লকডাউন পরবর্তী যাত্রা: কালিম্পং
প্রথম পর্ব – কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি বাস যাত্রা
অভিজয় চক্রবর্তী : করোনা জনিত কারণে দীর্ঘ ৬ মাস ঘরে বসে থাকার পর যখন বুঝলাম আর থাকা একদমই সম্ভব হচ্ছে না তখন আমরা ৪ জন আমি, শুভ, বাবানদা আর সৌমিত
ঠিক করলাম কালিম্পং যাবো ২ দিনের জন্য আর ঠিক ৩ দিন পর অর্থাৎ ৯ তারিখ। ট্রেন যেহেতু চলছে না আর যে একটাই ট্রেন চলছে ওতে টিকিট না থাকায় ভলভো স্লিপার বাসে বুকিং করলাম আর সাথে হোটেল টাও বুকিং করে নিলাম। ব্যাগ পত্র গুছিয়ে এবার নির্ধারিত দিনে অর্থাৎ ৯ তারিখ সন্ধেবেলা সবাই এসে পড়লাম ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ডে আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িও স্ট্যান্ডে ঢুকিয়ে দিলো। আমরাও দেরি না করে এই শ্যামলী পরিবহনের সম্পূর্ণ স্লিপার ভলভো বাসে চেপে বসলাম। বাসটি যথেষ্ট বিশালবহুল এবং ট্রেনের এসি ২ টিয়ারের মতই আরামদায়ক। যাত্রীদের কম্বল ও দেওয়া হতো যেটা করোনার জন্য এখন দিচ্ছে না তবে বালিশ দেওয়া হচ্ছে। বাসে চার্জিং পয়েন্ট, মোবাইল হোল্ডার, হেড রেস্ট ইত্যাদি ও রয়েছে। যাইহোক নির্ধারিত সময় ১৮:৩০ এর পরিবর্তে ১৯:০০ টায় ধর্মতলা থেকে বাসটি রওনা দিল এবং এটাও জানতে পারলাম যে বিশাল যানজটের কারণে বাসটি উল্টোডাঙা ভিআইপি রোডের পরিবর্তে দ্বিতীয় হুগলী সেতু সাঁতরাগাছি রাজচন্দ্রপুর বালি ব্রিজ ডানলপ এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর হয়ে বারাসাত যাবে।
প্রথমে মনে হচ্ছিল হয়তো এতে কিছুটা সময় বাঁচবে কিন্তু রাজচন্দ্রপুরে মারাত্মক জ্যামে ফেঁসে যাওয়ার পর টের পেলাম এতে সময় বাঁচলো তো নাই উল্টে আরো বেড়ে গেলো। অবশেষে ঘন্টাখানেক এর জ্যাম কাটিয়ে যখন যশোর রোডে ঢুকলাম তখন প্রায় রাত ১০টা। তারপর আমি আপার বাঙ্কে উঠে ঘুম দেওয়ার চেষ্টা করলাম যদিও ঘুম আসবে না সেটা ভালই জানতাম। বারাসাত ছাড়ার পর অ্যাটেনডেন্ট প্রত্যেক যাত্রী কে ১টা ৫০০ মিলি জলের বোতল দিয়ে গেলো যেটার দাম টিকিটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। বারাসাত থেকে রানাঘাট পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা এতই ভয়ংকর যে ভীষণ প্রয়োজন না পড়লে এই রাস্তা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাও এই ঝাঁকুনির মধ্যেও হালকা ঘুম এসে গেছিলো। ঘুম ভাঙলো কৃষ্ণনগর ঢোকার পর, এখানে হাইরোডের ধারে একটা ধাবায় দাড়ানোর কথা। এরপর ধাবায় ঢুকলো রাত ১টায়, এখানে আমাদের বাসটি ১৫ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে আবার রওনা দেবে। ইতিমধ্যে শুভজিৎ আর বাবানদা রুটি আর চিকেন কষা এবং তরকা অর্ডার দিয়ে দিলো। আমি যদিও এক কাপ চা আর পরে খাওয়ার জন্য চিপস নিলাম। প্রায় ১:৩০ নাগাদ বাসটি কৃষ্ণনগর ছেড়ে আবার গন্ত্যবের উদ্দেশে রওনা দিলো। এবার রাস্তা বেশ ভালো, আপাতত কিছুক্ষণ ঝাঁকুনি থেকে রেহাই পেলাম আর বাসটিও এবার নিজের সর্বোচ্চ গতিবেগ ধরে নিয়েছে। এবার আমি বাবানদা শুভ লোয়ার বার্থে বসে গল্পে মশগুল হয়ে পরলাম এদিকে সৌমিত ততক্ষণে ঘুমিয়ে কাদা! গাড়ি এবার বেলডাঙা পেরিয়ে বহরমপুর ঢুকে পড়লো তবে ওঠা বা নামার কেউ না থাকায় কোথাও আর দাঁড়ায়নি।
গঙ্গা পেরিয়ে গাড়ি আবার গতি তুলে নিয়েছে আর আমিও আবার আপার বার্থে উঠে গা এলিয়ে দিলাম। অবশেষে ভোরের আলো ফুটলো ফারাক্কা ব্যারেজ পেরোনোর সময়ে। বলে রাখি যাত্রাপথে এই নিয়ে ৪ বার গঙ্গা পেরোলাম! আবার রাস্তার সেই একই অবস্থা, পুনরায় ঝাঁকুনি খাওয়া শুরু হলো। মালদা শহর পেরিয়ে আবার গতি নিল গাড়ি, তুলনামূলক ভাবে এবার মোটামুটি ভালো রাস্তা আছে। গাজোল, ইটাহার পেরিয়ে গাড়ি রায়গঞ্জ ঢুকলো, এখানে বেশ কিছু যাত্রী ওঠানামা ও হলো। কিন্তু রায়গঞ্জ ছেড়ে রাস্তার অবস্থা আবার যে কে সেই, ঝাঁকুনির চোটে সৌমিতও ঘুম ভেঙে নিচে চলে এসেছে, সঙ্গে গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে জুটলো ডালখোলা তে আরেক ভয়ংকর জ্যাম! প্রায় ১ ঘণ্টা ফেঁসে থাকার পর গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো। পূর্ণিয়া মোড় থেকে গাড়ি আবার হাইরোড ধরে নিলো তবে সামান্য এগিয়েই একটা ধাবা তে দাঁড়ালো। ধাবা টা অপরিচ্ছন্ন এবং খাবার অত্যন্ত নিম্মমানের আর দাম গলাকাটা। যা বুঝলাম এর চেয়ে বিস্কুট চিপস খেয়ে কাটিয়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ১৫ মিনিট দাড়িয়ে গাড়ি আবার রওনা দিলো গন্তব্যে। পথিমধ্যে একটা টোলপ্লাজা পেরিয়ে গাড়ি ঢুকলো কিষানগঞ্জ। বিহার রাজ্যে অবস্থিত এই একটি শহর, ট্রেন পথে এই অঞ্চলের স্টেশন টা পেরোলেই মনে হতো এই পাহাড় পৌঁছে গেলাম তবে এবার সেই অনুভূতি এলো না, সড়কপথে যাচ্ছি বলে কিনা কে জানে! এরপর রাস্তা মোটামুটি ভালো যদিও কিছু জায়গায় জোড়াতাপ্পি দেওয়ার কাজ চলছে দেখলাম। এরপর ঢুকলো ইসলামপুর, এখানে অনেকই নামলো আবার উঠলো।
আবার গাড়ি ছেড়ে রওনা দিলো আর এবার রাস্তার অবস্থা অনেকটা ভালো। কিছুদূর চলার পর রাস্তার ধারে চা বাগান দেখে মন খুশ হয়ে গেলো, মানে পাহাড় আর বেশি দেরি নেই। গাড়িও এবার সর্বোচ্চ গতি তুলে নিয়েছে তবে হঠাৎ বাগডোগরা ঢোকার আগে গাড়ির কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে তবে টা সামান্যই তাই ৫ মিনিটের মধ্যে ত্রুটি সারিয়ে আবার ছেড়ে চলতে শুরু করে। বাগডোগরা মোড় পেরিয়ে গাড়ি একটা পেট্রোল পাম্পে দাঁড় করায় যেহেতু আজকেই আবার গাড়িটা কলকাতা ফিরবে তাই এখন থেকে তেল ভরে নিচ্ছে। পাম্প থেকে বেরিয়েই আবার জ্যামে পড়তে হলো তাই এখানে আরও কিছুটা সময় নষ্ট হলো। সব জ্যাম পেরিয়ে অবশেষে গাড়ি যখন শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস স্ট্যান্ডে প্রবেশ করলো তখন ঘড়িতে বাজে ১৪:১০ অর্থাৎ পৌঁছনোর নির্ধারিত সময়ের থেকে ৭ ঘণ্টা বিলম্বে! ভাবতেও অবাক লাগছিল যে প্রায় ৬০০ কিমি যাত্রা করতে কিনা ১৯ ঘণ্টা লেগে গেলো.. তাও এই বড় ধকল সইতে পেরেছি এটাই অনেক। যাইহোক এবার গাড়ির নিচের ডিকি থেকে মালপত্র বের করে একটা টোটো ভাড়া করে আমরা চারজন চললাম শেয়ার জীপ স্ট্যান্ডে। ফাইনাল ডেস্টিনশন- কালিম্পং!
– চলবে
দ্বিতীয় পর্ব আসবে খুব শীঘ্রই
++অভিজয় চক্রবর্তী ++
Best Deals starting from 149
Best Deals on BISS products
Best Deals starting from 129
Cases and Cover starting from 119
Offers on Pet Food
Backpacks and Travel Accessories from Fur Jaden starting Rs. 299
High On Features Low on Price: Smart Watches from Gionee & More