বাংলাদেশের ঢাকা খেলাধুলার ক্লাবগুলোর অন্তরালে অবৈধ ক্যাসিনোর রমরমা ব্যবসা


সোমবার,২৩/০৯/২০১৯
827

মিজান রহমান, ঢাকা : বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের খেলাধুলার ক্লাবগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর একের পর অভিযান প্রমাণ করছে যে এসব ক্লাবে নানা ধরণের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। সম্প্রতি যেসব ক্লাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হানা দিয়েছে, সেসব ক্লাব ঢাকার ক্রীড়াঙ্গনে একসময় বেশ পরিচিত এবং শক্তিশালী নাম ছিল। এসব ক্লাবের সাথে জড়িত বহু ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। ক্রীড়া সংগঠকরা বলছেন, ঢাকায় নব্য ধনিক শ্রেণী গড়ে ওঠার সাথে সাথে তারা ক্লাবগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নিজদের বিত্ত-বৈভব প্রদর্শন শুরু করে। একসময় খেলাধুলার সাথে জড়িত নিবেদিতপ্রাণ অনেকেই ক্লাবগুলো থেকে বিদায় নিয়।

১৯৯৯ সালে ঢাকার ব্রাদার্স ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন স্থপতি ও ক্রীড়া সংগঠক মোবাশ্বার হোসেন। তিনি বলেন, ক্লাবগুলো থেকে নিবেদিতপ্রাণ ক্রীড়া সংগঠকদের বিদায়ের কারণে বাংলাদেশে নতুন প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না। মোবাশ্বার হোসেনের ভাষায়, ‘দেখেন আমি স্কুলের টিচার বানালাম সেই ব্যক্তিকে, যার টাকা অনেক আছে কিন্তু লেখাপড়া নাই। তাহলে ওই স্কুলের অবস্থাটা কী দাঁড়াবে? স্কুলের বিল্ডিং সুন্দর হবে, দামী-দামী ফার্নিচার আসবে, কিন্তু ছাত্র তৈরি হবে না। প্রত্যেকটি ক্লাবে এখন খেলাধুলা হয় পাতানো সিস্টেমে। অর্থাৎ যে যত টাকা ইনভেস্ট করেছে তার ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করতে হবে। পাতানো খেলা দুর্বিষহ অবস্থায়।’ সংগঠকদের অভিযোগ হচ্ছে, ক্রীড়াঙ্গনে নাম ক্রয় করা খুব সহজ। একটি ক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে খেলাধুলার সাথে জড়িত থাকার প্রয়োজন নেই।

এটি হচ্ছে দ্রুত পরিচিতি হবার একটি রাস্তা। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবের মাঠে এখন খেলাধুলার কোনো সুযোগও থাকে না। এসব ক্লাব পরিচালনার সাথে সম্পৃক্তরা নিজেদের আর্থিক সুবিধার জন্য বছরের অধিকাংশ সময় ক্লাবের মাঠ নানা কাজের জন্য ভাড়া দেন। এই অবস্থা শুধু বড় ক্লাবগুলোতে নয়, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা খেলাধুলার ক্লাবগুলোতেও একই অবস্থা। ফলে ক্লাব সংস্কৃতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক ক্রিকেটার বলেন, ‘অনেক ক্লাবে খেলার পরিবেশ ধ্বংস করে তৈরি হয়েছে অপরাধের আখড়া।’ ১৯৮০’র দশকে ঢাকার ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিত মুখ ছিলেন কামরুন্নাহার ডানা। তিনি ব্যাডমিন্টন এবং টেবিল টেনিস খেলতেন। পরবর্তীতে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি এমন সংগঠকও দেখেছি যারা বৌয়ের গয়না বিক্রি করে প্লেয়ারদের টাকা দিয়েছে।

যে কোনদিন খেলাধুলার সাথে জড়িত ছিলনা, সে কোনদিন খেলোয়াড়দের ভালোর বিষয়টা চিন্তা করবে না। তারা আসবেন শুধু নিতে, দিতে নয়।’ যে ক্লাব খেলাধুলায় মগ্ন থেকে দেশের সুনাম কুড়ানোর কথা, সেই ক্লাবগুলোতে বসতো অপরাধের আসর। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার অনেক ক্লাব এখন অপরাধীদের দখলে এবং তাদের পেছনে কিংবা সামনে রয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। খেলাধুলার এসব ক্লাব যারা পরিচালনা করেন তাদের অনেকেই খেলাধুলার সাথে জড়িত নয় – এমন অভিযোগও বেশ জোরালো। ক্রীড়া সংগঠকরা বলছেন, ক্লাবগুলোতে ওয়ান-টেন জুয়া খেলা প্রচলনের সাথে-সাথে এগুলোর চরিত্র আমূল বদলে যেতে শুরু করে। তাছাড়া একটি ক্লাবের শীর্ষ পদে যেতে পারলে স্থানীয়ভাবে সে ব্যক্তির বাড়তি প্রভাবও তৈরি হয়। মোবাশ্বার হোসেন বলেন, ‘দেখা যায়, আগে হয়তো আয় হতো ১০ লাখ টাকা আর এখন হয় ১০ কোটি টাকা। এটা প্রটেক্ট করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিরা। তখন ক্লাবগুলোতে হাউজি খেলার আড়ালে ওয়ান-টেন নামের একটি বিধ্বংসী জুয়ার আয়োজন করা হতো। আমি দেখেছি গ্রামের লোকদেরকে দালালরা নিয়ে আসত। এরপর এখানে জমি-জমা দলিল করে দিয়ে বের হয়ে যেত। সেজন্য আমি দায়িত্ব নেবার পর ব্রাদার্স ক্লাবে হাউজি এবং ওয়ান-টেন খেলা স্থায়ীভাবে বন্ধ করেছিলাম। এই ওয়ান-টেন জুয়া খেলে বহু মানুষ পথের ফকির হয়ে গেছে।’ সূত্র বিবিসি।

Affiliate Link Earn Money from IndiaMART Affiliate

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট