ডায়াবেটিস ও তার সম্পূর্ন সমাধান


বুধবার,১৮/১০/২০১৭
1543

‌ডি‌জিটাল ডেক্স: ডায়াবেটিস হলে রক্ষা নেই! একটা সময়ে এমন মনে হতো অনেকের। কিন্তু জীবনযাপনে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনলে এই রোগকেও প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দুঃখের বিষয় মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ইদানীং দ্রুত বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। এই অঞ্চলগুলোতে দ্রুত নগরায়ণ ও জীবনযাপনপদ্ধতির পরিবর্তনও হচ্ছে বেশ দ্রুত। দেখা গেছে ৬৫ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীই শহরে বাস করে। বংশগত ও জীবনাচরণপদ্ধতি ডায়াবেটিসের দুই অন্তর্নিহিত কারণ। চাইলেও বংশগত বা জেনেটিক বিষয়টি থেকে পরিত্রাণ নেই। তাই জীবনযাপনে আমূল পরিবর্তন ও সংশোধনই পারে এই সমস্যা থেকে রক্ষা করতে।

Affiliate Link কলকাতার খবর | Kolkata News

ডায়াবেটিস কী, কেন?
আমাদের শরীরে শর্করা ও চর্বির বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে গুরুত্বপূর্ণ হরমোন ইনসুলিন। এই হরমোন অগ্ন্যাশয় থেকে ঠিকমতো নিঃসৃত না হলে বা শরীরের কোষে ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে বিপাক ক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দেয়, যার ফল ডায়াবেটিস। টাইপ ১ ডায়াবেটিস, যা মূলত কম বয়সে হয়ে থাকে। তাতে অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করার ক্ষমতা হারায়। কিন্তু এদের বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন অপরিহার্য।
তবে বিশ্বজুড়ে ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিসই হলো টাইপ ২ ডায়াবেটিস, যা বয়স্কদের হয়ে থাকে। স্থূলতা বা ওজন বৃদ্ধি, মন্দ খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, মানসিক চাপ, ধূমপান ইত্যাদি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম ঝুঁকি। বর্তমানে একই সঙ্গে বাড়ছে নারীদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জিডিএমের প্রবণতা। আর এর বিশাল নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরবর্তী প্রজন্মের ওপর। এই দুষ্ট চক্র ভাঙতে হলে চাই সঠিক জীবনযাপন সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা।

পাল্টে ফেলুন নিজেকে

  • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কেবল ডায়াবেটিস নয়, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, রক্তে চর্বির আধিক্য, স্ট্রোক এমনকি ক্যানসার ইত্যাদি নানা জটিল ঘাতক রোগের জন্য দায়ী। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ করাটা জরুরি। একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির সঠিক ওজন তাঁর উচ্চতা অনুযায়ী পরিমাপ করা হয়। ওজন ও উচ্চতার পরিমাপকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় বিএমআই বা বডি মাস ইনডেক্স। আপনার বিএমআই কত এবং সঠিক ওজন কত হওয়া উচিত, তা জেনে নিন।
  • ওজনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ আপনার পেট বা ভুঁড়ির মাপ। এশীয় পুরুষদের ক্ষেত্রে পেটের মাপ সর্বোচ্চ ৯০ সেন্টিমিটার ও নারীদের সর্বোচ্চ ৮০ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত। এর বেশি হওয়াটাই বিপজ্জনক।
  • ডায়াবেটিস বা এর ঝুঁকি থাকলে খাদ্যতালিকা থেকে সহজ শর্করা, যেমন: চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার, জুস, কোমল পানীয়, গুড় ইত্যাদি বাদ দিন। জটিল শর্করা যেমন: লাল চাল বা লাল আটা, ওটমিল ও গোটা শস্যের তৈরি খাবারের শর্করা ধীরে ধীরে রক্তে মেশে, ফলে রক্তে শর্করা বাড়ায় না। ওজনও বাড়ায় না।
  • সম্পৃক্ত চর্বি যথাসম্ভব পরিহার করুন। এগুলো হলো ঘি, মাখন, গরু ও খাসির মাংসের চর্বি ইত্যাদি। এ ছাড়া ফাস্ট ফুড ও বেকারির খাবারে থাকে ট্রান্স ফ্যাট; উচ্চ তাপমাত্রায় উদ্ভিজ্জ তেলের গঠন পরিবর্তিত হয়ে এই ট্রান্সফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। এটিও অত্যন্ত ক্ষতিকর।
  • নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন শাকসবজি, খোসাসহ ফলমূল, ননীহীন দুধ বা টকদই, বাদাম, মাছ ইত্যাদি।
  • একসঙ্গে অনেক বেশি খেয়ে না ফেলে বরং সারা দিনে অল্প অল্প করে খাবার অভ্যাস করুন। সকালের স্বাস্থ্যকর নাশতার বিকল্প নেই। নাশতা না খেয়ে কখনোই কাজে বেরোবেন না। সময়মতো প্রতিটি খাবার পরিমাণ অনুযায়ী খেয়ে নিন।
  • সারা দিনে যা-ই খান না কেন, ব্যায়াম বা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে তার ক্যালরি ক্ষয় করে ফেলতে চেষ্টা করুন। চিকিৎসকেরা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট দ্রুত হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন। এক-চতুর্থাংশ মানুষ কেবল শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়ামের পাশাপাশি গেরস্থালি কাজে অংশগ্রহণ, বাগান করা, হেঁটে বাজার করা, বাড়িতে-অফিসে সিঁড়ি ব্যবহার করা, প্রতিটি কাজে যানবাহন না ব্যবহার করে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
  • শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। সারা দিন টিভি দেখা ও কম্পিউটার ব্যবহারের প্রবণতার চেয়ে বাইরে গিয়ে খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সাঁতার, বাইসাইকেল চালনা ইত্যাদিতে উৎসাহ দিন।
  • ডায়াবেটিস রোগীরা বাড়িতে গ্লুকোমিটার ব্যবহার করে সপ্তাহে অন্তত এক দিন নিজের শর্করা নিজে পরিমাপ করবেন। বছরে অন্তত দুই বা তিনবার ল্যাবরেটরিতে রক্তে শর্করার গড় (এইচবিএওয়ান সি), কিডনি কার্যকারিতা দেখার জন্য প্রস্রাবে আমিষ ও রক্তে ক্রিয়েটিনিন, রক্তে চর্বি বা কোলেস্টেরলের মাত্রা ইত্যাদি রুটিন পরীক্ষা করে নেবেন। সেই সঙ্গে বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করাবেন, চিকিৎসককে দেখাবেন পায়ের অনুভূতি ও রক্ত চলাচল কেমন আছে সে অবস্থা। কেননা, ডায়াবেটিস থেকে চোখ, কিডনি, হৃদ্যন্ত্র ও পায়ের জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের পাশাপাশি চিকিৎসক আপনাকে ওষুধ বা ইনসুলিন ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন। সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় এসব ব্যবহার করুন, তবে জেনে রাখুন এর মাত্রা বারবার পরিবর্তিত হতে পারে। তাই নিয়মিত আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।
  • রক্তে শর্করা হঠাৎ কমে গেলে কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন: খুব ঘাম হওয়া, হাত কাঁপা, বুক ধড়ফড় করা, চোখে ঝাপসা দেখা এমনকি রোগী অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এ রকম উপসর্গ দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে ফলের রস, চিনি মেশানো শরবত বা চকলেট খেয়ে নিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমন সমস্যার পেছনে একটা সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে; যেমন: খাবার খেতে দেরি, অতিরিক্ত পরিশ্রম, অতি মাত্রার ওষুধ বা ইনসুলিন, কিডনি বা যকৃতের সমস্যা ইত্যাদি। সঠিক কারণটা নির্ণয় করে পরবর্তী সময়ে আরও সাবধান হতে হবে।

ডায়াবেটিস ও বংশগত ঝুঁকি

উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ ইত্যাদি রোগের মতো ডায়াবেটিসও পারিবারিক বা বংশগতভাবে বাহিত হয়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রযোজ্য। মা-বাবা যে কারও একজনের থাকলে আপনি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন, আর যদি দুজনেরই থাকে, তবে সে আশঙ্কা অনেক গুণ বেড়ে যায়। পরিবারে ডায়াবেটিস থাকলে নারীদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

কারও যদি পরিবারে বাবা-মা কিংবা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস থাকে, তবে কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন:
* বংশগত বিষয়টি যেহেতু এড়ানো সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে অন্য ঝুঁকিগুলো কমিয়ে ফেলতে চেষ্টা করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন, কম বয়স থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন, নিয়মিত কায়িক শ্রম করুন। এতে ঝুঁকি অনেকটা কমে আসবে।

* ৩৫ বছরের পর থেকে বছরে অন্তত একবার ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করুন। এর মধ্যে কোনো লক্ষণ দেখা গেলে (যেমন: ওজন হ্রাস, দুর্বলতা, পিপাসা বৃদ্ধি বা ঘন ঘন প্রস্রাব ইত্যাদি) অবশ্যই রক্তে শর্করা পরীক্ষা করে নিন।

* বিশেষ করে পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে এমন কেউ সন্তান ধারণের আগে সম্ভব হলে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করে নিন। গর্ভধারণের পর ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই রক্তে শর্করা পরীক্ষা করতে হবে।

Affiliate Link Earn Money from IndiaMART Affiliate

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট