মাদুর শিল্পের বেহাল দশা !

হাওড়া, উদয়নারায়ণপুর: গ্রামেগঞ্জে মাটির বাড়ি কিমবা কুঁড়েঘরের সংখ্যা ক্রমশ কমছে।কিন্তু,আজও গ্রাম বাংলার বহু বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম অঙ্গ হিসাবে মাদুর ব্যবহার করা হয়।বাড়ির উঠানে কিমবা দাওয়ায় মাদুর পেতে এখনো গল্প করতে চোখে পড়ে গ্রাম বাংলার মা-বোনেদের।মাদুর বুনেই পেট চলে এরাজ্যের বহু পরিবারের।তাদের মধ্যে গ্রামীণ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ব্লকের কিসমত কানুপাট অন্যতম।এই গ্রামের প্রায় ২০ টি পরিবারের অন্ন সংস্থান নির্ভর করে মাদুর শিল্পের উপর।কিন্তু প্রবল ব্যবসায়িক মন্দার জেরে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোটানোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে কবিতা, কালোসোনাদের।পরিবার বাঁচাতে বাধ্য হয়ে পূর্ব পুরুষের পেশা ছেড়ে ওদের কেউ একশো দিনেরl কাজে লেগেছেন কেউবা অন্যের জমিতে কাজ করছেন।

উল্লেখ্য,উদয়নারায়ণপুরের মনশুকা পঞ্চায়েতের কানুপাট গ্রামেই মাদুর কাঠির চাষ হয়।সেখান থেকেই কিসমত কানুপাটের মাদুর শিল্পীরা মাদুরকাঠি কিনে আনেন।পুরুষদের পাশাপাশি সংসারের কাজ সামলে মহিলারাও মাদুর বোনেন।একজন পুরুষ শিল্পী একটি মাদুর বুনতে ৫-৬ ঘন্টা নেন।মহিলা শিল্পীদের যেহেতু সংসারও সামলাতে হয় তাই একটি মাদুর বুনতে তাঁদের দেড় থেকে দু’দিন লেগে যায়।তারপর মাদুরগুলি নিয়ে কানুপাটের সুভাষ হাটে বুধ ও শনিবার রওনা দেন শিল্পীরা।ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই শুরু হয় হাটের বেচাকেনা।হাটে পাইকারী বিক্রেতারা শিল্পীদের থেকে মাদুর কেনেন।কিন্তু,স্বাভাবিক সময়ের এই সচরাচর ছবিটা মন্দার বাজারে এক ধাক্কায় অনেকটাই পাল্টে গেছে।একদিকে যেমন বেড়েছে কাঁচামালের দাম,তেমনই অন্যদিকে মাদুরের চাহিদা একধাক্কায় অনেকটাই কমেছে।আর তার জেরেই চরম বিপাকে পড়েছেন মাদুর শিল্পীরা।কাঠি কিনে এনে শিল্পীরা শ্রম দিয়ে মাদুর বুনে সুভাষ হাটে নিয়ে এলেও হাটে ক্রেতাদের দেখা মিলছে না।তাই বাধ্য হয়ে একরাশ হতাশা আর নিজেদের হাতে বোনা শিল্পকর্মকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে শিল্পীদের।

বছর ৬৫ টির শিল্পী কালোসোনা মাজি দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পের সাথে যুক্ত।তাঁর কথায়,”আমাদের বংশপরম্পরায় এই হস্তশিল্প চলে আসছে।আমি আট বছর বয়স থেকে মাদুর বোনার কাজ করছি।কিন্তু এরকম চরম দুর্দশা কখনো হয়নি।”এই চরম মন্দার জেরে মাদুরশিল্প থেকে মুখ ঘুড়িয়ে নিয়েছেন গ্রামের একাধিক শিল্পী পরিবার।২০ টি পরিবারের মধ্যে ১৮ টি পরিবার আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছে।মাত্র দু’টি পরিবার কোনোরকমে এই কাজ চালাচ্ছে। কালোসোনা মাজি আরও বলেন,এই পেশার উপরই আমার সংসার নির্ভরশীল।কিন্তু,দীর্ঘদিন কোনো কাজ না থাকায় সংসার একেবারে অচল হয়ে পড়েছে কি ভাবে সংসার চালাবো বুঝে উঠতে পারছি না। সর্বগ্রাসী মন্দার বাজারে বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পগুলি এভাবেই যেন ফিকে হতে বসেছে।পেটের টানে হারিয়ে যেতে বসেছে শিল্পীর শিল্পসত্ত্বা।কবে আবার শিল্পে সুদিন আসবে?—এখন এই প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে কিসমত-কানুপাটের মাদুর শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা পরিবারগুলিতে।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

কুণাল ঘোষকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দিল রাজনীতির অবসান বা শুরু?

রাজনীতির সময়ে অনেক সময় আসে যখন সাধারণভাবে একজন রাজনৈতিক কর্মীর কাছে এক পদ দিয়ে দেওয়া…

24 hours ago

রজনীকান্ত এবার সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে সব রেকর্ড ভেঙে দিলেন

তিনি ভারতীয় তামিল চলচ্চিত্রের মহাতারকা রজনীকান্ত। শুধু তামিল ভাষাতেই হিন্দি, তেলেগু, কন্নড় ও ইংরেজি ভাষার…

1 day ago

নির্মাতা অনিরুদ্ধ’র আরেকটি ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন জয়া

কলকাতার নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘কড়ক সিং’ নামের হিন্দি ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশী…

1 day ago

বলিউড ডিভা শিল্পা শেঠির সম্পত্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্তি: সন্তানসহ মুম্বাই ছেড়ে প্রত্যাবর্তন

বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রা তার আর্থিক মুদ্রার এক ধারালো নিয়ে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তি…

1 day ago

পাওলি দাম: বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এক নতুন প্রতিভার আবির্ভাব

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শৃঙ্খলা সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে অল্প বা মাঝামাঝি হয়ে যাওয়া একটি বিষয়।…

1 day ago

কুরুচিকর ভাষার প্রতিযোগিতা বন্ধে কমিশনের চিঠি প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলিকে

দেশ জুড়ে নির্বাচনী প্রচারে ঝড় বইছে। সেই সঙ্গে সমানতালে চলছে একে অপরকে আক্রমণের পালা। পক্ষ…

1 day ago
https://www.banglaexpress.in/ Ocean code: