মাদুর শিল্পের বেহাল দশা !


বৃহস্পতিবার,২৫/১১/২০২১
2250

হাওড়া, উদয়নারায়ণপুর: গ্রামেগঞ্জে মাটির বাড়ি কিমবা কুঁড়েঘরের সংখ্যা ক্রমশ কমছে।কিন্তু,আজও গ্রাম বাংলার বহু বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম অঙ্গ হিসাবে মাদুর ব্যবহার করা হয়।বাড়ির উঠানে কিমবা দাওয়ায় মাদুর পেতে এখনো গল্প করতে চোখে পড়ে গ্রাম বাংলার মা-বোনেদের।মাদুর বুনেই পেট চলে এরাজ্যের বহু পরিবারের।তাদের মধ্যে গ্রামীণ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ব্লকের কিসমত কানুপাট অন্যতম।এই গ্রামের প্রায় ২০ টি পরিবারের অন্ন সংস্থান নির্ভর করে মাদুর শিল্পের উপর।কিন্তু প্রবল ব্যবসায়িক মন্দার জেরে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোটানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে কবিতা, কালোসোনাদের।পরিবার বাঁচাতে বাধ্য হয়ে পূর্ব পুরুষের পেশা ছেড়ে ওদের কেউ একশো দিনেরl কাজে লেগেছেন কেউবা অন্যের জমিতে কাজ করছেন।

উল্লেখ্য,উদয়নারায়ণপুরের মনশুকা পঞ্চায়েতের কানুপাট গ্রামেই মাদুর কাঠির চাষ হয়।সেখান থেকেই কিসমত কানুপাটের মাদুর শিল্পীরা মাদুরকাঠি কিনে আনেন।পুরুষদের পাশাপাশি সংসারের কাজ সামলে মহিলারাও মাদুর বোনেন।একজন পুরুষ শিল্পী একটি মাদুর বুনতে ৫-৬ ঘন্টা নেন।মহিলা শিল্পীদের যেহেতু সংসারও সামলাতে হয় তাই একটি মাদুর বুনতে তাঁদের দেড় থেকে দু’দিন লেগে যায়।তারপর মাদুরগুলি নিয়ে কানুপাটের সুভাষ হাটে বুধ ও শনিবার রওনা দেন শিল্পীরা।ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই শুরু হয় হাটের বেচাকেনা।হাটে পাইকারী বিক্রেতারা শিল্পীদের থেকে মাদুর কেনেন।কিন্তু,স্বাভাবিক সময়ের এই সচরাচর ছবিটা মন্দার বাজারে এক ধাক্কায় অনেকটাই পাল্টে গেছে।একদিকে যেমন বেড়েছে কাঁচামালের দাম,তেমনই অন্যদিকে মাদুরের চাহিদা একধাক্কায় অনেকটাই কমেছে।আর তার জেরেই চরম বিপাকে পড়েছেন মাদুর শিল্পীরা।কাঠি কিনে এনে শিল্পীরা শ্রম দিয়ে মাদুর বুনে সুভাষ হাটে নিয়ে এলেও হাটে ক্রেতাদের দেখা মিলছে না।তাই বাধ্য হয়ে একরাশ হতাশা আর নিজেদের হাতে বোনা শিল্পকর্মকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে শিল্পীদের।

বছর ৬৫ টির শিল্পী কালোসোনা মাজি দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পের সাথে যুক্ত।তাঁর কথায়,”আমাদের বংশপরম্পরায় এই হস্তশিল্প চলে আসছে।আমি আট বছর বয়স থেকে মাদুর বোনার কাজ করছি।কিন্তু এরকম চরম দুর্দশা কখনো হয়নি।”এই চরম মন্দার জেরে মাদুরশিল্প থেকে মুখ ঘুড়িয়ে নিয়েছেন গ্রামের একাধিক শিল্পী পরিবার।২০ টি পরিবারের মধ্যে ১৮ টি পরিবার আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছে।মাত্র দু’টি পরিবার কোনোরকমে এই কাজ চালাচ্ছে। কালোসোনা মাজি আরও বলেন,এই পেশার উপরই আমার সংসার নির্ভরশীল।কিন্তু,দীর্ঘদিন কোনো কাজ না থাকায় সংসার একেবারে অচল হয়ে পড়েছে কি ভাবে সংসার চালাবো বুঝে উঠতে পারছি না। সর্বগ্রাসী মন্দার বাজারে বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পগুলি এভাবেই যেন ফিকে হতে বসেছে।পেটের টানে হারিয়ে যেতে বসেছে শিল্পীর শিল্পসত্ত্বা।কবে আবার শিল্পে সুদিন আসবে?—এখন এই প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে কিসমত-কানুপাটের মাদুর শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা পরিবারগুলিতে।

Affiliate Link Earn Money from IndiaMART Affiliate

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট