নেপালের সুনীতা !


বৃহস্পতিবার,০৩/০৯/২০১৫
589

 খবরইন্ডিয়াঅনলাইনঃ    দিনগুলো দুঃস্বপ্নের মতো। আজও মনে হলে শিউরে ওঠেন। কতই বা বয়স তখন- খুব বেশি হলে বছর ১৪। প্রতিদিন ৩০ তাকে ধর্ষণ করতো। এ অবস্থা চলেছে টানা পাঁচ মাস। কখনো কখনো মারধর।

অথচ ওই বয়সে স্কুল, বন্ধুদের সঙ্গে খেলা, বই পড়া, গান শোনা- নিশ্চিন্ত, সুখের মেয়েবেলাই তার প্রাপ্য ছিল। একদিন সব ওলটপালট হয়ে গেল। পাড়ার এক কাকার হাত ধরে কাজের খোঁজে নেপাল থেকে  মুম্বাই আসেন।

এরপর থেকেই শুরু এই মর্মান্তিক কাহিনীর। একটি ঘরে বন্দি। চিৎ‌কার করে গলা ফাটিয়ে ফেললেও কারো কানে আওয়াজ যাওয়ার উপায় নেই। একের পর এক লোক ঢুকে মিটিয়ে যাচ্ছে যৌন লালসা। ক্লান্ত, রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকেন ১৪ বছরের কিশোরী।

সেই অন্ধকার জগত থেকে কোনও ক্রমে পালিয়ে বেঁচেছিলেন নেপালের সুনীতা দুয়াঁওয়ার। পাচার হওয়া নাবালিকাদের যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করাই এখন ব্রত তার।

ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালে এখনও হাহাকার। প্রকৃতির রোষে সব হারিয়ে প্রতিনিয়ত বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে নেপালবাসী। আর তাদের এই দুরবস্থার সুযোগ নিতে ব্যস্ত নারীপাচারকারীরা। কাজের প্রলোভন দেখিয়ে নাবালিকাদের  পাচার করে যৌনপল্লীতে বেচে দেয়া নেপালের সাধারণ ঘটনা।

ভূমিকম্পের পর আরও বেড়েছে। নারীপাচারকারীদের বিরুদ্ধে একা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সুনীতা দুয়াঁওয়ার। যৌনপল্লীর অন্ধকার থেকে নাবালিকাদের উদ্ধার করার লড়াই। হাজারো চোখরাঙানি, প্রাণে মারার হুমকি, সব কিছু উপেক্ষা করেই তিনি লক্ষ্যে অবিচল।

এক গণমাধ্যমকে সুনিতা জানান, ২০ বছর আগে ঘটেছিল সেই ভয়াবহ ঘটনা। বিস্ফোরক স্বীকারোক্তিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন দুনিয়ায়। জানিয়েছেন, তার যখন ১৪ বছর বয়স, তখন তাকে  কাজ দেয়ার নাম করে নিয়ে যাওয়া হয়। সংসারের অভাব মেটাতে পাড়ার কাকার সঙ্গে রাজি হয়ে যান তিনি।

মুম্বাই গিয়ে সেই কাকা হঠাৎ‌ বদলে গেল। একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে চলে গেল। বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি বিক্রি হয়ে গেছেন। এই নরককুণ্ডই তার ঠিকানা। এরপর শুরু অত্যাচার। সুনীতার কথায়, ‘পাঁচ মাস আমি বন্দি ছিলাম। ঘরের বাইরে বেরোতে দেয়া হতো না। একের পর এক লোক ঢুকতো। তারপর শুরু করত ধর্ষণ। এই ভাবেই কাটত গোটা সপ্তাহ। এমনও দিন গেছে, একদিনে ৩০ জন পুরুষ আমাকে ছিঁড়ে খেয়েছে। বাধা দিলেই জুটেছে মার। জোর করে মুখে ঢুকিয়ে দেয়া হতো খাবার। এমনকি ঘুমিয়ে পড়লেও আমাকে মাঝরাতে তুলে বলা হতো, কাস্টমার এসেছে।’

পাঁচ মাস এই অত্যাচার সহ্য করার পর পালিয়ে যান সুনীতা। তারপর জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, পাচার হওয়া নাবালিকাদের তিনি উদ্ধার করবেন। তার মতো অবস্থা যেন কারও না হয়। সুনীতার কথায়, সারা বিশ্বে ২ লাখ ২৮ হাজার ৭০০ নেপালি নাবালিকা যৌনপল্লীতে আটক রয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, প্রতিবছর কাজ দেয়ার নাম করে ৭ হাজার নাবালিকাকে নেপাল থেকে পাচার করা হয়।

Loading...
https://www.banglaexpress.in/ Ocean code:

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট