনা। সিরিয়ালের খরচ কমানোর প্রয়োজনেই টিভির এসব সিরিয়াল কিলাররা বাংলার শিল্প সংস্কৃতিকে খুন করে চলেছেন। এরা না জানেন বাংলার ইতিহাস ও মানসিকতা, না বোঝেন বাংলার ভূগোল। বাঙালি পরিবারকে এরা বিষয় করেছেন তার মূল কারণ হল এতে ইনডোরেই খুন, ধর্ষণ, চক্রান্ত, মোটা দাগের রগড় সবকিছুই একসঙ্গে কম খরচে ঢুকিয়ে নেওয়া যায়। সিরিয়ালগুলিকে লক্ষ্য করলেই আপনি দেখবেন গোটা ঘটনাটা ঘটছে কোন না কোন বাড়িতে। আর আউটডোর বলতে আছে, রাস্তায় গাড়ির যাতায়াত, মন্দিরে পুজো দেওয়া, পথচারিদের হেঁটে যাওয়া জাতীয় কিছু স্টক শট। দুই, আমাদের জীবনে কি ওপরের ঘটনাগুলি ছাড়া অন্য কোন পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেনা? আমাদের কি কোন সাফল্য কাহিনী নেই? তাহলে তা আপনারা তুলে ধরেন না কেন? সমাজের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা কি আপনাদের নেই?

বাংলা সিরিয়ালে হালচাল দেখে সঙ্গত কারণেই দিদি খুব বিরক্ত। তাই তিনি বলেছেন, এগুলো আমাদের জনমানস, সমাজ, সংস্কৃতির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এতে বাঙালির সমাজকেই ভুল চোখে দেখতে শেখানো হচ্ছে, বিকৃত হচ্ছে ভাষা, ভুল বার্তা যাচ্ছে মানুষের কাছে। তাই এগুলো বন্ধ করা উচিৎ। আমার কথা,

দিদি তো আপনাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক কিছু করছেন, আপনাদের অনেককেই তিনি ব্যাক্তিগতভাবে চেনেন। কোন সমস্যা নিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার সমাধান করতে চেষ্টা করেন। আপদে বিপদে পাশে থাকেন। কেবল টিভির অপারেটরদের সমস্যার সমাধানও তিনি করেছেন। তার প্রশংসায় সবসময় আপনারাও সরব। কিন্তু তা কি শুধুই সেজেগুজে এসে তার সামনে দাঁড়ানো আর ভালো ভালো কথা হয়ে থাকবে? টাকা বানানোর নেশা কি ভুলিয়ে দেবে আপনাদের সামাজিক দায়িত্ব? আমি শুধু বলছি, রোমাঞ্চ ও উত্তেজনা অনেক সাফল্য কাহিনিতেও আছে এবং তাও সিরিয়ালের বিষয় হতে পারে। মানুষের মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা থেকে শুরু করে সম্প্রীতির সুর তো আপনারাই নানা কাহিনির মধ্যে দিয়ে বেঁধে দিতে পারেন।

আলোর পাশাপাশি কালোও আছে। তা নিশ্চয়ই দেখাবেন কিন্তু মানুষকে ‘খাওয়ানোর’ নামে বাংলার সামাজিক, পারিবারিক, সাংস্কৃতিক জীবন নিয়ে এমন বীভৎস মজা করবেন না। ষড়যন্ত্র ও হিংসার মধ্যে বাংলাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।

 

Affiliate Link Earn Money from IndiaMART Affiliate

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট