১২
নাহিদ এবং রিনার মধ্যে বেশ কয়েকদিন যোগাযোগ নেই। রিনা কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো অবশ্য। কিন্তু নাহিদ ফোন রিসিভ করে নি। স্কুলও ছুটি। প্রাইভেট ছুটি। কোনো বন্ধু বান্ধব এখন সেরকম যোগাযোগ করে না কাউকে। কারণ সবার মাথায় পরিক্ষার চাপ। যে সে চাপ তো নয়। একেবারে সন্মানের ব্যাপার। সে না হয় বাবা মায়ের কাছে ঝাড়ি খাওয়া যায়। কিন্তু মেয়েদের কাছে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে। আর বিশেষ করে প্রমিকার কাছে। কিন্তু নাহিদের ওসবের ভয় নেই। নাহিদের একমাত্র ভয় সন্মান কে। সে পড়তে চাই। ভালো চাকরি করতে চাই। আরো অনেক কিছু। নাহিদ চা খেয়ে প্রবেশ করল নিজের ঘরে। পড়ার জন্য। দক্ষিণের জানালাটা খুলে। জানালা দিয়ে হালকা মৃদু বাতাস বইছে। হালকা শীত লাগছে। টেবিলে সাজানো অনেক বই। ফট করে কেমিস্ট্রির বইটা নিয়ে পাতা উল্টে উল্টে দেখছে। আবার কি জানো হল বন্দ করে রেখে দিল। না ভালো লাগছে না। মন শান্ত লাগছে না। পায়চারি করছে। আবার বসল। বিছানায় রিমোর্ট ছিল। রিমোর্ট দিয়ে টিভি’টা অন করল। সনি আট চ্যানেলে গিয়ে প্রবেশ করল। কি দেখব কি দেখব বলে ভাবছে নাহিদ। এই বলেই গোপাল ভাঁড়ের কার্টুন দেখতে শুরু করল। দেখছে কিছুক্ষণ, হঠাৎ করেই মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসলো। ম্যাসেজটা ক্লিক করতেই লেখাগুলি জ্বলজ্বল করে উঠল। প্রিয়তম, বিগত তিন ধরে তোমায় আমি ফোন দিয়ে চলেছি।তুমি কোনোরকম আমার প্রতি সদয় না হয়ে ফোন রিসিভ করছ না। আমি তোমায় অন্তত শেষবারের মতো দেখা করতে চাই। আগামীকাল আমাদের আম বাগানে দয়া করে আসবে। আমি তোমার আসার অপেক্ষায় থাকব। যদি না আসো তবে এই শেষ দেখা হতে পারে।
ম্যাসেজ পড়ে কোনোরকম কোনো কিছু না ভেবে রিপ্লাই দিয়ে দেয়। আমি কোনো অসভ্য মেয়ের সঙ্গে কথা বলার নেই। সে তুমি যা খুশি করতে পারো। আমি তোমায় ভালোবাসি কিন্তু আমি সুজন নয়। তুমি আমার সঙ্গে সুজনের তুলনা করেছ। তুমি ভালো করেই জানতে আমি এসব পছন্দ করি না। প্রেম করি কিন্তু অবৈধ্য মেলামেশা আমি চাই না। সেদিন তুমিই কখন কিস করেছিলে। তবু্ও আমি কিছুই বলি নি। আবার ফের এ্যাটাক করেছ। আমি মোটেই সেরকম নই। ব্যাস রিপ্লাই শেষ। কোনোদিক থেকেই রিপ্লাই আসে নি। নাহিদ প্রচুর পড়াশোনা করে। প্রেমের কষ্ট কম নয়।তবুও কষ্টকে উপেক্ষা করে পড়াশোনা চালাচ্ছে। সামনে পরিক্ষা। ভালো রেজাল্ট করতেই হবে। বড় হয়ে বড় অফিসার হতে চাই। ওদিকে বাবার রাজনীতি নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে কিছু গ্রামের মানুষ। বিশেষ করে ফজলু শেখ। সে যত টাকা লাগে পঞ্চায়েত গঠন করবে তাঁর দল।
১৩
সাদেক মাতব্বর ভারি চিন্তায় আছে যেভাবে গ্রামে রাজনীতির ঝড় চলছে তাতে করে আর রাজনীতি করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। গত পঞ্চায়েত তাঁদের দলের থাকায় গুণ্ডামি করে জিতেছিল। এখন সেটাও হাতছাড়া। রমজানের দল পঞ্চায়েত গঠন করেছে। ফলে সরকারিভাবে সাদেকের কোনো জারিজুরি খাটবে না। পুলিশ তাকেই ধরবে। আগে রমজান ও সাদেক সাহেব পঞ্চায়েত গঠন করত। হয় রমজানের দল না হয় সাদেকের দল। এখন দুই দলই সর্বহারা হতে চলেছে। শুধু একমাত্র কারণ করিম। সে ব্যাটা ওদের পাকা ধানে মই দিচ্ছে।
রহিম ও নাদের বকুল মাস্টার কে অনেক বুঝিয়েছে। তাঁকে নির্বাচনে লড়ার জন্য। কিন্তু বকুল মাস্টার না করে দিয়েছে। বলেছে, আমি মাস্টার ছাত্রদের শিক্ষা দিই। আমার জন্য রাজনীতি নয়। বরং আমি রাজনীতির বিরুদ্ধে। তিনি আরো জানান যে, আমি আপনাদের সাপোর্ট করছি, ভোট দেব অসুবিধে নেই। কিন্তু আমায় ওকথা বলবেন না। রহিম ও নাদের গত দুইদিন ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাঁদের চেষ্টা সব বিফলে গিয়েছে। নির্বাচন এগিয়ে আসছে। থমথমপুর পঞ্চায়েত মাত্র পাঁচটি সিটের। তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত হয়েছে। তাঁর মধ্য থমথমপুরেই দুটি সিট। এক ও দুই নম্বর সংসদ আছে। কিছুদিন আগে পঞ্চায়েত ভাগ হয়ে আলাদা হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগেই হয়েছে। তখন থমথমপুর দশ ও এগারো নম্বর সংসদ ছিলো। এখন পুরোপুরি স্বাধীন পঞ্চায়েত থমথমপুরের। রহিম ও নাদের রমজান মাতব্বরের বাড়িতে আসে। তিনজনে মিলে সিধান্ত নেয়, নাদের কেই দাঁড়াতে হবে। ব্যাস পার্থী ঘোষণা শেষ রমজানের দলের। সঁন্ধায় মিটিং করতে হবে দলের সদস্য নিয়ে। নতুন পার্টির জন্য। নাদের বলে উঠে নতুন পার্টি মানে। আমাদের পার্টি গঠন হবে আলাদাভাবে। গতকাল হেড অফিসে আমি গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে অঞ্চল সভাপতির ঝামেলা হয়েছে। আমি মুখের ওপর বলে এসেছি। পার্টি ত্যাগ করলাম। মোড়ল মশাই এটা ঠিক হয় নি। পুরাতন পার্টি কে সবাই চেনে। পরে বদলানো যেত। ওসব নিয়ে তোর না ভাবলেও হবে। পাস করানোর দায়িত্ব আমার। এখানে ওদের পার্টি জিততে যেন না পারে। দরকার হলে আমরা সাদেকের সঙ্গে যুক্ত হব। জোট দল হবে। পঞ্চায়েত আমাদেরই থাকবে।
১৪
পরেরদিন সকালে ফজলু তিনজন কে নিয়ে করিমের বাড়ি হাজির। বড়ভাই আমি এসেছি তোমার কাছে। তুমি আজ ফিরাবে না আমায়। সঙ্গে তিনজন জ্ঞানী ব্যাক্তি এসেছে। করিম বলে উঠলো, আরে কি করছিস এসব। হিংসাপনা কাজ বাদ দে। আমাদের জন্য রাজনীতি নয়। রাজনীতি বড়লোকের জন্য। বড়ভাই ওসব নিয়ে চিন্তা তোমায় করতে হবে না। আমি সেসব দেখে নেব। তুমি একবার রাজি হয়ে যাও। এই যে বকুল মাস্টার, খালেক ভাই ও নিফাজ ডাক্তার কে নিয়ে এসেছি। ভালো মানুষদের খুব দরকার আমাদের অঞ্চলে। তাই অন্তত রাজনীতিটা করতে হবে তোমায়। বকুল মাস্টার বলে, শোনো বড়ভাই আমি মাস্টার হিসাবে বলছি না। ছোটভাই হিসাবেই বলছি। তুমি রাজি হয়ে যাও। একই সুরে সুর মিলিয়ে খালেক ও নিফাজ ডাক্তার বলল, ভাইজান রাজি হয়ে যাও।আমরা শিক্ষিত মানুষ। আমরা এই বর্বর সমাজটাকে সভ্য শিক্ষিত করতে চাই। আমরা তোমার সঙ্গে আছি। এই বকুল ভাইয়ের কাছে রহিম ও নাদের গিয়েছিল ওদের পার্টির পার্থী করার জন্য। মাস্টার রাজি হতে পারত কিন্তু হয়নি। তবু্ও আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করবে। আমরা সবাই নতুন ভাই। দেখি না একবার সাফল্য আসতেও তো পারে। পাঁচ বুথের সবাই তোমার মুখের ওপর তাঁকিয়ে আছে। তোমার অপেক্ষায়। বড়ভাই তুমি নির্বাচনে পার্থী হলে নিশ্চিত অন্তত চারটি আসন পাবই পাব। নাহিদের মা আসে চা নিয়ে। আচ্ছা বাপু সবাই যখন বলছে তখন রাজি হয়ে যাও না। সঙ্গে গ্রামের প্রায় বেশিরভাগ মানুষ তোমাকেই চাইছে। করিম সাহেব অনেক্ক্ষণ চুপ করে বসে আছে।
একদম থ মেরে। তারপর উত্তর আসে। আমি রাজি। তবে আমার সঙ্গে সব সময় থাকতে হবে।সঠিক পরামর্শ দিতে হবে। যদি পারিস তবে বল। আমি রাজি। ফজলু শেখ বলল। হ্যাঁ। একশোবার। তাহলে আজ বিকেলে আমার বাড়িতে আয়। আরো দু দশজন নিয়ে। সাধারণ সভা করতে। জাস্ট আলোচনা। সবার সঙ্গে মত বিনিময়ের দরকার আছে। ফজলু ঠিক আছে বলে ঘাড় নাড়িয়ে মত প্রকাশ করে। সে সময় নাহিদ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। বাবা উঠানে বসে আছে। নাহিদ সাইকেল নিয়ে বেরাচ্ছে কোথাও। বাবা বলে, কোথায় যাচ্ছ বাবা এখন। না বাবা একটু কাজ আছে বাইরে। তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। বিকেলবেলায় থাকতে হবে। বাড়িতে কিছু কাজ আছে। ঠিক আছে বাবা বলে সাইকেলে উঠে চলল লাল রাস্তায়। আমবাগানের ধারে। কিছুটা যেতে হবে। এপাড়া থেকে ওপাড়ায়।রিনা নাহিদের জন্য অপেক্ষায় আছে। রাত্রে আসার কথা ছিল। কিন্তু তা পরে ম্যাসেজ করে সময় বদল করা হয়েছে। সাইকেল চালাচ্ছে। আস্তে আস্তে অবশ্য। পুরাতন সাইকেলটা বাতিল করেছে। বাবার কাছে আবদার করে নতুন সাইকেল নিয়েছে। লেডিজ সাইকেল। গেয়ারিং সিস্টেম। পাঁচ গেয়ার আছে। ভালো ধরনের টাকা খরচ হয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার মতো। সামনে আর মিছুটা বাকি আছে রাস্তা। মনে মনে ভাবছে কি বলবে। যদি সে আমায় ভালো না বাসে তাহলে আমি শেষ। আমি যে রিনা কে ছাড়া বাঁচব না। হায় আল্লাহ তুমি আমায় বাঁচায়ো। আমি না হয় খারাপ কিছু চাই না। কিন্তু ওরদিকটাও আমার ভাবা দরকার ছিল। সামান্য একটু রোমান্স। আর কিছু তো চাই নাই।
তাঁর কোনো দোষ দেখি না। কিন্তু মাথায় কি ভূত চেপেছিল কে জানে। না হয় হাত ধরে মাফ চেয়ে নেব। আস্তে আস্তে সাইকেল চালাচ্ছে তবুও হাপাচ্ছে। বুকের ভিতর ছটপট করছে। কি হবে। কে জানে। রাস্তায় আজিজের সঙ্গে দেখা। আজিজ নাহিদের বন্ধু। কি রে ব্যাটা কোথায় যাস এখন। না এইখানে একটু কাজ আছে। না, তোকে দেখে মনে হচ্ছে চিন্তিত। তুই হাপাচ্ছিস কেন। না রে না। কই হাপাচ্ছি। আরে ব্যাটা তোকে দেখেই মনে হচ্ছে হাপাচ্ছিস। কি ব্যাপার আমায় খুলে বল। না মানে কি বলব। কিছু বলার নেই। আছে মানে। আর মানে মানে করতে হবে না। ব্যাপারটা বললে বল। না হলে গেলাম। মানে রিনার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে রে। কি করা যায় বলতো। কি রকম। একটা কথার জন্য আমি এক সপ্তাহ কথা বলি নি। অনেকটা রাগ করে ছিলাম। জট পাকিয়ে ফেলেছি। ওহ এই ব্যাপার। ও কোনো ব্যাপার হল। নিজে গিয়ে ওর কাছে সরি বলে দে। যা চাই একটু তাই কর। ও যেমন ভাবে চাইছে সেরকম কর। আরে ব্যাটা প্রেম করতে গেলে এমন হয় রে। দেখিস নি অলিভার সঙ্গে আমার একমাস কি হল। অন্যজন কে তো মন দিয়েই দিয়েছিল। আরে মেয়েরা হল গোলাপ। সেই গোলাপটাকে রাখতে গেলে যত্ন তো করতেই হবে। গোলাপটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনেক কিছু করি তাই না। হ্যাঁ। তো সেটাই কর। যেভাবে থাকতে চাইছে সেভাবে রাখ। তাহলে দেখবি গোলাপটা অর্থাৎ রিনা তোরই থাকবে। আচ্ছা ভাই তুই একটু সময় করে ওকে বুঝিয়ে বলিস না। আচ্ছা ঠিক আছে বলব। তোদের সঙ্গে তো ভালো সম্পর্ক। ঠিক আছে যা। এই বলে নাহিদের পিঠে একটা থাবা বসিয়ে দিল। এবং ভরসা দিল।
নাহিদ সাইকেল নিয়ে এগালো। নয়নাদের বাড়িতে প্রবেশ করলো। কি নয়না আছিস না কি রে। আছি আছি আয়। কি খবর। পড়াশোনা করছিস না কি। হ্যাঁ রে হ্যাঁ সে আর বলতে। সামনে পরিক্ষা। আচ্ছা তোর আব্বা না কি নির্বাচনে লড়বে শুনতেছি। হ্যাঁ। আব্বা রাজি হচ্ছিল না। তারপর ফজলু চাচা,বকুল স্যার খালেদ চাচা আরো অনেকে রাজি করিয়েছে। তা ভালো তো। আব্বাও বলছিল এবার নাহিদের আব্বা নির্বাচনে লড়লে একটা আসন না কি কেউ পাবে না। সেরকম আশাবাদী হচ্ছে নেতারা। গ্রামের লোকে এবার ঠিক নেতা পাচ্ছে। সবার উন্নতি করার যোগ্যতা রাখে। ওসব কথা বাদ দে। আমার কথায় কান দে। কিছু বলবি। হ্যাঁ বলার জন্যই তো এসেছি। না হলে বিকাল বিকাল কি করতে এসেছি। আরে বিকেল কোথায় এখন তিনটে তো বাঁজে। ওহ এই তোর জ্ঞান। তিনটে বাঁজলেও বিকেল নয়। হ্যাঁ বিকেল কিন্তু বিকেলের শুরু। সে যাই হোক। আমার সঙ্গে এক জায়গায় যেতে হবে। কোথায়। রিনাদের আমবাগানে। কেন, আমার সঙ্গে প্রেম করবি না কি। আহঃ, কি ফালতু কথা বলছিস। আমার কি না পোষ মাস চলছে। আর তুই মস্করা করছিস। মস্করা কোথায় করলাম। এটা মস্করা নয়। আমাকে বাগানে নিয়ে যাওয়ার মতলব বুঝি না। কি করতে চাস। নয়না অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে মিচকি মিচকি হাসছে। আবার মুখ ফিরিয়ে বলে। আমি জানি না এখনকার ছেলেদের বিশ্বাস করতে নেই। সব ধান্দাবাজ। ধ্যূত ত্যারিকা বলে নাহিদ সোজা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছে। এমন সময় নয়না পিছন থেকে জামার কলার ধরে বলে, এই মাইণ্ড করলি। আমি কিন্তু তোকে রাগানোর জন্য বলেছি। বল এবার কি বলতে চাইছিস।
চলবে …..

এন.কে.মণ্ডল
“আপনি কি কবিতা/ গল্প / সাহিত্য লিখতে ভালোবাসেন ? তাহলে আজই আপনার লেখা হোয়াটস্যাপ বা ইমেইল করুন আমাদের। আমরা আপনার ছবি ও নাম সহো প্রকাশ করবো “বাংলা এক্সপ্রেস” এর “কবিতা/সাহিত্য” বিভাগে।
হোয়াটস্যাপ : ৯৭৩৩৩৭৭৪৪৪
ইমেইল :[email protected] “
Best Deals starting from 149
Best Deals on BISS products
Best Deals starting from 129
Cases and Cover starting from 119
Offers on Pet Food
Backpacks and Travel Accessories from Fur Jaden starting Rs. 299
High On Features Low on Price: Smart Watches from Gionee & More