সাইক্লোন “ইয়াশ” এর প্রভাবে কেমন আছে কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া ?

জয়দীপ চক্রবর্তী : ঐতিহ্যশালী কফি হাউসের নীচে ইমনের পাঠ্যপুস্তকের ছোট্ট স্টল। গতবছর উম-পুনে তাঁর দোকানের প্রায় অর্ধেক বই নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। নির্মান ঘোষ কলেজ স্ট্রিট চত্বরের আর এক ব্যবসায়ী। গতবছর ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে জলে ভেসে গিয়েছে তাঁর আনুমানিক ২ লক্ষ টাকার নতুন বই। উম-পুনে বইপাড়া চত্বরে ক্ষয়ক্ষতির এরকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এল পরবর্তী মে মাস। আর‌ও এক বুধবার। শহরের কপালে নাচছে অন্য এক ঘূর্ণিঝড় যশ-এর ভ্রুকুটি। আর তাতেই কার্যত ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছে ‘ঘরপোড়া’ কলেজ স্ট্রিট। মঙ্গলবার সকালে সংশ্লিষ্ট চত্বরে দেখা গিয়েছে, বই বাঁচানোর তাগিদ। যতটা সম্ভব বাঁচানো সম্ভব, প্রাণপণে চলেছে তারই চেষ্টা। লকডাউন পরিস্থিতিতে সব লোকাল ট্রেন বন্ধ। তবু শ্রীরামপুর থেকে কোনওক্রমে কলেজ স্ট্রিটে ছুটে এসেছেন বরেন দাস। ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে। বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন ভোর ৬টায়। কলেজ স্ট্রিট চত্বরে যখন পা রেখেছেন তখন ঘড়িতে প্রায় ১১টা। এলেন কীভাবে?’ বলেন, সাত‍টা ব্রেক জার্নি করে! কিছুটা সাইকেলে। কিছুটা গাড়ি ভাড়া করে। কিছুটা একেবারে হেঁটে। উদ্দেশ্য একটাই, উম-পুনের পর যে দৃশ্য ব্যবসায়ীদের দেখতে হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি যদি কিছুটাও ঠেকানো যায়।

সেসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল কলেজ স্ট্রিট চত্বরের দু’টি ছবি। প্রথমটি, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট জলের তলায়। তার উপর ভাসছে বইয়ের সারি। অপরটি কলেজ স্ট্রিট চত্বর থেকে জল নামার পর রাস্তায় ফেলে বই শুকনোর দৃশ্য। সেই স্মৃতি এখন‌ও টাটকা। তাই ঝড়ের আগের দিন অনেকেই চলে এসেছেন। নীচের দিক থেকে বই যথাসম্ভব সরিয়ে রাখছেন অন্য জায়গায়। কেউ তুলে রাখছেন দোকানের বাঙ্কে, আবার কেউ ব‌ই নিয়ে চলে যান বাড়ি। যাঁরা স্থানীয় বাসিন্দা, কাজটা তাঁদের পক্ষেই একটু সহজ। বিশ্বজিৎ বসু নামে এমন এক ব্যবসায়ী বলেন, কলেজ স্ট্রিট চত্বর অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। উম-পুন আমাদের কোমর ভেঙে দিয়েছে। গত সপ্তাহে ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে প্রায় আড়াই ফুট জল উঠে যায়। চোখের সামনে দেখলাম প্রায় হাজার দশেক টাকার বই জলে ভিজে গেল! যশ-এ কী হবে জানি না। ক্ষয়ক্ষতি কিছু যে হবেই তা নিশ্চিত। তাঁর বক্তব্য, আমরা কাছে থাকি। তাই তাড়াতাড়ি এসে কিছুটা হলেও বই সরাতে পেরেছি।

তবে বইপাড়ার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। এমনই এক বই বিক্রেতা দিব্যেন্দু জানা। তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা। লকডাউনে দোকান বন্ধ করে চলে গিয়েছেন বাড়ি। ফোনে ওই ব্যবসায়ী বলেন, উম-পুনে ক্ষতি হয়েছিল প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার। এবার কত টাকার মাশুল গুনতে হবে তা ভেবেই তাঁর মন খারাপ। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, অনেক ব্যবসায়ীর ছোট স্টল রয়েছে কলেজ স্ট্রিটে। বৃষ্টির জলের হাত থেকে বই বাঁচানোর মতো সুরক্ষিত কোন‌ও জায়গা নেই তাঁদের। তাঁরা যতটা পেরেছেন প্লাস্টিকে মুড়ে রেখেছেন বইপত্র। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের একটাই প্রশ্ন একটাই আতঙ্ক, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে তাঁদের দোকানের, ব্যবসার ক্ষয়ক্ষতি কতটা হবে!

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

সিএএ নিয়ে প্রচারে মনোরঞ্জন, সাবধান করছেন এলাকার

২৪ এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে সিএএ। বিজেপির পক্ষ থেকে এই নিয়ে…

4 days ago

সন্দেশখালির ঘটনা সাজানো, বিজেপির পরিকল্পিত চিত্রনাট্য, ভাইরাল ভিডিয়োই দাবি বিজেপি নেতার

সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে এবার নয়া মোড়। সন্দেশখালি আন্দোলন থেকে শুরু করে যা যা ঘটেছে সম্পূর্ণটাই…

4 days ago

“আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে”- কুনাল ঘোষের গলায় কেন এই গান?

বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দলবিরোধী কথা বলছিলেন। বিশেষ করে…

4 days ago

“সনাতন বিরোধী তৃণমূল”- দৈনিক সংবাদপত্রে বিজেপির বিজ্ঞাপন , প্রচারে ‘ধর্ম’ ব্যবহার করায় কমিশনে তৃণমূল

বিজেপির বিজ্ঞাপনে 'ধর্ম' হাতিয়ার, নির্বাচন কমিশনের নজরে আনল তৃণমূল কংগ্রেস। যেখানে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকায় স্পষ্ট…

4 days ago

বিগত বছরে বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি হয় নি, দাবি WBSEDCL এর

বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি হয়েছে বলে মিথ্যে রটনা শুরু হয়েছে। বিগত বছরে এমন কোন মাশুল বৃদ্ধি…

4 days ago

হেলিকপ্টারে আগুনের ঘটনায় থমকে নেই দেব, শনিবার দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে চুটিয়ে প্রচার

হেলিকপ্টারে হঠাৎ আগুন। বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান অভিনেতা তথা তৃণমূল প্রার্থী দেব। তবে…

4 days ago
https://www.banglaexpress.in/ Ocean code: