পশ্চিম মেদিনীপুর: সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির সভামঞ্চ থেকে বিজেপিকে কড়া হুসিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সদ্য হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি, এর পিছনে অবশ্য তৃনমূল নেত্রী দায়ী করেছেন নিজের দলের নেতাকর্মীদেরই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ ভুল করেছিল, তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সভামঞ্চ থেকেই তৃনমূলকে ভুল বুঝে সরে না যাওয়ার আবেদন করেন তৃনমূল নেত্রী। পাশাপাশি এদিনের মঞ্চ থেকেই পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর হাতে কেশিয়াড়ির দায়িত্বে তুলে দেন নেত্রী। পাশাপাশি বিজেপিকেও একহাত নিয়ে মমতা ব্যানার্জী বলেন, ভুল করে যে বিজেপিকে আপনারা ভোট দিয়েছেন তাদের আপনারা জানেন না তারা কত ভয়ংকর। আপনাদের ভিটেমাটি বিক্রি করে দেবে বিজেপি। ঝাড়খণ্ডের মত আদিবাসীদের জমি তারা অন্যের হাতে তুলে দেবে।
দুদিনের জেলা সফরে পশ্চিম মেদিনীপুরে এসে সোমবার কেশিয়াড়ি কলেজ মাঠে প্রশাসনিক সভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনসভা থেকে তিনি ১৩৪ কোটি টাকার ৪৮ টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪৫৬ কোটি টাকার ৫০ টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। সেই সঙ্গে তিনি ১০০০০ উপভোক্তার হাতে এদিন সরকারি পরিষেবা তুলে দেন। মুখ্যমন্ত্রীর সভাকে ঘিরে এদিন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ১২ জন আইপিএস ১৬ জন ডিএসপি এবং ২৫ জন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাকে এদিনের জনসভা থেকে নির্মল জেলা ঘোষণা করার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন এই জেলাকে উন্নয়নে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কুড়ি টি কর্মতীর্থ , নটি কলেজ , কিষাণ মান্ডি ও হাসপাতাল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। হয়েছে পলিটেকনিক, ব্রিজ এবং রাস্তাঘাট। মুখ্যমন্ত্রী বলেন জঙ্গলমহলে যারা কেন্দু পাতা সংগ্রহ করেন তারা ৩৭ টাকা করে এতদিন পেতেন। এখন এই সরকার কেন্দু পাতার দাম দ্বিগুণ করে দিয়েছে । এমনকি তারা ৬০ বছর বয়সের পর দু লক্ষ টাকা করে পেনশন পাবেন। এই প্রকল্পে ৩২ হাজার জন তালিকাভুক্ত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন এ রাজ্যে কন্যা জন্মালে একটি করে গাছ দেওয়া হয়। সেই গাছ মেয়ের বিয়ের সময় লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করে কাজে লাগানো হয়। এছাড়াও কন্যাশ্রী প্রকল্পে ২৫ হাজার এবং মেয়ের বিয়ের জন্য রুপশ্রী প্রকল্পে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন রাজ্যের উন্নয়নের জন্য এই সরকার দিনরাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাস্তা ঘাট, শ্মশান ঘাট সব তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে । আদিবাসীদের ৩০০ জোহার স্থান তৈরি করা হয়েছে। হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে । কেশিয়াড়ি ও নয়াগ্রামের মাঝখানে ভসরাঘাটে জঙ্গলকন্যা সেতু করে দেওয়া হয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি সরকারকে এক হাত নিয়ে বলেন বিজেপি সব জায়গাতে ভেদাভেদের রাজনীতি করে বেড়াচ্ছে। এ রাজ্যের জ্বলন্ত সমস্যা ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কোনো পদক্ষেপ করছে না। অথচ এরাজ্য বন্যা রুখতে ৬০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী জনসভা থেকে কেশিয়াড়ি এলাকার বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা বিজেপিকে সমর্থন করেছেন। আপনাদের মতামত কে আমি সম্মান করি।
এখানে আমাদের লোকেরা নিশ্চয়ই কিছু খারাপ কাজ করেছে । কিন্তু আপনারা যাদের এনেছেন তারা খুব ভয়ংকর এদের প্রশ্রয় দেবেন না। বিজেপির বন্ধের দিনে আমাদের এক কর্মী কেশিয়াড়িতে দোকান খুলেছিল। বিজেপির লোকজন তাকে খুন করেছে। সিপিএমের অত্যাচারী লোকেরা বিজেপি তে গিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে । চক্রান্ত শুরু করেছে তারা । কেশিয়াড়ির মানুষকে মিথ্যা বলে তৃণমূলকে হারিয়েছে। এবার তাদের হারাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন বিজেপি হনুমানকে দলিত বলে অসম্মান করছে। তারা আবার রথ যাত্রার নামে রাবণ যাত্রা করছে। কিন্তু মনে রাখবেন দুর্গা রাবণকে বধ করেছিল।
এবার রাজনীতি দিয়েই ওইসব রাবণদের বধ করা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন বিজেপি সরকার ঐতিহাসিক জায়গাগুলির নাম বদলে দিচ্ছে। মানুষকে অসম্মান করছে। দিল্লির ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস সিপিএমকে রাজ্য ছাড়া করেছে । বিজেপিকেও ভারত ছাড়া করবে। বিজেপি শূন্য হয়ে যাবে । সাহস থাকা ভালো কিন্তু দুঃসাহস ভালো নয় । মুখ্যমন্ত্রী বলেন আমাদের রাজ্যে কোনো ভেদাভেদের রাজনীতি ছিল না। বিজেপির লোকজন সুড়সুড়ি দিয়ে ভেদাভেদের রাজনীতি করার চেষ্টা করছে । কিন্তু আমরা তা হতে দেবো না। হিন্দু মুসলিম খৃষ্টান বৌদ্ধ সকলকে নিয়েই আমরা চলব।
মানুষকে বাদ দিয়ে এই সরকার নয়, তৃণমূল ও নয়। আমাদের সরকার সকলের জন্যই কাজ করে। সবাই যাতে পরিষেবা পায় সে জন্য সমস্ত জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ রাজ্যে যে শান্তি রয়েছে তা বিঘ্নিত করার জন্য ঝাড়খন্ড থেকে লোক নিয়ে এসে বিজেপি গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আপনারা তাদের প্রশ্রয় দেবেন না। মুখ্যমন্ত্রী আবেদন জানান তৃণমূলের যে সমস্ত নেতা ভুল কাজ করেছে তার জন্য দল দায়ী নয়। এজন্য দলকে ভুল বুঝবেন না। এই দলে কেউ অন্যায় করলে সে শাস্তি পায় । তবে কোনো সরকার সকলের জন্য সবকিছু করে দিতে পারে না। নানা অসুবিধা সত্ত্বেও মা মাটি মানুষের সরকার রাজ্যের ৯০ ভাগ মানুষকে পরিসেবা দিতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।
২৪ এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে সিএএ। বিজেপির পক্ষ থেকে এই নিয়ে…
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে এবার নয়া মোড়। সন্দেশখালি আন্দোলন থেকে শুরু করে যা যা ঘটেছে সম্পূর্ণটাই…
বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দলবিরোধী কথা বলছিলেন। বিশেষ করে…
বিজেপির বিজ্ঞাপনে 'ধর্ম' হাতিয়ার, নির্বাচন কমিশনের নজরে আনল তৃণমূল কংগ্রেস। যেখানে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকায় স্পষ্ট…
বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি হয়েছে বলে মিথ্যে রটনা শুরু হয়েছে। বিগত বছরে এমন কোন মাশুল বৃদ্ধি…
হেলিকপ্টারে হঠাৎ আগুন। বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান অভিনেতা তথা তৃণমূল প্রার্থী দেব। তবে…