লায়ন মুহা.মীযানু্র রহমান (ঢাকা,বাংলাদেশ থেকে) : ঢাকায় অবস্থানের জন্য রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা বাদ দিয়ে কেন সোনারগাঁও হোটেলকে বেছে নিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি? এই প্রশ্নে জানা গেছে চমকপ্রদ তথ্য। আর তা হলো, পাঁচবছর আগে থেকেই প্রমাণিত সোনারগাঁও হোটেল ভারতের সরকার প্রধানের জন্য সব দিক দিয়ে সর্বোচ্চ নিরাপদ। ২০১১ সালে ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরের সময়ও এই হোটেলেই ছিলেন। মোদি যে সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করবেন তা গতমাসেই ঠিক হয়। ভারত থেকে আসা আগাম নিরাপত্তা দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা এবং সোনারগাঁও হোটেল পরিদর্শন করে বিভিন্ন সুবিধা যাচাইয়ের পর সোনারগাঁও হোটেলকেই প্রধানমন্ত্রী মোদির অবস্থানের জন্য চূড়ান্ত করেন। তবে তা গোপন রাখা হয়েছিল মোদির ঢাকা আসার আগের দিন পর্যন্ত। মোদির বাংলাদেশ সফরকে সামনে রেখে তাঁর অগ্রবর্তী নিরাপত্তা দল ঢাকায় আসে গত মাসের ১৭ তারিখ। তারা ঢাকায় এসে সোনারগাঁও হোটেলের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনের পর অতিরিক্ত কিছু নিরাপত্তা ডিভাইসের প্রস্তাব দিয়ে তা বসানোর ব্যবস্থা করে। এই দল তখন থেকেই ঢাকায় আছে এবং ধারাবাহিকভাবে দলে নতুন সদস্যরা যুক্ত হয়েছেন। সোনারগাঁও হোটেলের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মো. আযিম প্রতিবেদককে বলেন,‘রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের নিরাপত্তার জন্য সোনারগাঁও হোটেলের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। সেই নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা টিম পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা চূড়ান্ত করেছে। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও সোনারগাঁও হোটেলের নিরপত্তার বিষয়টি দফায় দফায় আগাম দেখভাল করা হয়েছে।’ সোনারগাঁ হোটেলটি ঢাকার তেজগাঁও এলাকার কারওয়ান বাজারে। আর এই তেজগাঁও জোনের পুলিশের উপ কমিশনার বিপ্লব সরকার এই প্রতিবেদককে জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় অবস্থানকালে তাঁর নিরাপত্তার দু’টি দিক আছে। একটি তাঁর চলাচল এবং অনুষ্ঠান ভেন্যু। আরেকটি তার দৈহিক নিরাপত্তা। তাঁর চলাচল এবং ভেন্যুর নিরাপত্তা বাংলাদেশ নিশ্চিত করছে। আর তাঁর দৈহিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের নিরাপত্তা দলের সদস্যরা প্রতি মুহূর্তে তথ্য বিনিময় এবং সমন্বয় রেখে ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। সোনারগাঁ হোটেলকে তাঁর অবস্থানের জন্য ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় পক্ষের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাই সবচেয়ে নিরাপদ মনে করেছেন। সোনারগাঁও হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, এর আগে ২০১১ সালের ৬ এবং ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফরের সময় ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও সোনারগাঁও হোটেলে ছিলেন। আর ২০১২ সালের ৫ ও ৬ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও ঢাকা সফরের সময় অবস্থানের জন্য সোনারগাঁও হোটেলকেই বেছে নেন। মোদির বাংলাদেশ সফরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ঢাকার একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা মোদির থাকার জন্য দু’টি আবাসস্থল প্রস্তাব করেছিলাম। একটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা এবং অপরটি সোনারগাঁও হোটেল। আর নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় সোনারগাঁও হোটেলই সর্বোচ্চ মান সম্পন্ন। কারণ এই হোটেলেও আগেও বিদেশি রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিরা এখানে অবস্থান করেছেন। হোটেলটি এই ধরনের ব্যক্তিদের নিরাপত্তার জন্য স্থাপনা, প্রযুক্তি এবং ফোর্সের দিক দিয়ে নিজস্ব একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে। যমুনায় থাকতে হলে অনেক কিছুই আপগ্রেড করার প্রয়োজন পড়ত। আর যোগাযোগ ও কৌশলগত দিক দিয়ে সোনারগাঁ হোটেলের অবস্থান সুবিধাজনক। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সার্বক্ষণিক আছেন ভারতের বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ‘ব্ল্যাক ক্যাট’-এর সদস্যরা। আর ভারত থেকে আগেই আনা বুলেট প্রুফ গাড়িতে করেই ঢাকায় চলাচল করছেন তিনি। রয়েছেন ভারতের স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ (এসপিজি)-এর সদস্যরা। উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব সরকার জানান,‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় বাংলাদেশের নিরাপত্তা টিমের সদস্যদের সঙ্গে ভারতীয় নিরাপত্তা টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিকভাবে থাকছেন। আর হোটেলের ভেতরে ভারতের নিরাপত্তা টিমেই মূল নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।’ জানা গেছে, মোদির নিরাপত্তার চূড়ান্ত স্তর অর্থাৎ তাঁর চারপাশে আছেন ভারতীয় ব্ল্যাক ক্যাট ও এসপিজি’র সদস্যরা।’ সোনারগাঁও হোটেলে মোট স্যুট এবং রুমের সংখ্যা ২৭৭টি। এর প্রায় সবগুলোতেই মোদি ও তাঁর সফরসঙ্গী কর্মকর্তা, নিরপাত্তা টিমের সদস্য এবং তাঁর সঙ্গে আসা সাংবাদিকরা অবস্থান করছেন। মোদির ঢাকা সফরের দিন চুড়ান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ৬ এবং ৭ জুন নতুন কোনও অতিথিকে রুম বুকিং দেওয়া হয়নি। আগে যারা বুকিং দিয়েছেন শুধু তারাই এই সময়ে হোটেলে আছেন। তবে তাঁদের সংখ্যা অল্প। তবে থাকতে পারলেও এই দুই দিন তাদের চলাচলের ওপর বেজায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। তল্লাশি ছাড়াও তাদের পায়ে হেঁটে হোটেল ঢুকতে এবং বের হতে হচ্ছে। এই দুইদিন কোনও পাবলিক অনুষ্ঠানও বুকিং নেয়নি হোটেল কর্তৃপক্ষ। সোনারগাঁও হোটেলের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মো. আযিম বলেন,‘আমাদের সব স্যুট এবং রুম আগে থেকেই বুকড, তাই এই দুইদিনে বুকিং-এর কোনও সুযোগ নেই।
কেন বেছে নিলেন সোনারগাঁও হোটেলকে
রবিবার,০৭/০৬/২০১৫
709