টুসুতে মন্দা, সুদিনের আশায় এখনো হাটে হাটে টুসু বেচে চলেছেন শিল্পীরা


মঙ্গলবার,১২/০১/২০২১
1914

পশ্চিম মেদিনীপুর:– হাতে গোনা আর দুটি দিন। তার পরই জঙ্গলমহলের সবচেয়ে বড়ো উৎসব টুসু পরব৷ আর টুসু মানেই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন হাট থেকে টুসু কিনে মাথায় করে বাড়ি ফিরে আসার সেই চিত্র দেখা যায়নি এখনো৷ স্বভাবতই এই টুসুর বাজার না জমায় হতাশ টুসু শিল্পীরা,।আধুনিক সভ্যতার আলো যত এসে আমাদের সমাজ কে আলোকিত করছে ঠিক ততোটাই যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত করছে জঙ্গলমহলের টুসু শিল্পীদের জীবন। কারন বেশ কয়েবছর ধরেই চলছে টুসুর মন্দা বাজার । তবুও রুজির টানে আর সুদিন ফিরে আসার অপেক্ষায় এখনো হাটে হাটে টুসু বিক্রি করে চলেছেন শিল্পীরা৷ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড়ের মাইলিসাই এর বাসিন্দা ষাটোর্ধ অনীল চালক, অলকা চালক, গোকুল চালক, ধরমপুরের উত্তম মাহাতো, শালবনীর দেবগ্রামের প্রসেঞ্জিৎ মন্ডল, প্রতিমা মাহাতোরা। নেশা, পেশা আর দুচোখ ভরা আগামীর স্বপ্নে এখনো কাদামাটি মেখে ছাচে ফেলে তৈরি করেন মাটির পুতুল। তার উপর রংবেরঙের কাগজ আর নিপুন হাতে রঙ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেন টুসু প্রতিমা।

Affiliate Link কলকাতার খবর | Kolkata News

পৌষ সংক্রান্তীতে জঙ্গলমহলে টুসুর ব্যাপক চাহিদা ছিল। এই মরক সংক্রান্তি কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গ্রামে মেলাও বসে৷ এই মেলার মুল আকর্ষণ মোরগ লড়াই। মোরগ লড়াই এর ধারা অব্যাহত থাকলেও ধীরে ধীরে টুসু যেন বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলছে। অনীল চালক জানান, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে গোয়ালতোড়ের হাটে টুসু বিক্রি করছি। কিন্তু দু তিন বছর ধরে টুসুর চাহিদা যেন কমে যাচ্ছে। গত বছর প্রায় ১০০০ এর মত টুসু করে ছিলাম কিন্তু ২০০ র মতো টুসু রয়ে গিয়েছিল। এবার সেজন্য ছোটো বড়ো মিলিয়ে ৭০০ র মতো টুসু করেছি। অর্ধেক বিক্রি হয়ে আর অর্ধেক এখনো বিক্রি হয়নি। একই বক্তব্য প্রতিমা মাহাতো, প্রসেঞ্জিৎ মন্ডল, গোকুল চালক দের। তদের বক্তব্য বর্তমান বাজার অনুসারে সব জিনিসের দাম বাড়লেও টুসুর দাম সেভাবে বাড়েনি৷ তবুও বিক্রি নেই। শিল্পীরা জানান এই গোয়ালতোড় হাটেই আগে একদিনেই প্রায় ৫০০ – ৬০০ করে টুসু বিক্রি করেছেন প্রত্যেকেই৷ আর এবার এক একজনের ৫০ -৬০ টির বেশী বিক্রি হয়নি। ধরমপুরের উত্তম মাহাতো নিজে টুসু গড়েন না। অন্যজায়গা থেকে টুসু গড়িয়ে এনে বিক্রি করেন। এবারো প্রায় ৫০০ মতো টুসু এনেছেন প্রায় এক সপ্তাহ আগে৷ একশোর মতো বিক্রি হলেও বাকি টুসু রয়ে গিয়েছে। তিনি জানান বাকি টুসু যদি বিক্রি না হলে আমার অনেক ক্ষতি হবে।

কি কারনে টুসুর এমন মন্দা তা তারাও জানেন না। তবে বাজারে অন্যান্য জিনিসের মতো টুসুর দাম কিন্তু সেভাবে বাড়েনি৷ ২০, ৩০, ৫০, ১০০ টাকা মুল্যের টুসুও বিক্রি হচ্ছে না। অনীলের স্ত্রী অলকা জানান, শ্বশুর বাড়িতে আসার পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে টুসু গড়ার কাজ আরম্ভ করেছি। এই টুসু বিক্রি করেই দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। তাই সেই টুসু গড়ার কাজ এখনো বন্ধ করিনি। জানি টুসুতে মন্দা চলছে তবুও রুজীর টানে এই ব্যাবসা করে চলেছি। অথচ এই টুসু পরব কে কেন্দ্র করে আমাদের এই এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হয়৷ সেখান্দ হাজার হাজার টাকার মোরগ লড়াই করে জুয়ার পিছনে উড়িয়ে দিচ্ছে৷ কিন্তু যার জন্য এই আয়োজন সেই টুসুরই বাজার দিন দিন কমে যাচ্ছে৷ তবে শুনেছি প্রশাসনিক ভাবে এখন টুসু নিয়ে নানান কর্মশাল হচ্ছে। টুসু পুজো নিয়ে মানুষ কে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তাই হয়তো বা আবার কোনোদিন টুসুর বাজার ফিরবে সেই সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা,।

Affiliate Link Earn Money from IndiaMART Affiliate

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট