বিগত কয়েক বছর যাবৎ বাংলার সংস্কৃতিতে বারো মাসে তেরো+ বাড়তি গরমের টানা ছুটি= চোদ্দ পার্বন প্রচলন শুরু হয়ে গেছে৷ সরকারী বা সরকার পোষিত বিদ্যালয়গুলিতে মে জুন মাস পড়লেই বাড়তি কিছু ছুটির নেশা এক শ্রেণির তথাকথিত শিক্ষক নেতাকে সদা চঞ্চল করে রাখে৷ খুদে নেতাগুলো তার উপরের রাজ্য নেতৃত্বকে ফোনে পাগল করে তোলে, তারপর একদিন দেখা যায় সেই মাহেন্দ্রক্ষণ৷ আস্ত নারিকেল পাকা মেঝেই দু টুকরো করে সরকারী নির্দেশিকা বাস্তবায়নের জন্য সাড়ে চারটে বাজবার আগেই দীর্ঘ ছুটির আমেজে এক অথবা দুই পিরিয়ড আগেই ছুটির ঘন্টা বাজানোর সেকি আবদার ৷ সর্বপরি পঁচিশ হোক বা তিরিশ যে কয়দিন ছুটি ঘোষণা হোক না কেন বিদ্যালয় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে না একটু নড়ে গেছে কোন খবর তথাকথিত লম্বকন্ঠস্বরবিশিষ্ট নেতার কাছে থাকে না ৷ যাইহোক এটা হল আভ্যন্তরীন চিত্রের খন্ডাংশ৷ যে প্রসঙ্গে এতগুলি কথা বলা আবশ্যক মনে হল তা শুরু করা যাক-
আমার প্রিয় বাংলায় গরম আবহাওয়ার চরম অবনতি খুব একটা দেখা যায় না সাম্প্রতিক অতীত থেকে গরম মাত্রায় অনেকটায় বেড়েছে ৷ সেজন্য মানবিক সরকার প্রথম প্রথম মানবিকতার সৌজন্যে নির্ধারিত গরমের ছুটির আট দশদিন আগেই শিক্ষাদপ্তরের মাধ্যমে ছুটি ঘোষণা করতেন, সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ টানা একমাস স্কুল বন্ধ থাকত৷ অনেকাংশে প্রয়োজনে শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে আসতে হতো৷ যদিও তার সংখ়্যা অতি নগন্য৷ ইতিপূ্বে একবার শ্রেণি পঠনপাঠন বন্ধ রেখে শিক্ষকদের হাজিরা বাধ্যতামুলক করায় স্টাফরুমে শিক্ষামন্ত্রীর দহরমমহরম করে ছেড়েছিল৷ বহু ক্ষেত্রে দেখেছি বাই রোটেশন পদ্ধতিতে মাঝ দুপুর পর্যন্ত স্টাফরুমে বসে অযাচিত জ্ঞানের বিতরন, তারপর সোজা আপন আলয় ৷ যাক সেসব এখন অতীত৷ আর বর্তমান!
দুই হাজার এগারো সাল ৷ চৌত্রিশ বছরের জগদ্দল পাথরকে সরিয়ে বঙ্গবাসীর জন্য যে মুক্তিসূর্য এনেছিল মমতা বন্দোপাধ্যায়, (তেরো কোটি ভোটারের আমিও একজন মতামতটা পরিবর্তনের জন্যই দিয়েছিলাম, যদিও বর্তমানে পোষ্টার বয় ছাড়া কারো কথা বিশ্বাস করেন না৷) বাংলার মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল যে,বামফ্রন্ট সর্বক্ষেত্রে যে অপুরনীয় ক্ষতি করে গেছে মানবিক হৃদয়বান দিদির সরকার সব না হলেও বারো থেকে চোদ্দো আনা পূরণ করবেন৷ কিন্তু দেখা গেল প্রথম পাঁচ বছর গুছিয়ে উঠতে সময় লাগল ফলত দুই হাজার এগারোর মতো ষোলো সালে আবারও জনগন দিদিকে তখতাসীন করে দিল৷ দিদি তাঁর সাধ্যানুযায়ী নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন৷ সমতল থেকে পাহাড় সর্বত্র দিদির ছোঁয়ায় মানুষ উজ্জীবিত৷ বহুক্ষেত্রে মানুষ তাঁর ন্যায্য অধিকার ফিরে পেয়েছে৷ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ দুবেলা দুমুঠো অন্ন মুখে তুলতে পারছে, অসুস্থ হলে ন্যায্যমূল্যে চিকিৎসা পরিসেবা, থাকবার জন্য মাথার উপর একটা ছাঁদের ব্যবস্থা( খুচরো নেতার চাপে পাওনাদার হয়ত অর্ধেক পায়), শিক্ষার জন্য নানারকম বৃত্তি, জামা জুতো আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রকল্প কন্যাশ্রী সবুজসাথী সবই ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে চলেছে৷ কিন্তু প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো শিক্ষার সব আয়োজন বিদেশী রীতি অনুযায়ী হলে কি হবে, খাঁচা খুলে দেখা গেল তোতা পাখিটি নিথর নিরব নিস্পন্দ দেহে পড়ে আছে৷ নড়েও না চড়েও না উড়তেও চায়না ৷ এমনকি ক্ষুধা লাগলেও উচ্চবাচ্যও করে না৷ রাজামশায় অবগত হয়ে জানাল পাখিটির শিক্ষা সমাপ্ত হয়েছে৷ আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা “তোতাকাহিনী” এর মতো বহমান৷ তারই নবতম সংযোজন তিন মে থেকে তিরিশ জুন গরমের ছুটির ঘোষনা৷ আমার সোনার বাংলায় বর্ষা আসতে আসতে জুন মাসের দিন দশেক সময় লাগে, সেক্ষেত্রে দশ জুন পর্যন্ত দিলে বোঝা যেত শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে এমন সিদ্ধান্ত৷ কিন্তু এখন দেখছি সাধারণ খেটে খাওয়া জনগনের সন্তানেরা সরকারী স্কুলে পড়ে, ওদেরকে জামা জুতো দিয়ে ভরিয়ে দাও, মূল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখতে হবে নইলে যুগ যেভাবে পরিবর্তনশীল তাতে মিনিমাম তিরিশ বছর টিকে থাকতে হলে “পাঁচ ক্লাস কম মাধ্যমিক” যুবক তরুন পতাকাবাহী দরকার৷ বামফ্রন্ট যেমন প্রাথমিক থেকে ইংরাজী তুলে দিয়েছিল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এ যেন সেটারই প্রতিধ্বণি ধ্বণিত হচ্ছে গরমের ছুটি দুই মাস দেওয়ার মধ্যদিয়ে৷ যদিও যে কোন দিন পরিবর্তন হতে পারে সিদ্ধান্ত, ছুটির অর্ডার দুতিন বার দেওয়ার পর তাই স্কুল কতৃপক্ষ বুঝতে পারল স্কুল পুরোই ছুটি৷ তার আগেই ফেসবুক গরম হয়ে গেল শিক্ষাদপ্তরের অধীন দুটি বোর্ডের দু রকম নোটিশে৷ মাধ্যমিক বোর্ড তিন থেকে তিরিশ শ্রেণি পঠনপাঠন বন্ধ বিদ্যালয় খোলা, শিক্ষক আসবে না থাকবে সিদ্ধান্তহীনতা ও শিক্ষামন্ত্রীর সাংবাদিক বাইট কিছু শিক্ষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছিল৷ অন্যদিকে মাদ্রাসা বোর্ড মাইনরিটি দপ্তরের সাথে মিটিং করে জানিয়ে দিল তিন আর চার মে ” ফনী বা ফেনী” এর জন্য ছুটি থাকবে, গরমের ছুটি নির্দিষ্ট সময়ে হবে৷ রেরে করে বিভিন্ন শিক্ষক নেতা, শিক্ষাদপ্তরের নোটিশ মান্য করা হয়নি বলে গাল পাড়তে লাগল, অদষ্টের পরিহাস পরদিন আবার তিন থেকে তিরিশ গরমের ছুটির নোটিশ জারি হল৷
সর্বপরি সরকারী বা সরকার পোষিত, অনুমোদিত মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠানগুলি এবং কচিমেধাগুলি আজ মাঝপথে বসে মার খাচ্ছে৷ কিছুদিন যাওয়ার পর এই সম্ভাবনা গুলিই পাঁচ ক্লাস কম মাধ্যমিক হয়ে শাসক দলের ঝান্ডা কাঁধে তুলে নিয়ে একনিষ্ঠ নিরব কর্মীর পরিচয় দিয়ে দলের কাছে ” “পোষ্টার বয়”এর উপাধী নিয়ে স্ব স্ব এলাকার ‘ দাদা’ তোলাবাজ, ভোটের সময় ভোট লুটেরা ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিত হবে৷ সাখে সাথেই স্কুল বা মাদ্রাসার ম্যানেজিং বা পরিচালন সমিতির মাননীয় সদস্য, সম্পাদক, সভাপতির ডিগ্রি অর্জন করে, মিনিমাম দশ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এম এ, বি এড প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে সন্মানীয় আধিকারীকের তকমা নিয়ে এলাকার সমাজসেবী রূপে আত্মপ্রকাশ করবেন৷ কি বিচিত্র সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থা৷
অন্যদিকে বেসরকারী ইংরাজী মাধ্যম বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়, যেখানে সমস্ত বড় নেতা মন্ত্রীর সন্তানদের পীঠস্থান তাদের জন্য কেবল ছুটি রাখার আবেদন৷ শিক্ষার্থী দরদী মন্ত্রী আপনি বেসরকারীতেও দুই মাস ছুটি ঘোষনা করতে বাধ্য করান তবেই বোঝা যাবে দরদ৷ করতে পারবেন না কারন ওখানে আপনাদের সন্তানেরা পড়ে, তাদের ভবিষ্যতের অনেক মূল্য৷ তারা পাঁচ ক্লাস কম মাধ্যমিক নেতা হবে না, তারা দলের ঝান্ডা বইবে না, তারা পার্টির কর্মীহবে না, তারা সোজাসুজি আপনাদের বদান্যতায় আপনার কেন্দ্রের প্রার্থী৷ সেজন্য এয়ার কন্ডিশন গাড়ীতে করে এয়ার কন্ডিশন শ্রেণিকক্ষে পঠন পাঠনের ব্যবস্থা আপনি করে দিয়েছন, ভাল কথা আপত্য স্নেহ অটুট থাকুক কামনা করি; কিন্তু আপনি আমাদের ঘরের ভোট নিয়ে ক্ষমতাবান হয়ে জনগনের সেবা ( শিক্ষা মৌলিক অধিকার) না করে কেবল নিজের সেবা করবেন সেটা কেমন দেখায়! সেজন্য আপনার কাছে আবেদন বহু সরকারী স্কুল মাদ্রাসা সৌর বিদ্যুৎ সংযোগ করেছেন এবারে এয়ার কন্ডিশন সংযোগ দেওয়ার আবেদন রইল৷ তাহলে আমরা অন্তত্ব নিরবিচ্ছিন্ন পাঠদানের সুযোগ পাব৷ সেই সাথে গরম এলেই আপনাকেও ভাবতে হবে না, আর আমাদের ও ভাবকে হবে না৷ নইলে এমন পাইয়ে দেওয়া মেধাঘাতক ছুটির তীব্র প্রতিবাদ করছি৷ সেইসাথে সাধারণ জনগনের সন্তানদের জীবন নিয়ে খেলা করা বন্ধ করার আবেদন রইল৷
আবদুর রউফ মোল্লা,সহকারী শিক্ষক
মৌঃ আঃ কাঃ আঃ মেমোরিয়াল হাই মাদ্রাসা৷(উঃ মাঃ)
২৪ এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে সিএএ। বিজেপির পক্ষ থেকে এই নিয়ে…
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে এবার নয়া মোড়। সন্দেশখালি আন্দোলন থেকে শুরু করে যা যা ঘটেছে সম্পূর্ণটাই…
বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দলবিরোধী কথা বলছিলেন। বিশেষ করে…
বিজেপির বিজ্ঞাপনে 'ধর্ম' হাতিয়ার, নির্বাচন কমিশনের নজরে আনল তৃণমূল কংগ্রেস। যেখানে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকায় স্পষ্ট…
বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি হয়েছে বলে মিথ্যে রটনা শুরু হয়েছে। বিগত বছরে এমন কোন মাশুল বৃদ্ধি…
হেলিকপ্টারে হঠাৎ আগুন। বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান অভিনেতা তথা তৃণমূল প্রার্থী দেব। তবে…