“এই ডিজাস্টারের দায় উঁচুতলার নেতৃত্বকে নিতে হবে” – তন্ময় ভট্টাচার্য

১৯৪৬ সালের পর এই প্রথম বামশূন্য বিধানসভা গঠিত হচ্ছে। কংগ্রেস শূন্য বিধানসভা গঠিত হচ্ছে এবং সব হিসেব এখনও স্পষ্ট না হলেও সম্ভবত শেষ লোকসভা নির্বাচনের থেকেও ২% কম ভোট বামপন্থীদের ভাগ্যে জুটছে। যারা উপর থেকে নির্দেশ দেন তাদের দায়িত্বভারও নেওয়া উচিত এই বিপর্যয়ের। এত বড়ো একটা ডিজাস্টারের দায় কেউ নেবেন না এমনটা হওয়া উচিত না। এই ডিজাস্টারের দায় নেওয়া প্রয়োজন।

আমার নিজের অনুমান এটা মূলত মোদী বিরোধী ভোট। লক ডাউনে নাজেহাল মানুষের ভোট। পাশাপাশি NRC- র ভয়ে ভীত সংখ্যালঘু ভোটের রক্ষাকর্তা হিসেবে তৃণমূল কে বেছে নেওয়ার ভোট। সবটা মিলে এটা মানুষের সচেতন, সুচিন্তিত রাজনৈতিক রায় তৃণমূলের পক্ষে। বিজেপিকে ঠেকানোর জন্য তারাই প্রধান শক্তি বলে মানুষ মনে করেছেন। মানুষের মনে করাটা সকলের মেনে নেওয়া দরকার।

মিডিয়াতে এক তরফা ভাবে বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার প্রোপাগাণ্ডা হয়েছে আর তৃণমূলের দানের রাজনীতি তারও প্রোপাগাণ্ডা হয়েছে। আমি মনে করি এটা এই পর্যায়ে সফল হয়েছে। দুটো লাভই তৃণমূলের পক্ষে গেছে এবিং সেটা যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল।

একদল বামপন্থী আমাদের পার্টির নেতা মনে করেন ফেসবুকে পোস্ট করেন কর্মসূচিতে সংশোধীয় গণতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও তারা অহংকার করে বক্তৃতা করেন যে, “আমরা ভোটের রাজনীতি করি না, আমরা রাস্তায় থাকি।” তাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ হয়েছে। তাঁরা রাস্তায় থাকুন। যারা ভোটের রাজনীতি করে তারা ভোট পেয়েছে, ঠিকই আছে। মানুষ তাদেরই বেছে নিয়েছে। রাস্তায় থাকা তো তাদের গর্ব। আমি আমার নেতাদের বলছি আপনি যাতে সেখানে নিশ্চিন্তে থাকেন সেই জন্য মানুষ আপনার হাতে একটা ফুটো বাটি ধরিয়ে দিয়েছে। এবার আপনি ভাবুন , বাটিটা হাতে নিয়ে ঘুরবেন নাকি ভোটের রাজনীতি করবেন!

আমি জানি এই এবিপি আনন্দের লাইভ অনুষ্ঠানে আমার মুখে এই কথা গুলো শুনতে শুনতে আমার পার্টির অনেক কোট আনকোট শৃঙ্খলাবদ্ধ নেতা এবং সৈনিকরা বলছেন পার্টি কর্মী হিসেবে এসব ভিতরে আলোচনা করতে হয়। প্রকাশ্যে না। আমি বলতে চাই যেখানে গোটা সিস্টেমটাই উলঙ্গ হিয়ে গেছে সেখানে কীসের ভিতর আর কীসের বাইরে! যা বলার আজকে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে মানুষের কাছে স্পষ্ট করে বলা উচিত এবং আমি মানুষের কাছে তাই আমার সমস্ত কথাগুলোকে স্পষ্ট করে বলতে চাইছি।

কোনওভাবেই কোনও অজুহাত সৃষ্টি যেন আমার নেতারা না করেন। নীতিগত এই নির্বাচনে রাজ্যের সাধারণ মানুষ বিপুলভাবে বামপন্থীদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। কোনও বাম প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করে নিজেদের খিল্লি করাটা যুক্তিহীন হবে। তারা নিজেদের মতো চেষ্টা করেছে। বাকিটা জনতা জনার্দন যা করেছেন তাই মানতে হবে। মানুষের রায় সার্বিক ভাবে মেনে নিতে হবে। আমাদের রাজ্যের মানুষ সঠিক অর্থে বামপন্থীদের বিরোধী দলের মর্যাদাটুকুও কেড়ে নিয়েছে। শূন্য করে দিয়েছে। মানুষ বামপন্থীদের নূন্যতম যোগ্য বলে মনে করেনি। বামেদের বিকল্প বার্তা এ পর্যায়ে কোনও কাজে আসেনি।

জোট বলেন সংগঠন বলেন সবটা নিয়েই নতুন করে ভাবতে হবে। ফেব্রুয়ারির ব্রিগেডে আসা মানুষ এবং তাদের পরিবার তারাও সকলে আমাদের ভোট দিয়েছে কিনা তারও বুথ ভিত্তিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন।আর ওইসব কথা আমরা মানুষকে বোঝাতে পারিনি এসব আমার মতে ছেদো গল্প। আসলে আমি বিশ্বাস করছি এখন যে আমাদের মধ্যে পার্টির নেতা কর্মীদের মধ্যে বিশেষ করে নেতাদের মধ্যে মানুষকে বুঝতে পারার শক্তি আদৌ অবশিষ্ট আছে কিনা এটা নিয়েই প্রথম ভাবনাটা হওয়া দরকার। আমার ব্যক্তিগত হিসেবে এটা নেই তাই আদ্যিকালের ভাবনা ছেড়ে আরও অনেক বেশি সংস্কার দলে আসা প্রয়োজন।

আইএসএফের সাথে জোট করবার জন্য পলিটব্যুরোর যে একজন দুজন নেতা অত্যাধিক মাত্রায় আগ্রহী ছিলেন এবং ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের সমাবেশে অধীরকে থামিয়ে আব্বাস সিদ্দিকিকে দিয়ে থামতে বলানো এই যে প্রয়াসটাও নেওয়া হয়েছিল এটা জনগণকে এবং জাতীয় কংগ্রেসের মতো একটা দলকে অসম্মান করা হয়েছে বলে আমি মনে করি৷ এবং সেই অসম্মান জনগণ বা জাতীয় কংগ্রেস ভালোভাবে মেনে নেবে না এটাই স্বাভাবিক ছিল।

আমরা নিজেরা আন্দোলন করি তোমার চ্যানেলে বসে বলি যে শ্রমিকের সাতশো টাকা নূন্যতম দৈনিক মজুরি দিতে হবে, সুপ্রীম কোর্টের রায়ের কথা আমরা বক্তৃতায় বলি যে একুশ হাজার টাকা আয় না থাকলে একটা সংসার চলে না। আর আমাদের পার্টির যারা সর্বক্ষণের কর্মী, যারা তাঁদের গোটা জীবনটা পার্টির জন্য দিয়েছেন আমরা তাঁদের চার-পাঁচ হাজার টাকা দিই। হ্যাঁ এটা ঠিক এটা বেতন না এটা ভাতা কিন্তু একটা হোলটাইমার তো অন্য কোনও পেশার সাথে যুক্ত হয় না তাহলে আমি যদি মনে করি একুশ হাজার টাকা নাহলে একটা সংসার চলবে না তাহলে পার্টির একটা হোলটাইমারের একুশ হাজার টাকার কমে চার পাঁচ হাজার ছ হাজার টাকায় কী করে চলবে এটা আমাদের নেতৃত্ব ভাবেন না কেন? হোলটাইমার বলে তার পরিবার থাকবেন না বা তার খিদে অন্যের তুলনায় কম লাগবে এমন হতে পারে না। ভাতা হোক বা যা খুশি হোক হোলটাইমার রাখলে তাঁকে নূন্যতম সাম্মানিক দিন যাতে তার প্রয়োজন মেটে।

আমি মার্ক্সবাদী। আমি আজীবন মার্ক্সবাদী থাকবো। আমি শুরুতেই বলেছি ডিজাস্টার। এই ডিজাস্টারের দায় উঁচুতলার নেতৃত্বকে নিতে হবে। দায় আমি নেব না। দায় নিচুতলার কর্মীরা নেবে না।নির্দেশ উপরের তলার কর্মীরা দেন, পরিকল্পনা উপরের তলার কর্মীরা করেন। আমরা যদি সেই নির্দেশ মোতাবেক না চলে থাকি তারা আমাদের শাস্তি দিন। যদি আমি না চলে থাকি আমাকেও শাস্তি দিন। কিন্তু লোকসভায় শূন্য করে দেওয়ার পরও কেউ দায় নিলেন না, বিধানসভায় শূন্য করে দেওয়ার পরও কেউ দায় নেবেন না, এটা চলতে পারে না। এখন সবাই স্তালিন কপচাবেন পরাজয়ে হতাশ হয়ে ভেঙে পড়ো না, জয়ে আত্মহারা হইয়ো না। সেই প্রকৃত কমিউনিস্ট। এটা স্তালিনের যুগ না। আমাদের পার্টি কর্মসূচিতে আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রকে গ্রহণ করেছি।

তন্ময় ভট্টাচার্যের বক্তব্য। যারা শোনেন নি তাদের জন্য

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

সিএএ নিয়ে প্রচারে মনোরঞ্জন, সাবধান করছেন এলাকার

২৪ এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে সিএএ। বিজেপির পক্ষ থেকে এই নিয়ে…

2 hours ago

সন্দেশখালির ঘটনা সাজানো, বিজেপির পরিকল্পিত চিত্রনাট্য, ভাইরাল ভিডিয়োই দাবি বিজেপি নেতার

সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে এবার নয়া মোড়। সন্দেশখালি আন্দোলন থেকে শুরু করে যা যা ঘটেছে সম্পূর্ণটাই…

2 hours ago

“আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে”- কুনাল ঘোষের গলায় কেন এই গান?

বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দলবিরোধী কথা বলছিলেন। বিশেষ করে…

2 hours ago

“সনাতন বিরোধী তৃণমূল”- দৈনিক সংবাদপত্রে বিজেপির বিজ্ঞাপন , প্রচারে ‘ধর্ম’ ব্যবহার করায় কমিশনে তৃণমূল

বিজেপির বিজ্ঞাপনে 'ধর্ম' হাতিয়ার, নির্বাচন কমিশনের নজরে আনল তৃণমূল কংগ্রেস। যেখানে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকায় স্পষ্ট…

2 hours ago

বিগত বছরে বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি হয় নি, দাবি WBSEDCL এর

বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি হয়েছে বলে মিথ্যে রটনা শুরু হয়েছে। বিগত বছরে এমন কোন মাশুল বৃদ্ধি…

2 hours ago

হেলিকপ্টারে আগুনের ঘটনায় থমকে নেই দেব, শনিবার দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে চুটিয়ে প্রচার

হেলিকপ্টারে হঠাৎ আগুন। বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পান অভিনেতা তথা তৃণমূল প্রার্থী দেব। তবে…

2 hours ago
https://www.banglaexpress.in/ Ocean code: