উলুধ্বনি ও ঢাকের তালে বঙ্গমেলার শুভসূচনা হয় হায়দ্রাবাদে


মঙ্গলবার,২৪/০৭/২০১৮
624

ফারুক আহমেদ ---

জীবনের প্রয়োজনে, জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ পাড়ি দেয় বহুদূর, কিন্তু বুকের মধ্যে বয়ে বেড়ায় তার ভাষা ও সংস্কৃতি। নিজের সংস্কৃতির প্রতি সেই ভালবাসা থেকেই একদল বাঙালি হায়দ্রাবাদের বুকে গড়ে তুলেছিলেন ‘The Bengali Circle’ নামের একটি দল যাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা সংস্কৃতির চর্চা।

Affiliate Link কলকাতার খবর | Kolkata News

তাদেরই উদ্যোগে হায়দ্রাবাদের অন্যতম সাংস্কৃতিক পীঠস্থান শিল্পরমম্-এ অনুষ্ঠিত হলো দু’দিন ব্যাপী বঙ্গমেলা। যেখানে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিলিত হয়েছেন বহু বাঙালি সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিল্পগোষ্ঠী।

নাচ, গান, নাটকের পাশাপাশি ছিল রসনাতৃপ্তির আয়োজন। ২১ জুলাই সন্ধ্যা ৬ টায় উলুধ্বনি ও ঢাকের তালে বঙ্গমেলার শুভসূচনা হয়। দুদিন ব্যাপী এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বহু শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দ। তাঁদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা বঙ্গমেলাকে আরও প্রানবন্ত করে তুলেছিল।

কলকাতা থেকে এই মেলায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট শিল্পীদের মধ্যে নজরুল সংগীত শিল্পী সোমঋতা মল্লিক। তাঁর কন্ঠে “আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছিল।

হায়দ্রাবাদে এরকম একটি মেলা করতে পেরে স্বভাবতঃ খুশী আয়োজকরা। বড়োদের পাশাপাশি কচিকাঁচাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলা সংস্কৃতির উত্তরাধিকার বহন করেছিল এই সব কচিকাঁচারা। বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বাইরের রাজ্যে গিয়ে তুলে ধরতে পেরে বিশিষ্ট শিল্পীদের মধ্যে নজরুল সংগীত শিল্পী সোমঋতা মল্লিক দারুণ ভাবে প্রাণিত হয়েছেন।

একটি দেশের সংস্কৃতি সেই জাতির পরিচয় বহন করে। জাতিগতভাবে বাংলার একটি নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। সেটাই আমাদের পরিচয়। সংস্কৃতি মানুষকে পরিবর্তন করে, না মানুষ সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করে, এ নিয়ে ব্যাপক ধোঁয়াশা থাকলেও। এ কথা সবাই মানতে বাধ্য মানুষ এবং সংস্কৃতি সহ অবস্থান করে। সে ক্ষেত্রে সংস্কৃতি মানুষের উপর কতক প্রভাব ফেলতে পারে, আবার মানুষ সংস্কৃতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রভাবের ধরণ সবসময় কল্যাণকর কিংবা কাম্য হয় না। প্রায়ই হয়তো সেটা হয়ে উঠে আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ। বিশ্বায়নের সময়ে আছি আমরা। খুব সহজেই এখন সাংস্কৃতিক বিনিময় হচ্ছে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, স্যাটেলাইট চ্যানেল ইত্যাদি অনুষঙ্গ আমাদের মুহুর্তেই জানিয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর অন্য প্রান্তের খোঁজ-খবর, তাদের চিন্তা-ধারণা, সেখানকার জীবনাচরন। কখনো কখনো আমরা নিয়ে নিচ্ছি তাদের সাংস্কৃতির অনেক অংশই। এটা হবেই। এবং এটা সহজ ও স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক এবং বৈশ্বিক ব্যাপারই কখনো হয়ে উঠে আত্মঘাতি। যখন কোন সংস্কৃতি অন্য সংস্কৃতির উপর প্রভাবক হিসেবে চেপে বসে এবং সেই সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নিতে চায়, তখনই আমরা তাকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বলছি।

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন শব্দটি ইদানীংকালে খুব বেশি শোনা যাচ্ছে। এর কারণ বাংলার সংস্কৃতিতে বিদেশি সংস্কৃতি মিশে এক মিশ্র সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাব এতটাই যে মাঝে মাঝে স্বকীয়তা খুঁজে বের করতেই কষ্ট হয়। বিদেশি সংস্কৃতি ভালবাসতে গিয়ে নিজের সংস্কৃতি হারাতে বসেছি। ভিনদেশীয় সংস্কৃতি আমাদের ওপর এতবেশি প্রভাব বিস্তার করছে যে আমরা কখনো কখনো যেন ঐ সংস্কৃতির দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি। আমাদের জাতীয় জীবনে মূল্যবোধের অবক্ষয়েরও এটি অন্যতম কারণ।

আগ্রাসনের ব্যাপারটি বুঝতে পারার জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে সংস্কৃতি কাকে বলে, সেটা জেনে নিতে পারি। সংস্কৃতি বা কৃষ্টি শব্দের আভিধানিক অর্থ চিৎপ্রকর্ষ বা মানবীয় বৈশিষ্ট্যের উৎকর্ষ সাধন। সংস্কৃতিকে ইংরেজিতে বলা হয় Culture, এ শব্দটি ল্যাটিন Colere থেকে এসেছে। ইংরেজি Culture-এর প্রতিশব্দ হিসেবে সংস্কৃতি শব্দটি ১৯২২ সালে বাংলায় প্রথম ব্যবহার করা শুরু হয়। এর অর্থ হল-চাষাবাদ বা কৃষিকাজ।

সংস্কৃতি শব্দটি সংস্কার থেকে গঠিত। অভিধানে তার অর্থ- কোন জিনিসের দোষ ক্রটি বা ময়লা-আবর্জনা দূর করে তাকে ঠিক ঠাক করে দেয়া। বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী ম্যাকাইভার সংস্কৃতি সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছেন- Culture is what we are or have i আমরা অথবা আমাদের যা কিছু আছে তাই আমাদের সংস্কৃতি। সংস্কৃতির মূল কথা নিজেকে সুন্দর করা, সভ্য করা। প্রেম ও সৌন্দর্য সংস্কৃতির মূল আশ্রয়। এ আশ্রয় থেকে বিচ্যুত হলে সংস্কৃতি ধ্বংস হয়।

এক সমাজ বিজ্ঞানী বলেন- Man dies when his heart fails and a nation dies when its culture dies. মানুষ মৃত্যুবরণ করে যখন তার হৃদযন্ত্রেও ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক তেমনি একটি জাতির ও মৃত্যু ঘটে, যখন তার সংস্কৃতিকে হারিয়ে ফেলে। কোন স্থানের মানুষের আচার-ব্যবহার, জীবিকার উপায়, সঙ্গীত, নৃত্য, সাহিত্য, নাট্যশালা, সামাজিক সম্পর্ক, ধর্মীয় রীতি-নীতি, শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করা হয়, তাই সংস্কৃতি।

বাঙালি সংস্কৃতির ভিত্তি  বঙ্গীয় সংস্কৃতি যেহেতু বাংলাদেশ এবং বাংলাভাষীদের সংস্কৃতি, সে কারণে ‘বাঙ্গালা’ নামে একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল গড়ে ওঠার আগে অথবা বাংলা ভাষা পুরোপুরি বঙ্গীয় বৈশিষ্ট্য লাভ করার আগেকার আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে বাঙালি সংস্কৃতি বলে অন্তত তত্ত্বগতভাবে আখ্যায়িত করা যায় না। আবার এও স্বীকার্য যে, সুলতানি আমলের বাঙ্গালা রাজ্য অথবা বাংলা ভাষা গড়ে ওঠার মুহূর্ত থেকে বাঙালি সংস্কৃতির জন্ম হয়নি। বঙ্গীয় সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ে উঠেছিলো আরো অনেক আগে থেকে।

বাংলার সংস্কৃতি বলতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলার গণমানুষের সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য, ভোজনরীতি, পোষাক, উৎসব ইত্যাদির মিথষ্ক্রীয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলার স্বকীয় কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে আলাদা করার প্রয়াস পাওয়া যায়।

বঙ্গীয় সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্যের কারণ ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য সংস্কৃতির সঙ্গে যথেষ্ট মিল থাকলেও, বঙ্গভূমির ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং বিবিধ নৃতাত্ত্বিক সংমিশ্রণের ফলে এর সংস্কৃতি নিজস্বতা লাভ করেছে। এর অবস্থান দীর্ঘদিনের শাসনকেন্দ্র দিল্লি থেকে শত শত মাইল দূরে ভারতীয় উপমহাদেশের একেবারে এক প্রান্তে। ধর্ম, দর্শন ও ধারণা, সাংস্কৃতিক ধারা ও শাসনকাঠামো– যা কিছু এই প্রান্তিক ভূখন্ডে এসে পৌঁছেছে, তা-ই অল্পকালের মধ্যে বঙ্গীয় চরিত্র দিয়ে প্রভাবিত হয়েছে। তদুপরি জালের মতো বিস্তৃত নদী-শাখা নদী এবং বনভূমি-পরিপূর্ণ বঙ্গদেশ আবার বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, ফলে এসব অঞ্চলেও সংস্কৃতি খানিকটা স্বাতন্ত্র্য লাভ করেছেন। এসব উপ-সংস্কৃতিও জাতি, ধর্ম, বর্ণ, এবং বহু উপভাষার কারণে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। বাংলাদেশ বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মূল চর্চাক্ষেত্র হিসেবে উঠে এসেছে বিশ্বময়। এপার বাংলাকে অনেকটাই পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ।

Affiliate Link Earn Money from IndiaMART Affiliate

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট