বাংলাদেশে টিকা না এলে সংকটে পড়তে হবে

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: চলমান লকডাউনেও দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এদিকে টিকা সরবরাহের অনিশ্চয়তায় প্রয়োগের কার্যক্রম নিশ্চিত ঝুঁকির দিকেই এগুচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, যে টিকা আছে, এপ্রিল মাসে কোনো সমস্যা হবে না। তবে মে মাসের মধ্যে টিকা না এলে টিকা কার্যক্রম নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শুরু থেকেই বিকল্প না রেখে একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল থাকার কারণে বাংলাদেশের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, গত ২৫ জানুয়ারি ৫০ লাখ টিকা আসে বাংলাদেশে। ২১ জানুয়ারি উপহার হিসেবে আরও ২০ লাখ টিকা পৌঁছায়। ফেব্রুয়ারি মাসে ৫০ লাখ আসার কথা থাকলেও এসেছে মাত্র ২০ লাখ। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের হাতে এসেছিল এক কোটি দুই লাখ ডোজ। মার্চে ৫০ লাখ টিকা আসার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চালান আসেনি। কবে নাগাদ টিকার চালান আসতে পারে, তা কেউ বলতে পারছে না।

কিন্তু প্রথম ডোজের টিকা যে সংখ্যক মানুষ নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রায় দশ লাখ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে, যা সরকারি হিসাবেই পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনসিডিসি) পরিচালক ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, আমাদের কাছে যে টিকা আছে, সেটায় এ মাস চলে যাবে আশা করা যায়। তবে পরবর্তী মাসে যদি আমরা কোথাও থেকেই টিকা না পাই, তখনই সংকটে পড়ে যেতে হবে। যা আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সেরাম ছাড়াও রাশিয়া এবং চীনসহ বিকল্প সব জায়গা থেকে টিকা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতের এ সমস্যাটার জন্য আমাদের সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের তো অনেক বেশি আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে, ওদের মৃত্যুও অনেক বেশি। কিন্তু এটা তো কেনা টিকা, আমাদের অধিকারটা তো বেশি। অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, টিকার বিষয়ে চীন বা রাশিয়া কারো থেকেই এখনও কোনো নিশ্চয়তা আসেনি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি দেখছেন, বিভিন্ন দেশে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ভারত, রাশিয়া, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এটা মেলানো যায় কি না। কিন্তু এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো ফলাফল আমরা পাইনি। তিনি আরও বলেন, কোভ্যাক্সের টিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিস্ট্রিবিউট করা শুরু করেছে ইতোমধ্যে। আমরাও সেই তালিকায় আছি। ওটা পেয়ে গেলে আমাদের জন্য বড় একটা সুবিধা হবে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলম বলেন, টিকার ঘাটতি থাকছেই। হিসাবে তাই বলে।

এখন সেরামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, তাগাদা দিয়েছি। এর মধ্যে আমরা আমাদের অধিদফতর এবং মন্ত্রণালয় দুই দুই বার তাকে (সেরামকে) চিঠিও দিয়েছি। তারাও প্রত্যেকবার বলছে যে এটা অসুবিধ হবে না। রাশিয়া এবং চীন থেকে টিকা পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তবে রাশিয়া এবং চীন আগ্রহ প্রকাশ করেছে যে তারা দিতে চায়। ইতোমধ্যে আমাদের দুই-তিনটা বৈঠকও হয়েছে। তবে মুশকিল হচ্ছে, কেউ না করছে না। টিকা দেবে না, একথা কেউ বলছে না। কিন্তু কবে পাওয়া যাবে, সেই নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। সেরামের স্থগিতাদেশে কোভ্যাক্সেও সংকট দেখা দেবে?  বাংলাদেশের ২০ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা সরবরাহের কথা রয়েছে কোভ্যাক্সের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ হচ্ছে কোভ্যাক্স। যার আওতায় বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে টিকা সরবরাহ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম ধাপে বাংলাদেশকে যে এক কোটি ডোজ টিকা দিতে চেয়েছিল, তাও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। মহাপরিচালক অধ্যাপক আলম জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ভারতের সেরামের কাছ থেকে টিকা নিয়ে বাংলাদেশকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেরাম এ মুহূর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও টিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। সেরাম যদি কোভ্যাক্সকেও টিকা না দেয়, তাহলে বাংলাদেশের টিকা পেতে কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, সেরাম কোভ্যাক্সকে টিকা না দিলেও আমাদের টিকা প্রাপ্তিতে কোনো সমস্যা হবে না।

কারণ কোভ্যাক্সের সঙ্গে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের চুক্তি আছে। ফাইজার, জনসনের টিকা কোভ্যাক্স পাচ্ছে, সুতরাং সেরাম টিকা না দিলেও বিকল্প টিকা তারা দিতে পারবে। কেননা ওদের কাছে শুধু একটা পোলের টিকা নয়। আপাতত এটাই আমাদের আশা। আর বাকিটা তো বিভিন্ন দেশের সরকার মহলে যোগাযোগ চলছে। কিন্তু তারা যদি এখন অনেক বেশি দরদাম চায়, তাহলে তো এখানে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও দেখতে হবে। তবে বিভিন্ন দিকেই যেহেতু যোগাযোগ চলছে, একটা সিদ্ধান্তে চলে আসা যাবে। টিকার সংকট থাকলেও প্রথম ডোজ এখনও চলছে। এটা বন্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, টিকা প্রয়োগের উদ্দেশ্য হচ্ছে যতো পার্সেন্টের জনগণকে কাভার দিতে পারেন, কিন্তু এখন যদি প্রথম ডোজ বন্ধ করে দ্বিতীয় ডোজই দিতে থাকেন, তাহলে তো আপনি ৩ পার্সেন্টেই রয়ে গেলেন আরকি। কিন্তু এ তিন ভাগ দিয়ে তো কিছুই হবে না। না আপনি সংক্রমণ কমাতে পারবেন, না পারবেন হাসপাতালে মৃত্যু কমাতে। এ জন্য যে টিকাই থাকুক না কেন, যতবেশি পরিমাণে কাভারেজ দেওয়া যায়, সেটাই ভালো।

admin

Share
Published by
admin

Recent Posts

সুন্দরী বলিউড অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়া: এক অভিনয়ীর সাহসিক পথ

বলিউডের স্বপ্নপূরণে সাহসের চেতনার প্রতীক পরিণীতি চোপড়া। টানা এক দশক ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন এই…

4 days ago

আমার মতো অনেকেই নিতম্ব দেখেননি : নোরা ফাতেহি

বলিউডের বোম্ব শেল, নোরা ফাতেহি, প্রথমে ছিলেন একজন আইটেম গার্ল। তিনি নাচের মাধ্যমে শুরু করেন…

4 days ago

পাঁচজনের সঙ্গে নেহা’র অতীত জীবন কেমন ছিল!

বলিউডের চলতি প্রজন্মের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নেহা কক্কর। তিনি ১৯৮৮ সালের ৬ জুন উত্তরাখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন।…

4 days ago

তৃতীয় দফায় রাজ্যের চারটি লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন

তৃতীয় দফায় রাজ্যের চারটি লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন। মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদ। এই…

4 days ago

নজরে মুর্শিদাবাদ, মাত্র দুটি কেন্দ্রে ১০০ কোম্পানি?
মুর্শিদাবাদের জন্য আর কি কি সতর্কতা নিচ্ছে কমিশন?

তৃতীয় দফায় ভোট রয়েছে মুর্শিদাবাদে। জঙ্গীপুর ও মর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের ভোটাররা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ…

4 days ago

অধীরকে গো ব্যাক স্লোগান, কমিশনে নালিশ কংগ্রেসের, জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব

মুর্শিদাবাদের নওদায় তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি শেখ সফিউজ্জামান হাবিবের বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ জানালো কংগ্রেস। নওদায়…

4 days ago
https://www.banglaexpress.in/ Ocean code: