Categories: ভ্রমণ

সিকিম প্রথম দিন (শিয়ালদা থেকে রিনচেনপং)

সংযুক্তা ভট্টাচার্য্য : শিয়ালদা থেকে ট্রেন রওনা দিয়েছিল ঠিক রাত দশটা পাঁচ। সারারাত পর্দাহীন কাঁচের জানলা দিয়ে চাঁদ লুকোচুরি খেললো। অবশেষে কুয়াশার চাদর সামলে ট্রেন যখন নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছলো তখন হিসেব মতো তিনি আধঘণ্টার বেশি লেট।গাড়ি আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিল স্টেশনে। পথে সামান্য জলখাবার খেয়েই আবার পথ ধরলাম। সেবক রোড ধরে একটু এগিয়ে ই দেখা পেলাম তার,যার জন্য হাপিত্যেস করে বসে থেকেছি গোটা একটা বছরেরও বেশি সময়। পাহাড়ি পথের বাঁক প্রথম প্রেমিকের মতো কাছে টেনে নেয় দুর্দান্ত আবেশে। চোখ ভরে পাহাড় দেখতে দেখতে উঠছি হটাৎ দেখা তিস্তার সাথে। উফ্ ! পান্না সবুজ জলে উন্মাদ তিস্তা।পথে পড়লো তিস্তা ব্রিজ। রাস্তার কাজ চলছে জোর কদমে।চোখ জুড়ানো সবুজ জল আর তার উপর দিয়ে উঠে গেছে পাহাড়ের পর পাহাড়।ওপর থেকে দেখা গেল তিস্তা রঙ্গিতের মিলন, বালির চরে তাঁবু পড়েছে ।আরো বেশ খানিকটা পথ পেরোলে এলো মল্লি চেক পয়েন্ট। বাংলার সীমা ছেড়ে সিকিমে প্রবেশ। মেঘলা আকাশ দূরের পাহাড়ের গায়ে ধূসর রঙের পর্দা টেনে দিয়েছে। পাহাড়ের গায়ে গুচ্ছ গুচ্ছ জঙ্গলে সবুজ আরো গভীর সবুজ রঙদিয়েছে। জোরথাং হয়ে গাড়ি ঢুকবে।আজ যাবো আমরা রিনচেনপং।জুম, সোরেং, কালুক পেরিয়ে চললাম।গাড়ি বেশ কঠিন বাঁক নিয়ে ক্রমাগত খাড়া পাহাড়ের ওপর উঠছে।জোরথাং এর পর থেকেই শুরু ক্রমাগত চড়াই।

Booking.com

পাহাড় বেয়ে উঠতে উঠতে চোখ জুড়িয়ে যাবে চারপাশের নিস্তব্ধ পাহাড়ি গ্রামের রূপ দেখতে দেখত। চাকুম এর ঘন পাইনের জঙ্গল অজানা রহস্যে ঘিরে রাখবে। বিকেল চারটে নাগাদ পৌঁছালাম রিনচেনপং। দূরের দিগন্তে এক ঝলক উঁকি দিয়েই মুখ ঢাকলো তুষার শৃঙ্গ। বুঝলাম এ যাত্রায় মেঘ সঙ্গ নিয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘার সূর্যোদয়ের পূর্ণ রূপ হয়তো অধরাই থাকবে। সন্ধ্যা বেলা আকাশ জুড়ে জোছনা ছড়িয়ে চাঁদ উঠলো। অপূর্ব সুন্দর শান্ত জায়গা এই রিনচেনপং কোলাহল থেকে মুক্ত করে সে যেন নিজেকে অরণ্যে পর্বতের আড়ালে ঢেকে রেখেছে। সন্ধ্যায় পাহাড়ি নির্জন পথ ধরে একা হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম স্হানীয় মনেষ্ট্রিতে। শান্ত, সমাহিত বৌদ্ধ মঠের পাশে অপূর্ব চাঁদ। মনেষ্ট্রি এখন বন্ধ তবে শুনলাম কাল সকালে পূর্ণিমার জন্য বিশেষ পুজো পাঠ হবে। পায়ে পায়ে ফিরে এলাম পাহাড়ের পথ ধরে। চারপাশে ঘন অন্ধকার, দূরে পাহাড়ের গায়ে জোনাকির মতো আলো জ্বলছে। বহু বহু দূরে দেখা যাচ্ছে পেলিং এর স্কাই ওয়াকের চেনরিজ এর মূর্তি ।
(চলবে)

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে রিনচেনপং এর দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগবে পাঁচ থেকে ছ ঘন্টা।

হোটেল- আমরা ছিলাম হোটেল মাউন্ট ভিউ।রুম ভাড়া( ১০০০- ১২০০)। খাওয়া দাওয়া যথেষ্ট ভালো। আকাশ পরিস্কার থাকলে রুম থেকে ই অনবদ্য দেখা যায় পর্বত শিখর।

admin

Share
Published by
admin
  • https://www.banglaexpress.in/ Ocean code:

Recent Posts

রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ: মন্তব্য করলেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য

রাজভবনের এক কর্মীর অভিযোগ হেয়ার স্ট্রিট থানায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ। রাজভবনে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে…

7 hours ago

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে নিজে রক্তদান করলেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব

সামাজিক বার্তা, পরিবেশ বার্তা। নিজের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে নিজে রক্তদান করলেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী…

7 hours ago

কুণাল ঘোষকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দিল রাজনীতির অবসান বা শুরু?

রাজনীতির সময়ে অনেক সময় আসে যখন সাধারণভাবে একজন রাজনৈতিক কর্মীর কাছে এক পদ দিয়ে দেওয়া…

2 days ago

রজনীকান্ত এবার সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে সব রেকর্ড ভেঙে দিলেন

তিনি ভারতীয় তামিল চলচ্চিত্রের মহাতারকা রজনীকান্ত। শুধু তামিল ভাষাতেই হিন্দি, তেলেগু, কন্নড় ও ইংরেজি ভাষার…

2 days ago

নির্মাতা অনিরুদ্ধ’র আরেকটি ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন জয়া

কলকাতার নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘কড়ক সিং’ নামের হিন্দি ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশী…

2 days ago

বলিউড ডিভা শিল্পা শেঠির সম্পত্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্তি: সন্তানসহ মুম্বাই ছেড়ে প্রত্যাবর্তন

বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রা তার আর্থিক মুদ্রার এক ধারালো নিয়ে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তি…

2 days ago
https://www.banglaexpress.in/ Ocean code: