কাল ভৈরব বিগ্রহ, স্বপ্নে আদেশ নির্মিত

উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় মুর্তি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মেড্ডায় অবস্থিত শ্রী শ্রী কালভৈরব মূর্তি।২৮ ফুট উচ্চতার মূর্তিটি ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় মূর্তি বলা হয়।ডানপাশে কালী মূর্তি ও বামপাশে পার্বতী দেবীর মূর্তি রয়েছে।মূর্তিটির পাশে ছিল শ্রী শ্রী কৈলাশ্বেশ্বর শিবলিঙ্গ, যা ১১২ বছরের পুরনো। মন্দিরের ডান পাশে শিবলিঙ্গ মন্দির। মন্দিরের বাম পাশে নতুন করে শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির ও শ্রী শ্রী শনিদেবের বিগ্রহ মন্দির রয়েছে। ১৯০৫ সালে মূর্তিটি নির্মাণ করা হয়।

কালভৈরব মন্দিরের স্থানটি সরাইলের বিখ্যাত জমিদার নূর মোহাম্মদ দান করেছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শহর প্রতিষ্ঠার পূর্বে মেড্ডা ছিল তিতাস তীরবর্তী বাজার। এই মন্দিরের মূল কালভৈরবের বয়স প্রায় তিনশ’ বছর। শহরের উত্তর সীমানায় শান্ত তিতাস নদীর পশ্চিম পার্শ্বে মেড্ডা গ্রামের এই জায়গা তখন ছিল পঞ্চবটের জন্য বিখ্যাত। সেখানেই পঞ্চবটির মূলে স্ব-মহিমায় আবির্ভূত হন কালীশ্বর শ্রীশ্রী কালভৈরব।

অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালীশ্বর শ্রী শ্রী কালভৈরবের আবির্ভাবের পর স্বপ্নে আদেশ পেয়ে দুর্গাচরণ আচার্য মাটি দিয়ে নির্মাণ করেন এই কালভৈরবের বিগ্রহ। তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ফুলবাড়িয়ার স্থায়ী অধিবাসী। প্রখ্যাত এ মূর্তি প্রস্তুতকারক কাল ভৈরবের পাশে নির্মাণ করেন শিবের স্ত্রী পার্বতীর মূর্তি। দূর্গাচরণ প্রথমে তিতাস পঞ্চবঢী মূলে মূর্তিটি স্থাপন করে পূজার্চনার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি স্থানীয় ভক্তবৃন্দের আন্তরিক সহায়তায় পূজা-অর্চনা শুরু করেন তখন থেকেই, যা নিয়মিতভাবে প্রচলিত হয়ে আসছিল ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।

মুক্তিযুদ্ধের সময় কালভৈরবের বিগ্রহটি পাক হানাদার বাহিনীর নজরে এলে তারা বৈদ্যুতিক ডিনামাইটের আঘাতে শিব ও পার্বতী মূর্তির অনেকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে। দার্শনিক ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী মহারাজের এবং সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতায় চার বছর কাজের পর কালভৈরব মূর্তি ও মন্দির পুণরায় নির্মাণ করা হয়।

মন্দিরের পুরোহিত নারায়ন চক্রবতী জানান, এই মন্দিরটি প্রায় তিনশ বছরের পুরোনো মন্দির। শ্রী শ্রী কালভৈরব মন্দিরের দালানটি প্রায় ৬০% নষ্ট হয়ে গেছে, রঙ করে কোন রকমে চলছে। মন্দিরের চারদিকে প্রাচীর দেয়া খুবই জরুরি।
প্রতি বছর বাংলা সালের ফাল্গুনী শুক্লা সপ্তমী তিথিতে চার দিনব্যাপী পূজা, হোমযজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠা উৎসব অনুষ্ঠান পালন করা হয়। পূজা অনুষ্ঠানে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ইংল্যান্ড, জাপান, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পূজারীরা ভিড় জমান। দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটকও এখানে ভিড় করেন এ সময়। উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও, প্রতিদিনই দর্শনার্থী ও পূজারীদের ভিড় লেগেই থাকে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ণে ও ব্যবস্থাপনায় মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে।

Susmita Sarkar

Share
Published by
Susmita Sarkar

Recent Posts

কুণাল ঘোষকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দিল রাজনীতির অবসান বা শুরু?

রাজনীতির সময়ে অনেক সময় আসে যখন সাধারণভাবে একজন রাজনৈতিক কর্মীর কাছে এক পদ দিয়ে দেওয়া…

1 day ago

রজনীকান্ত এবার সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে সব রেকর্ড ভেঙে দিলেন

তিনি ভারতীয় তামিল চলচ্চিত্রের মহাতারকা রজনীকান্ত। শুধু তামিল ভাষাতেই হিন্দি, তেলেগু, কন্নড় ও ইংরেজি ভাষার…

1 day ago

নির্মাতা অনিরুদ্ধ’র আরেকটি ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন জয়া

কলকাতার নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘কড়ক সিং’ নামের হিন্দি ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশী…

1 day ago

বলিউড ডিভা শিল্পা শেঠির সম্পত্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্তি: সন্তানসহ মুম্বাই ছেড়ে প্রত্যাবর্তন

বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রা তার আর্থিক মুদ্রার এক ধারালো নিয়ে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তি…

1 day ago

পাওলি দাম: বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এক নতুন প্রতিভার আবির্ভাব

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শৃঙ্খলা সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে অল্প বা মাঝামাঝি হয়ে যাওয়া একটি বিষয়।…

1 day ago

কুরুচিকর ভাষার প্রতিযোগিতা বন্ধে কমিশনের চিঠি প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলিকে

দেশ জুড়ে নির্বাচনী প্রচারে ঝড় বইছে। সেই সঙ্গে সমানতালে চলছে একে অপরকে আক্রমণের পালা। পক্ষ…

1 day ago
https://www.banglaexpress.in/ Ocean code: