চলে গেলেন ওয়াদেকার, কিন্তু ক্রিকেট প্রেমীরা তাঁকে স্মরণ করবেন ক্রিকেট এ তাঁর অবদানের জন্য। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অংশ গ্রহণ করেছিলেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত। তিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময়ই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছিলেন। ওয়াদেকার ছিলেন একজন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। আগ্রাসী ব্যাটিং র সাথে সাথে তিনি একজন ভালো স্লিপ ফিল্ডার ও ছিলেন। ভারত ১৯৭১ সালে ওয়েস্টইন্ডিস এবং ইংল্যান্ড এ ঐতিহাসিক সিরিজ জেতে তখন ভারতের ক্যাপ্টেন ছিলেন অজিত ওয়াদেকার। তৎকালীন ভারতীয় সরকার ১৯৬৭ সালে অর্জুন এবং ১৯৭১ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে।
বর্তমান ইন্টারনেট র যুগে, এখনকার যুবক যুবতিরা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যস্ত থাকে। তাদের কাছে টেস্ট ক্রিকেট র তেমন মূল্য নেই। সময় পেলে টি-২০ ক্রিকেট দেখে, তাদের কাছে ওয়াদেকারের কী মূল্য থাকবে!সেই সময় ব্যাটিং গড় ৪০ থাকা মানে এক বিরাট কৃতিত্বের কাজ যদিও সেটা তাঁর ছিল না কিন্তু যারা ৬০-৭০ র দশকের মানুষ তাঁদের কাছে নিশ্চয়ই মনে হবে ওয়াদেকার তৎকালীন ব্যাটসম্যান দের মধ্যে অন্যতম একজন সেরা ছিলেন।
তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সময়টা অতি সংক্ষিপ্ত ছিল। সেটা ছিল আট বছরের। কিন্তু প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট এ তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল প্রায় ৫০ র কাছাকাছি। তিনি দীলীপ ট্রফি ও রঞ্জী ট্রফি তে অত্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে পারফর্ম করতেন। সেই সময় ত্রিশতরান করা ছিল অত্যন্ত কঠিন। তখনকার প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট এ বোলিং-লাইন এখনকার মতো ছিল না। সেটা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ওয়াদেকার সেইসময় ত্রিশতরান করেছিলেন মহি-শূরের এবং চন্দ্রশেখর ও এরাপল্লী প্রসন্নের মত বোলিংর বিরুদ্ধে। সুনীল গাভাসকারের মতে, এই সময় স্পিন কিংবদন্তিদেরকে হেরে যেতে দেখেছিলাম এবং তাঁরা এটাও বুঝতে পারছিলেননা কেমন বল করবেন।
ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার পর ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক এ প্রশাসনিক পদে তিনি দায়িত্ব পান এবং সেটা তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে থাকেন। তিনি ক্রিকেট কে যতটা ভাল বাসতেন ব্যাঙ্ক র কাজ কেও তিনি ততটাই ভাল বাসতেন। সেই সময় তিনি মুম্বাই ক্রিকেট র প্রশাসনিক পদে থাকার দায়িত্ব পান। এরপর তিনি ভারতীও ক্রিকেট টিমের নির্বাচক র দায়িত্ব পান এবং তিনি একজন সফল ম্যানেজার ও ছিলেন। তিনি 1990 সালে ভারতীয় দলের ম্যানেজার হিসাবে নিযুক্ত হন তখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন। তাঁকে একজন প্রশাসনিক কর্তা বলেছেন যে অন্য কাউকে তাঁর বদলে দায়িত্ব দিলে ভাল হয়, ওয়াদেকার চমৎকার সাফল্য পাওয়া সত্তেও তিনি ম্যানেজারের দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
শুধু অধিনায়ক হলেই হয় না দলকে পরিচালনা করার জন্য দক্ষতা দরকার কারন সঠিক ভাবে পরিচালনা করাটাও শিল্প। ওয়েদেকারের শরীরীভাষা ঢিলেঢালা হাঁটা সমস্ত টিমের কাছে শক্তিশালী বিবৃতি দিত। ওয়েদেকারের টিমমেট মিলিন্দ রেগে একটি ম্যাগাজিন এ বলেছেন, “ ওয়েদেকার সম্পূর্ণ পরিস্থিতি বুঝতেন এবং সমস্ত পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতেন। তিনি আরও বলেছেন, আমরা যখন রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনাল এ ১০০ রানে পিছিয়ে আছি তখন উনি আমাদের কে বলেছিলেন ‘লড় এবং আমাদের কে রক্ষা কর। সেই কথা শুনে আমাদের মনে হয়েছে অধিনায়ক নয় বড় ভাই হিসাবে আমাদের কে বলছে। তাঁর কোনো কথা শুনে আমরা কোনদিন ই নিরাপত্তার অভাবে ভুগতাম না।” তিনি তাঁর সহকারী খেলোয়াড় দের কে শিক্ষা দিতেন কোন বিরোধী পক্ষকে ভয় না পেতে তা সে যত শক্তিশালী হোক না কেন।
বিজয় মার্চেন্ট চেয়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক পরিবর্তন হওয়া দরকার সেইজন্য তিনি মনসুর আলি খান পাতৌদির জায়গায় অজিত ওদেকারকে ভোট দিয়েছিলেন। সেইসময় অধিনায়ক র পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক তৈরী হয়েছিল। গাভাসকার এ সম্পর্কে বলেছেন, সেই সময় ভারতে এক ধরনের লবি ছিল যারা গুজব ছড়িয়েছিল মার্চেন্ট কে ১৯৪৬ সালে ইংল্যান্ড এ ক্যাপ্টেনশিপ দিতে অস্বীকার করার জন্য তিনি প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন। গাভাসকার এটাকে একটা ষড়যন্ত্র বলেছেন কারন এটার মধ্যে কোন প্রমান ছিল না।
ভারতের খ্যাতনামা ব্যাটসম্যান, কোচ এবং নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান সন্দীপ পাতিল বলেছেন, আমরা যারা সেইসময়ের যুবক ছিলাম তাঁরা সবসময় ওয়াদেকারকে অনুসরন করে চলতেন। তিনি যে ভাবে ব্যাট করতে আসতেন, তাঁর ব্যাট ধরার কায়দা কম বয়সী খেলোয়াড়দেরকে অনুপ্রানিত করত। তিনি অদ্বিতীয় ভঙ্গি তে কথা বলতেন যেটা সবাই কে মুগ্ধ করত। ভারতীয় জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আগে, যখন তিনি ছোট ছিলেন তখন শিবাজি পার্ক এ স্কোর বোর্ড ম্যানেজ করতেন এবং তাঁকে সঙ্গ দিতেন রমাকান্ত দেশাই ও বিজয় মঞ্জরেকার।
তিনি মুম্বাই ক্রিকেট র ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন চার বার ১৯৯০ থেকে ২০০১ র মধ্যে। মোনোহর জোশী ছিলেন প্রেসিডেন্ট সুতরাং ওয়েদেকার ই বেশিরভাগ সময় ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব সামলাতেন। তিনি যখন ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক র দায়িত্ব সামলেছেন তখন তিনি সন্দিপ পাতিল র হাতে একটা স্কিম ছাড়ার ভার দিয়েছিলেন। তারপর তিনি ঘোষণা করেন যিনি ফিক্সড ডিপোজিট খুলবেন তাঁকে সন্দিপ পাতিল সই করবেন।
আজকের দিনে ওয়াদেকর খুবই প্রাসঙ্গিক কারন আজকে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা কম মানুষের আছে। আগের দিনে ক্রিকেট নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আবেগ-উন্মাদনা কাজ করত এখন সেই রকমটা আর নেই। টেস্ট ক্রিকেট তো অনেক মানুষের মধ্যে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। যারা এখন ক্রিকেট খেলে বা বোঝে তাদের অনেকে এখন বলে টেস্ট ক্রিকেট হলে মাঝে মাঝে একবার স্কোর দেখে পুরো খেলা দেখা তো অনেক দূরের ব্যাপার। এখানেই ওয়াদেকারের প্রাসঙ্গিকতা। তাঁর মত নম্র-ভদ্র-ঠাণ্ডা স্বভাবের মানুষ এখন খুব কম পাওয়া যায়। তিনি এখন আমাদের মধ্যে না থাকলেও, প্রত্যেক ক্রিকেট প্রেমীদের মনে তিনি আজীবন থেকে যাবেন।
২৪ এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে সিএএ। বিজেপির পক্ষ থেকে এই নিয়ে…
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে এবার নয়া মোড়। সন্দেশখালি আন্দোলন থেকে শুরু করে যা যা ঘটেছে সম্পূর্ণটাই…
বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দলবিরোধী কথা বলছিলেন। বিশেষ করে…
বিজেপির বিজ্ঞাপনে 'ধর্ম' হাতিয়ার, নির্বাচন কমিশনের নজরে আনল তৃণমূল কংগ্রেস। যেখানে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকায় স্পষ্ট…
বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি হয়েছে বলে মিথ্যে রটনা শুরু হয়েছে। বিগত বছরে এমন কোন মাশুল বৃদ্ধি…
হেলিকপ্টারে হঠাৎ আগুন। বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান অভিনেতা তথা তৃণমূল প্রার্থী দেব। তবে…