করোনা আবহে এবছর বন্ধ শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা

বীরভূম: করোনার কোপে এবার বন্ধ হয়ে গেল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা। করোনার প্রকোপ কমেনি রাজ্যে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৈঠকে যোগ দেওয়া ৭০ সদস্যের সবাই করোনার এই আবহে পৌষ মেলা না করার পক্ষে মত দেন। অবশেষে এবারের পৌষ মেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে সিদ্ধান্ত হয়, পৌষ মেলা না হলেও স্বল্প পরিসরে করোনা বিধি মেনে অনুষ্ঠিত হবে পৌষ উৎসব। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। যদিও ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য, দুই চিকিৎসকসহ ১১ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

বিজ্ঞাপন

এবারের এই পৌষ মেলা। প্রতিবছর ৭ পৌষ থেকে মেলা শুরু হয়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেছেন, ১৮৪৩ সালের ৭ পৌষ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন। সেই দিনটিকে স্মরণে রেখে ১৮৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর শান্তিনিকেতনে পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই শান্তিনিকেতনেই ১৮৯১ সালে ৭ পৌষ স্থাপিত হয় উপাসনা মন্দির। আর ওই দিন থেকেই দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীক্ষা দিবসকে স্মরণে রেখে শুরু হয় শান্তিনিকেতনে পৌষ মেলা। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ১৮৪৫ সালে ব্রাহ্মসমাজের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য প্রথম কলকাতার গেরিটি বাগানে (পলতার কাছে) আয়োজন করা হয়েছিল একটি মেলার। সেই মেলারই সূত্র ধরে পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে শান্তিনিকেতনে পৌষ মেলা। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৮ সালের ২২ মার্চ শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ডিডে লিখে গিয়েছিলেন, ‘ট্রাস্টিগণ বর্ষে বর্ষে একটি মেলা বসানোর চেষ্টা ও উদ্যোগ গ্রহণ করিবেন।’ সেই ধারাবাহিকতায় আজও প্রতিবছর শান্তিনিকেতনে চলে আসছে পৌষ মেলা।

আর এই পৌষ মেলাকে ঘিরে শান্তিনিকেতন নতুন এক জীবন পায়। নানা অনুষ্ঠানে মুখর হয় শান্তিনিকেতন। মেতে ওঠে আনন্দে। দেশ-বিদেশের দোকানিদের নানা পসরা নিয়ে বসেন শান্তিনিকেতনের মেলায়। গানবাজনা, নাটক আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ডুবে যায় শান্তিনিকেতন। আসেন বাংলাদেশসহ নানা দেশের কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা। আসে নানা পসরাও। এবার করোনা সেই পৌষ মেলার আনন্দে ছেদ ঘটাল। বন্ধ হয়ে গেল শান্তিনিকেতনের ঐতিহাসিক পৌষ মেলা।

বিজ্ঞাপন : এখানে বিজ্ঞাপন দিতে , যোগাযোগ : 9733377444

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় আরও বলেছেন, যদিও ১২৬ বছরের ইতিহাসে দুবার মেলা বন্ধ হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। প্রথমবার ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষ বা মন্বন্তরে আর দ্বিতীয়বার ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে। তবে সে সময় পৌষ উৎসব হয়েছিল। এবার এই মেলা বন্ধ হলে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাবে তৃতীয়বার পৌষ মেলা বন্ধ হওয়ার ইতিহাস।

রাজনৈতিক খবর

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে নিজে রক্তদান করলেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব

সামাজিক বার্তা, পরিবেশ বার্তা। নিজের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে নিজে রক্তদান করলেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী…

4 mins ago

কুণাল ঘোষকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দিল রাজনীতির অবসান বা শুরু?

রাজনীতির সময়ে অনেক সময় আসে যখন সাধারণভাবে একজন রাজনৈতিক কর্মীর কাছে এক পদ দিয়ে দেওয়া…

2 days ago

রজনীকান্ত এবার সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে সব রেকর্ড ভেঙে দিলেন

তিনি ভারতীয় তামিল চলচ্চিত্রের মহাতারকা রজনীকান্ত। শুধু তামিল ভাষাতেই হিন্দি, তেলেগু, কন্নড় ও ইংরেজি ভাষার…

2 days ago

নির্মাতা অনিরুদ্ধ’র আরেকটি ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন জয়া

কলকাতার নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘কড়ক সিং’ নামের হিন্দি ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশী…

2 days ago

বলিউড ডিভা শিল্পা শেঠির সম্পত্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্তি: সন্তানসহ মুম্বাই ছেড়ে প্রত্যাবর্তন

বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রা তার আর্থিক মুদ্রার এক ধারালো নিয়ে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তি…

2 days ago

পাওলি দাম: বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এক নতুন প্রতিভার আবির্ভাব

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শৃঙ্খলা সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে অল্প বা মাঝামাঝি হয়ে যাওয়া একটি বিষয়।…

2 days ago
https://www.banglaexpress.in/ Ocean code: