উত্তর দিনাজপুর জেলার একটি গ্রামের করুণ কাহিনী


শনিবার,২৯/১২/২০১৮
587

পিয়া গুপ্তা---

এ যেন এক আজব দেশের এক প্রেম কাহিনীর গল্প কথার মতো একটি গল্প সকলের সামনে তুলে ধরছি। প্রথমে সবাই হয়ত অবাক হবেন এই প্রেম কাহিনী আবার কেমন? কিন্তু না এখনো এই দেশের অনেক গ্রামের ই প্রেম কাহিনী আছে , যার শুরুতে প্রেমটা হয় সুন্দরভাবে কিন্তু শেষটা হয় ব্রেকআপে। হ্যা প্রত্যেকবার পাঁচ বছর অন্তর ভোট আসে লোক সভার। এবারো তা আসছে দোরগোড়ায়। কিন্তু গ্রামের অবস্থা যেইকার সেই। অর্থাৎ বর্তমানে ব্রেকআপ অবস্থায় গ্রামবাসীরা আছে। আর কিছুদিনের মধ্যে সেই সব গ্রামবাসীদের কাছে বিভিন্ন রাজনৌতিক দল গুলি আবাও আসবে প্রেম নিবেদন করে সেই ব্রেকআপ গুলি ঠিক থাক করতে।যে মনে হবে একেকটা রাজনৌতিক দলগুলির নেতাদের যে এই গ্রামের মানুষেরা তাদের পরিবারের ই একজন।

সকাল সন্ধ্যা নেতাদের আস্থানা বলতে এই গ্রাম। আর তখন গ্রামের সরল মানুষরা নেতাদের প্রেমে যায়। তখন গ্রামের শত সমস্যার সমাধান যেন তাদের হাতের জাদুতে। শুধু তাদের একটাই শর্ত গ্রামের প্রতিটা নাগরিক যেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। গ্রামবাসীরা তখন একত্রিত হয়ে নেতাদের প্রেমে পড়ে তাদের শর্তে রাজিও হয়ে যান। এর পর ভোট চলে গেল। ব্যাস আবার ব্রেকআপ। অর্থাৎ তোমার দেখা নেই রে তোমার দেখা নেই। গ্রামের সমস্যা চুলায় যাক। ভোটের তো বৈতরণী পার হয়ে গেল।এবার আর গ্রামে না গেলেও হবে।

নিজেদের স্বার্থ তো আর নেই। শত সমস্যার পাহাড়ে অবতীর্ন গ্রামের অবস্থা সেই একই রকম। যেন মনে হবে তারা ছিটমহলের বাসিন্দা। এবার তাদের সমস্যার সমাধান করবে কে। হ্যা এমন ই একটি গ্রামের কাহিনী আজ তুলে ধরছি যেটি উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের দাসিয়ার পশ্চিমপাড়া ও বৈশ্য পাড়া। যে গ্রামের প্রতিটি নাগরিক কে দেখলে মনে হবে তারা যেন নেই রাজ্যের বাসিন্দা। সব কিছুই আছে অথচ কিছুই নেই। যে গ্রামের পরিচয় আজ হস্ত শিল্পের গ্রাম হিসাবে। শুধু তাই নয় যে গ্রামে শত শত ডাকিরা আজ বিভিন্ন পূজা পার্বণে অথচ সেই গ্রামের ঢাকি শিল্পীরা আজ পায় না শিল্পী ভাতা। যে গ্রামের মহিলা শিল্পীদের হাতের জাদুতে তৈরি ডালা কুলা যাচ্ছে রাজ্যে ছাড়িয়ে রাজ্যের বাইরে ও ঠিক সেই সময় ও এই গ্রামের হস্ত শিল্পের উন্নয়নে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে কি রাজ্য সরকার কি কেন্দ্র সরকার।

পশ্চিমবঙ্গের মা মাটি মানুষের সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে গ্রাম বাংলার হতদরিদ্র মানুষেরা যখন ভাসছে। তখনই কালিয়াগঞ্জের দাসিযা গ্রামে এই চিত্রটা ঠিক যেন উল্টো। স্বাধীনতার 73 বছর পেরোলেও আজ ও সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই গ্রামের মানুষ। কালিয়াগঞ্জের দাসিযা গ্রামের বৈশ্য পাড়ায় রয়েছে 100 টির ও বেশী পরিবার। যেখানে না আছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর,না আছে বিদ্যুত, আর নাই বা আছে পানীয় জলের ব্যাবস্থা এখনও সকল সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত কালিয়াগঞ্জের বৈশ্য পাড়া। ভোট আসে ভোট যায় তবুও এই গ্রামের অবস্থার কোন উন্নতি হয না। উল্লিখিত উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের বৈশ্য পাড়া।

এই পাড়ার 100 টি র ও বেশী পরিবার। যাদের জীবন আজ ও কালো অন্ধকারে ঢাকা। আজ বহু বছর ধরে এই গ্রামে অবস্থার নেই কোন উন্নতি। বছর বছর ভোটে নেতাদের শুধু প্রতিশ্রুতি আসে। তবে ভোট শেষ হলেই নেতাদের আর দেখা মেলা ভার। শিলা বৈশ্য, শিল্পা বৈশ্য রা জানান আজ বহু বছর ধরে এই গ্রামে থাকেন তারা এখনো পর্যন্ত কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা পান নি । গ্রামে একটি কল আছে তবুও কল থেকে জল বেরোয় না। আজ ও পরিশ্রুত পানীয় জলের অভাব এই গ্রামে। পাকা রাস্তা তো দূর অস্ত ।বিদ্যুতের আলো কি তারা বোঝেন না। পঞ্চায়েত প্রধান কে জানালেও কোন সারা মেলেনি আজও।

গ্রামে এখনো পর্যন্ত কোন সরকারি আবাস মেলেনি। গ্রামের মহিলারা জানান ঘর দেওয়ার নামে গ্রামের তৃণমূলের প্রধান তাদের কে ঠকিযে বহু টাকা আত্মসাত করেছে। তবে মেলেনি আজ ও একটি ঘর। আজ ও মাটির বাড়ির ভাঙা টালি দিয়ে জল পরে বর্ষাতে। তবুও মেলেনি একটা পলেথিন। আজও এই গ্রামে কুপি ও লন্ঠনের আলোয় ভরসা। কারণ বিদ্যুতের কোন ব্যাবস্থা নেই এখানে। এই গ্রামের ঢাকি পরিবার গুলো পূজোর সময় ঢাক নিয়ে দূরদেশে পারি দেয ও পূজো শেষে শীতের সময় বাঁশ কেটে তা দিয়ে ডালি,কূলো, বেঁচেই পুরুষ ও মহিলারা দুটো পয়সা রোজগার করে। এই গ্রামের মানুষেরা জানান আজ ও তারা বয়স্ক ভাতা, শিল্পী ভাতা কোনটাই পাননা।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট