ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: চলতি বছরের শুরুতে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। মার্চে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কা এসে পড়লে কাজ হারাতে থাকে অনেক মানুষ। বন্ধ হয়ে যায় আয়–রোজগারের পথ, বাড়তে থাকে দারিদ্র্য। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণা বলছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। বছরের তৃতীয় ও শেষ প্রান্তিকে মানুষের আয় কাঙ্ক্ষিত হারে ফিরে এলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। তার পরও বছর শেষে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ ছাড়াতে পারে। ‘পভার্টি ইন দ্য টাইম অব করোনা: শর্ট টার্ম ইফেকটস অব ইকোনমিক স্লোডাউন অ্যান্ড পলিসি রেসপন্স থ্রু সোস্যাল প্রটেকশন’ শীর্ষক এ গবেষণা পরিচালনা করেছেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন। গতকাল বিআইডিএসের আয়োজনে ‘বিআইডিএস ক্রিটিক্যাল কনভারসেশন–২০২০: ইন দ্য শ্যাডো অব কভিড–কোপিং, অ্যাডজাস্টমেন্টস অ্যান্ড রেসপনসেস’ শীর্ষক ডিজিটাল সেমিনারে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়।
বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। এছাড়া সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের উলস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. এসআর ওসমানী, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মুশতাক হোসেন। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ২০২০ সালের শুরুতে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে শহরে ১৫ দশমিক ৮ ও গ্রামে ২২ শতাংশ। তবে চলতি বছর শেষে গ্রামে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ২৩ এবং শহরে ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ হতে পারে। এক্ষেত্রে গ্রামের চেয়ে শহরে দারিদ্র্যের হার বাড়বে। বছরের শেষে দেশে চরম দারিদ্র্য থাকবে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যা বছরের শুরুতে ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ। দারিদ্র্যের হারের এ পরিবর্তন হিসাব করতে শ্রমিকের আয় কতটুকু আগের অবস্থায় ফিরে আসছে তা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য পরিবর্তিত অবস্থাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যদি শ্রমিকের আয় ৫০ শতাংশ এবং শেষ প্রান্তিকে যদি ৫০ শতাংশ আয় উদ্ধার করা সম্ভব হয় তাহলে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। শ্রমিকের আয় এ হারে উদ্ধার না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। কেননা এরই মধ্যে শহরের শ্রমিকের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ এবং গ্রামীণ শ্রমিকের আয় কমেছে ১০ শতাংশ। ড. বিনায়ক সেন বলেন, কভিড–১৯–এর প্রভাব কাটাতে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি টেকসই নয়। লকডাউনে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি কভিডের আগেই যারা দরিদ্র ছিল তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে এ ক্ষতি পূরণ করা যাবে না। বরাদ্দ বাড়িয়েও লাভ হচ্ছে না। কারণ এই ভাতা ও সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে ভুল মানুষ বাছাই করার প্রবণতা আছে। এ সহায়তা যাদের দরকার, তাদের অনেকেই তালিকায় ঢুকতেই পারে না। সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন ভাতা বিতরণে অদরিদ্র ও সচ্ছল মানুষের সংখ্যা ৩০ শতাংশ, খাদ্যসহায়তার ক্ষেত্রে সেটা ৩২ শতাংশ, মাতৃত্বকালীন ভাতার ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ এবং বৃত্তির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে দারিদ্র্যের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হলে আগামী এক দশক গড়ে ৮ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। যেটি স্বাভাবিক সময়ে হয়তো ৬ বা ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেই অর্জন করা সম্ভব ছিল। কিন্তু কভিড–১৯ পরিস্থিতিতে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন যেমন কঠিন, তেমনি সামনের আরো শক মোকাবেলা করতে হতে পারে। ফলে এসডিজির দারিদ্র্য বিমোচন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হতে পারে। প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে স্থানীয় সরকার সংস্কার ও শক্তিশালী করতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে পুনর্গঠন করতে হবে। অধ্যাপক ড. এসআর ওসমানী বলেন, দারিদ্র্য কতটুকু কমবে বা নিয়ন্ত্রণ হবে সেটি পুরোটাই নির্ভর করছে কত দ্রুত গরিব মানুষের কাছে আয় ট্রান্সফার করতে পারছি তার ওপর। সরকারের ট্রান্সফারটা দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে করতে হবে। তা না হলে দরিদ্র মানুষের অবস্থায় পরিবর্তন আনা দুরূহ হবে। ২৩ জুনের সেমিনারে চারটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এসব গবেষণায় বেশ কয়েকটি বিষয়ে তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে একটি তথ্য হচ্ছে সাধারণ ছুটি বর্ধিত হোক এটা চেয়েছিল ৭৪ শতাংশ মানুষ। গ্রামে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে চাইলেও পারছে না ৩২ শতাংশ মানুষ। দেশে বেকারের হার ছাড়িয়েছে ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে লকডাউনে এমএসএমই খাতে ক্ষতি প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। আর বন্ধের উপক্রম প্রায় ৪৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, চাইলেই বাংলাদেশে দীর্ঘ লকডাউন করা সম্ভব নয়। এজন্য সীমিত পরিসরে অনেক কিছু খুলে দেয়া হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল। কেননা কিছু মৃত্যু অবধারিত। ইউরোপ–আমেরিকার অনেক দেশ করোনায় ব্যাপক মৃত্যু ঠেকাতে পারেনি। কিন্তু আমরা তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো আছি। আশা করছি, দেশে মৃত্যু আরো কমবে। তবে করোনা মোকাবেলায় ভ্যাকসিন হোক বা যা কিছু আবিষ্কার হবে, সেখানে সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি। করোনা মোকাবেলায় প্রথম দিকে কিছুটা প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলেও এখন সেটি আর নেই। সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। দারিদ্র্য নিরসনে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর সুফল মিলবে আশা করা যায়। যেসব কথা হয়েছে সেগুলোতে আমি যখন ঘোড়ার পিঠে আছি, তখন ঝাঁকুনি তো একটু লাগবেই। ভবিষ্যতে আরো বিস্তারিত গবেষণা হলে সরকার সহায়তা দেবে। বাড়ছে বেকার : ‘কোপিং উইথ কভিড–১৯ অ্যান্ড ইনডিভিজুয়াল রেসপন্স: ফাইন্ডিংস ফ্রম এ লার্জ অনলাইন সার্ভে’ শীর্ষক গবেষণাটি পরিচালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ। এছাড়া গবেষক হিসেবে ছিলেন তানভীর মাহমুদ, নাহিয়ান আজাদ শশী, আব্দুর রাজ্জাক সরকার। করোনার আগে মোট বেকার ছিল ১৭ শতাংশ। করোনার কারণে নতুন করে ১৩ শতাংশ মানুষ বেকার হয়েছে। ফলে বেকার মানুষের সংখ্যা এখন ৩০ শতাংশ। সেসব পরিবারের সদস্যদের চাকরি আছে এবং একজন সদস্যের মাসিক আয় ৫ হাজার টাকার নিচে সেই পরিবারের আয় কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ।
অন্যদিকে একজন সদস্যের আয় ১৫ হাজার টাকার নিচে এমন পরিবারের আয় কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এছাড়া একজন সদস্যের আয় ৩০ হাজার টাকার নিচে এমন পরিবারের আয় কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। গবেষণায় কভিড পরিস্থিতিতে মাস্ক পরা, হাত ধোয়াসহ সামাজিক নিয়মকানুন পরিপালনের বিষয়ে তথ্য উঠে এসেছে। কোনো কোনো শ্রেণীর আয়কারী মানুষ বাইরে বের হলেও সামাজিক দূরত্ব পালনে বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। গ্রামে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে চাইলেও ৩২ শতাংশ মানুষ তা পারছে না। এ হার উপজেলায় ৩০, বিভাগীয় শহরে ২৯ ও মেট্রোপলিটন শহরে ২৮ শতাংশ। আর সদস্যরা ঘরে থাকার কারণে অশান্তি বেড়েছে ২৫ শতাংশ পরিবারে। এর মধ্যে ৫–৬ শতাংশ শারীরিক সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। গবেষণায় আরো উঠে এসেছে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনা উপসর্গ নিয়ে বসবাস করছে । চট্টগ্রামে প্রায় ২০ শতাংশ, ঢাকায় ১৩ ও খুলনায় ৮ শতাংশ মানুষের করোনা উপসর্গ রয়েছে। করোনার কারণে ১০ শতাংশ খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আর আয় উপার্জনকারী সব ধরনের পরিবারে খাদ্য ব্যয় বেড়েছে। তবে দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ মানুষ চেয়েছিল সাধারণ ছুটি আরো চলমান থাকুক।
এমএসএমই শিল্পের ক্ষতি ৯২ হাজার কোটি টাকা: সেমিনারে অ্যাড্রেসিং এমএসএমইএস ডিস্ট্রেস ইন কভি–১৯ ক্রাইসিস: স্টিমুলাস প্যাকেজ অ্যান্ড পলিসি রেসপন্স শীর্ষক নিবন্ধটি উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মনজুর হোসেন। গবেষণায় দেখা গেছে, জিডিপিতে এই খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ। এছাড়া শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৬ শতাংশ এবং শিল্প ইউনিটের প্রায় ৯৬ শতাংশই এই খাতের। এ খাত থেকে প্রতি মাসে আয় হয় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। লকডাউনের কারণে দুই মাসে এই খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। খাতটির জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার স্টিমুলাস প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। স্বল্প সুদে এই খাতের উদ্যোক্তারা এই ঋণ নিতে পারবেন। যদিও এই সুবিধা সবাই নিতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। কেননা ৩৮ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকঋণের প্রবেশগম্যতা আছে। এছাড়া ৪৯ শতাংশের ঋণ ও অর্থায়ন হয় বেসরকারি এনজিও কিংবা এমএফআইর মাধ্যমে। ফলে সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ১০ ধরনের সংস্থার সুপারিশ করেছেন তিনি।
বন্ধের উপক্রম ৪১ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান: সেমিনারে ‘কভিড–১৯ অ্যান্ড এসএমইএস: আন্ডারস্ট্যান্ডিং দি ইমিডিয়েন ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড কোপিং স্ট্র্যাটেজিস’ শীর্ষক আরেকটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। গবেষণাটি করেছেন বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. কাজী ইকবাল, নাহিদ ফেরদৌস পবন ও তানভীর মাহমুদ। এতে বলা হয়েছে, লকডাউনে সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়া, অবিক্রীত পণ্যের স্তূপ ও উৎপাদিত পণ্যের দাম আটকে থাকায় ৪১ শতাংশের বেশি এসএমই প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বিপুল ক্ষতির শিকার হলেও কোনো রকমে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন এ খাতের ৪৮ শতাংশ উদ্যোক্তা। গবেষণায় আরো দেখানো হয়, চলতি বছরে এসএমই খাতে ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত আয় কমতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকবে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাত। তাদের ব্যবসা কমবে মাত্র ৩৮ শতাংশ। সব প্রতিষ্ঠানে গত বছর শেষে অবিক্রীত পণ্য ছিল ৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, যা চলতি বছরে ১৯ লাখ ২০ হাজারে উন্নীত হতে পারে। প্রতি প্রতিষ্ঠানের বেতন বকেয়া রয়েছে প্রায় ৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা। করোনার কারণে ৮০ শতাংশ বেতন দিতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন মালিকরা, যদিও শ্রমিকরা বলছে ৫৫ শতাংশ বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে আগামীতে বেতন পরিশোধ হবে না এমন ধারণা করছে ৬৩ শতাংশ মানুষ। সরকারের প্রণোদনা পাবে, এমন আশা করছে ৭৪ শতাংশ মানুষ। তবে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, ব্যাংকে হিসাব না থাকা কিংবা অন্যান্য যোগাযোগ না থাকার কারণে অনেকেই হয়তোবা এ প্রণোদনা পাবে না।
Best Deals starting from 149
Best Deals on BISS products
Best Deals starting from 129
Cases and Cover starting from 119
Offers on Pet Food
Backpacks and Travel Accessories from Fur Jaden starting Rs. 299
High On Features Low on Price: Smart Watches from Gionee & More