উদ্বাস্তু কৃষকদের জমি রেকর্ডে রাজ্য সরকারের গাফিলতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু; প্রতিকারের জন্য উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের


বুধবার,২২/১২/২০২১
791

কোলকাতা: স্বাধীনতার জন্মলগ্নে দেশ ভাগের রক্তাক্ত দুঃস্বপ্নের সময় ভিটে মাটি ও জীবিকা সহ সর্বস্ব হারিয়ে পূর্ববঙ্গ (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু মানুষ ভারতে আসে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় উদ্বাস্তু কৃষকদের বসতি স্থাপন করা হয়েছিল এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য চাষের জমি দেওয়া হয়েছিল। যদিও কিছু ক্ষেত্রে জমির দলিল দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জমির পরচা (রেকর্ড-অব-রাইট) দেওয়া হয়নি। তাই এই উদ্বাস্তু কৃষকরা কৃষক বন্ধু, বাংলা শস্য বীমা, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি, ভর্তুকিযুক্ত বীজ, সার সহ কৃষকদের জন্য বরাদ্দ কোনো সরকারি সুবিধাই পান না। এই উদ্বাস্তু কৃষকদের জমি নথিভুক্ত করার কাজে রাজ্য সরকারের গাফিলতির বিরুদ্ধে আজ জয় কিষাণ আন্দোলনের নেতৃত্বে আন্দোলন ঘোষিত হল। আন্দোলনের প্রথম কেন্দ্র বাঁকুড়া জেলা; আগামী দিনে এই আন্দোলন সব জেলায় ছড়িয়ে যাবে।এই ধারাবাহিক অবিচারের প্রতিকারের জন্য জয় কিষাণ আন্দোলনের লিগাল টিমের সাহায্যে আজ মহামান্য কোলকাতা উচ্চ আদালতে মামলাও দায়ের করা হল।

জয় কিষাণ আন্দোলনের সর্বভারতীয় সভাপতি অভীক সাহা বলেন: ” উদ্বাস্তু কৃষকরা অদম্য লড়াই করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। সরকার বাধ্য হয়েছে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার মেনে নিতে – জমির অধিকার ও কাজের অধিকার দিয়ে পুনর্বাসন দিতে। কিন্তু লড়াই এখনও শেষ হয়নি। বহু উদ্বাস্তু পরিবার এখনও জমির দলিল পাননি আর যারা জমির দলিল পেয়েছেন তাদের নামপত্তন করে জমির পরচা দিচ্ছে না সরকারী দপ্তর। নানান টাল বাহানায় বছরের পর বছর ধরে সরকারি অফিসারেরা নামপত্তনের আবেদন ফেলে রেখে দিয়েছে। কোনভাবেই আবেদনগুলির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হচ্ছেনা। হাজার অনুরোধ ও আবেদনে কাজ হচ্ছেনা। পাট্টাহীন ও পাট্টাধারী অথচ নিজ নাম পত্তন না হওয়া উদ্বাস্তু পরিবারগুলি কৃষক বন্ধু, বাংলা ফাসল বীমা, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি, ভর্তুকিযুক্ত বীজ, সার, বাংলার বাড়ি, নির্মল বাংলা ইত্যাদি বহু সরকারী যোজনার সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। সবথেকে বড় কথা দেশের সংবিধান সম্পত্তির যে অধিকার দিয়েছে, সেই সাংবিধানিক অধিকার থেকে প্রশাসন ও আধিকারিকরা উদ্বাস্তু কৃষকদের বঞ্চিত করছে। তাই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য ব্যাপী আন্দোলন শুরু করা হল বাঁকুড়া জেলা থেকে। মামলা ও দায়ের করা হয়েছে আদালতে। যতক্ষণ না উদ্বাস্তু কৃষকরা তাদের সমস্ত অধিকার পাচ্ছেন, এই আন্দোলন চলবে।”

জয় কিষাণ আন্দোলনের বাঁকুড়া জেলার নেতা ননী রায় বলেন: ” উদ্বাস্তু কৃষকদের দাবি – দলিল দাও, পরচা দাও, সব অধিকার দাও, সব যোজনার বকেয়া দাও। আমাদের স্লোগান – জোট বাঁধো তৈরী হও – উদ্বাস্তু অধিকার ছিনিয়ে নাও। বাঁকুড়া জেলার একজন উদ্বাস্তু কৃষক রাজ্য সরকারকে পরচা দেওয়ার জন্য বাধ্য করতে আজ কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন। এটা আশ্চর্যজনক যে যেই রাজনৈতিক দলগুলি উদ্বাস্তু কৃষকদের ভোটের জন্য আবেদন করে, তারাই সেই কৃষকদের সবচেয়ে মৌলিক জীবিকার অধিকার এবং প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করার বিষয়ে উদাসীন। লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু কৃষক এই আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতিটি দরজার কড়া নাড়িয়েও কোন সুরাহা হয়নি। সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠন জয় কিষান আন্দোলন রাজ্য সরকারকে সমস্ত উদ্বাস্তু কৃষকদের পরচা দিতে বাধ্য করার জন্য রাজ্যব্যাপী আন্দোলন সংগঠিত করছে এবং সংগঠনের আইনি টিম কলকাতা হাইকোর্টে মামলা লড়ছে। আমাদের দাবি:
১। উদ্বাস্তু-দলিল পাওয়ার অধিকারী সব ব্যক্তিদের অবিলম্বে বাস্তু ও কৃষি জমির দলিল দিতে হবে
২। উদ্বাস্তু-দলিল পাওয়া সব ব্যক্তিদের এক মাসের মধ্যে নাম পত্তন ও পরচা দিতে হবে
৩। সব উদ্বাস্তু ব্যক্তিদের শুরু থেকে আজ অবধি বকেয়া কৃষক বন্ধু ও কিষাণ সম্মান নিধির টাকা দিতে হবে
৪) সব উদ্বাস্তু কৃষকদের বাংলা শস্য বীমার অন্তর্গত করতে হবে
৫) সব উদ্বাস্তু পরিবারদের বাংলার বাড়ি, নির্মল বাংলা ইত্যাদি সরকারী যোজনার সুবিধা দিতে হবে “

কলকাতা হাইকোর্টের মামলার বাদী বর্ষীয়ান কৃষক ধীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন: ” হাজার হাজার উদ্বাস্তু মানুষের সঙ্গে বড়জোড়া ব্লকে আমি আসি। বড়জোড়া ব্লকের উদ্বাস্তুদের সংগ্রাম, চরের জঙ্গল কেটে কৃষিকাজ ও বসতি স্থাপন উদ্বাস্তুদের কঠোর পরিশ্রমের উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। আমার মত কৃষিজীবীদের প্রতি এই ধারাবাহিক অন্যায় ও অবিচারের প্রতিকার চাই। তাই মামলা করেছি। জয় কিষাণ আন্দোলন, বাঁকুড়া জেলা কমিটি এই অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে উদ্বাস্তু মানুষদের দাবি আদায় করে নেওয়ার জন্য তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। উদ্বাস্তু সাথী বন্ধুদের কাছে আমার আহ্বান – উদ্বাস্তুদের ন্যায্য ও বৈধ দাবিগুলি পুরন করতে প্রশাসন ও আধিকারিকদের বাধ্য করার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলুন।”

Loading...
https://www.banglaexpress.in/ Ocean code:

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট