ধানসিঁড়ি গল্প – (প্রথম পর্ব)


বৃহস্পতিবার,১২/১২/২০১৯
3818

ধানসিঁড়ি গল্প
প্রথম পর্ব
এসকেএইচ সৌরভ হালদার

জীবনে অনেক কষ্ট ছিল এবং দুঃখ ছিল । কিন্তু জীবন নামে যে গল্পটা সেই গল্পে যে একটা প্রেম ছিল সেটা জানা ছিলনা। অধ্যায়টা ছিল প্রথম কিন্তু শেষ হয় যে এই ভাবে কাটবে সেটা আমি আগে কখনো ভাবেনি। একটু একটু করে যখন অধ্যায়টা বিশাল বড় হতে শুরু করল।

কোথাও যেন একটু আটকে গেলাম শুধু সীমাহীন দুঃখের মাঝে। কখনো কান্না আবার কখনো ভালোবাসা হারিয়ে যাও একটা মুহূর্ত।শুরু করলাম সেই প্রথম অধ্যায়ের একটি কাহিনী।

স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত অনেক কিছুই আমি দেখেছি ।এই নিয়ে লিখেছেন কিন্তু প্রকাশ করেনি কখনো কারোর মাঝে। পেশা কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে কবিতা লিখি না আমি। তবে মাঝে থেকে দেখা আর ভালবাসার প্রথম থেকে অনুভব করার এক আবেগ অনুভূতি সেটা কি আমি মনে করি একটু স্মৃতি, যেটা হয় ভালোবাসার জন্য।

কোথায় জানি একটি কাহিনীর ভেতর আমি দেখতে পায় ছোট ছোট শিশিরবিন্দু যেটা হয়তো টিপটিপ করে পড়তে থাকবে কিন্তু কখনো একসঙ্গে জড়ো হয়েছে অনেকদূর গড়িয়ে যাবে জলের মতো সেটা হয়তো কারো জানা নেই। একইভাবে আমার ভালবাসাটাকে এইভাবে গড়িয়েছিল অনেক দূরে কিন্তু তার একসঙ্গে পাওয়া যায়নি কখনো।

-হ্যাঁ আমি যেটার কথা বলছি সেটা হলো ভালোবাসা

শুনেছি নচিকেতার কন্ঠে ভালোবাসা নাকি বদলে যেতে পারে মানুষের জীবন টাকে।তবে ভাবি নি কখনো এটা সত্য হবে কারণ আমি বিশ্বাসই করতাম না ভালোবাসা নামে একটা অনুভুতি আছে।

__ কে জানি কোথাও একদিন এই ভালবাসায় চেপে বসবে আমার জীবন।

সেদিন ছিল রবিবার। আমি বাংলাদেশের স্বনামধন্য কলেজে পড়ি। সব সময় ভাবি বন্ধুরা আমাকে বলে

_ পেলি না কাউকে এ জীবনে। তাহলে আর বুঝবি কিভাবে ভালোবাসা কাকে বলে।

_আমি বলি এইতো বেশ ভালো আছি তোদের নিয়ে খুব খুশিতে আছি এর থেকে আর কত ভালোবাসা চায়।

_সবাই হেসে উঠলো আর বলল ‘তোর কবিতাও বুঝি এইভাবে রচিত করিস?

__হ্যাঁ এই ভাবেই কিন্তু কোথাও যেন লুকিয়ে থাকে তোদের ভালোবাসা যা থেকে আমি রচিত করি একটু একটু করে আশা। উপন্যাস কিংবা মহাকাব্য লিখতে পারি না তবে চেষ্টা করি একটি গল্প লেখার যেটা তোদের ভিতরে ঘটে যাওয়া জীবনের প্রতিটি অংশ যেন জড়িয়ে থাকে। সেই গল্প যেন তোদের একটি জীবন আবদ্ধ করে আছে আমার এই গল্পে।

বসে থাকা নিলয় বলে উঠলো

হ্যাঁ হেসেই উড়িয়ে দিলাম কিন্তু বুঝলাম না তোর কথা কখন কি বলিস তোদের কবিদের কথা বুঝাই যায়না।

বুঝবে যেদিন প্রেমে পড়বি সেদিন বুঝবি প্রেম কাকে বলে ?জ্বালিয়ে ছাড়বে জীবনটাকে তবে যদি ভালোবাসা মজবুত হয় তাহলে আর বুঝবি না ।তবে প্রেম আর কি প্রেম তখন অনুভূতি তাকেই তোকে সাড়া দিবে।

__হ্যাঁ বুঝে নেব। যতসব ফাজলামি করিস

—–

এই গল্পটা এখানে শেষ হবে কিনা জানিনা তবে কলেজ জীবনটা হয়তো এখানেই শেষ হয়ে গেল দুই বছর কিছু বন্ধুদের সাথে কাটানো কয়েকটি মুহূর্ত যেন এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল কিছু বুঝতে পারলাম। সেই ওসমান কফিশপ থেকেই এক কপি ইচ্ছা আর বন্ধুদের মিলে আড্ডা দেওয়ার দিনগুলো যেন গিটারের বাজনা একা এক সুরেই যেন মিলে গেল বাতাসে।

তবে দিনগুলোর কথা মনে পড়লে কিছু স্মৃতি আর কিছু বন্ধুদের সাথে মিশে থাকা ভালোবাসা এখনো হৃদয়ে কম্পন করে ওঠে। কখনো ভাবিনি একটা চিঠি লেখার মত হয়তো আমার এই জীবনটা ।

প্রথমে কিছু স্বাগতম আর প্রিয় লিখে শুরু জীবনটা ঐরকম ছোটবেলা থেকে কিছু আনন্দ ভালোবাসা পেয়ে মা-বাবার মধ্যে বড় হওয়া। আর এক অফুরন্ত ভালোবাসা তারপর থেকে হয়তো কোথাও কষ্ট শুরু হবে আবার কখনো ভালোবাসা। কখন থেকে কি হয় কেউ জানে না তারপর জীবনের শেষ হয়ে গেলে ইতিতে।

এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। এখন আমি শহরে থাকি। শহরের অলিগলিতে আমি ভালভাবে চিনি না তবে মূর্খতা ও করিনা। প্রতিদিনের মতো ক্লাস করে আজও আমি বাড়ি ফিরছি দুপুর দুই টায়। কাঁধে একটি ব্যাগ ।হাতে স্মার্টফোন যেটা না ব্যবহার করলে আধুনিক হওয়া যায়। কতটা হাস্যকর হলেও এটাই বাস্তবতা।

রিক্সা না পেয়ে আমি হেটে চলেছি আমার গন্তব্য স্থানে। অনেকদূর হাঁটতে হাঁটতে আমি খুবই ক্লান্ত। দূর থেকে দেখলাম একটা কফি শপ।মনে পড়ে গেল আমার সেই পুরনো দিনের কলেজের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার কথা। ভেবে চলেছি মনে করে আর কি লাভ। এখন একটু লস করেই একাকী কফি খেয়ে নি। ফিরে যাওয়া দিনগুলো আর ফিরে আসবেনা।

কফিশপে ঢুকে যখন আমি কফি তে চুমুক দিচ্ছি। তখন আবার পাশে দেখলাম কিছু মেয়ের ঝাঁক।এরকমটা আমাদের গ্রামে আছে চৈত্র মাসে ধান কাটার পরে সেই ধানসিঁড়ি নদীর ওপারে মিশে থাকা কিছু পাখির ঝাঁক ঠিক সেরকমই। ওর খুব দেখে ভালো লাগলো ওরা অন্য মেয়েদের মত নয়। অত্যন্ত সুন্দর বললেও বলা যেতে পারে। মনে মনে ভাবছি আর হাসিছি।

এমন সময় একটি মেয়ে সে বলল এই যে, কি ওদিকে তাকিয়ে আমাদের তো ভরসো করে দিবে।

__ আমি বললাম ভর্সো করতে পারব আর কই তবে ভাল তো বাসতে পারবো।

মেয়েটি লজ্জা পেয়ে চলে গেল। তারপর দেখলে ওদের মধ্যে আমার নিয়ে হয়তো আলোচনা করছে। এইভাবে এই খানে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না হয়তো কোন ঝামেলা হতে পারে।ভেবেছিলাম ঝামেলাটা এখানেই শেষ হবে কিন্তু জানতাম না এটা মেয়েটিও আমার সঙ্গে ওই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।

পরদিন সকালে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে যখন ক্যাম্পাসে আমি আমার এক বন্ধুর সাথে ঘোরাফেরা করছি। তখন দেখি ওই মেয়েটা এবং ওর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আরও কিছু।

আমি তো দেখেই অবাক ওরা এখানে কি করছে?

নিজেকে প্রশ্ন করে উত্তর খুঁজে না যখন না পেলাম। তখন আর উত্তরটাও খুঁজতে গেলাম না। কিন্তু উত্তরটা এত সহজে মিলে যাবে আগে ভাবি নি। আমার বন্ধু আমাকে বলল

__তুই একটু এই বেঞ্চে বসতে লাগে আমি ইলিয়াস স্যার সাথে কথা বলে আসছি। ইলিয়াস স্যার আমাদের ব্যবসা বিভাগের অধ্যাপক।

আমি বললাম “আচ্ছা ঠিক আছে যা আর একটু তাড়াতাড়ি আসিস তোর কথা বলা শুরু হলে আর থামেই না”।

আমি একাকী যখন বেঞ্চে বসে আছি তখনও মেয়েটি এসে বসলো।

কি ? কেমন আছেন?

__ভালো তুমি খানে কি করছো?

আপনি যা করছেন?

মানে!

আপনি খানের লেখাপড়া করতে পারছিনা আমি ও।

আগের দিন আমাকে কি বলছিলেন।

ভাবছিলেন ছাড়া পেয়ে যাবে আমি জানতাম যে আপনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আর আমার বন্ধুদের সামনে আপনাকে কিছু বলতে চাই আমার সঙ্গে প্রেম করার কথা বলছিলেন।

__না মানে আমি একটু মজা করছিলাম।

মজা! দেখুন আমি এখন আপনাকে কি করি?

__ভয় দেখাচ্ছেন

না ভয় দেখাবো কি জন্য?

মজা করছি!

__হুম! আপনি পারবেন তো।

কি?

__মজা করতে

-আপনি খুবই চালাক।

-আপনার মত অতটা না

কখনো প্রেম করেছেন

না তবে চেষ্টা করি

এখনো করছেন না কাউকে পেয়েছেন।

পেয়েছি বলতে তাকে দেখেছি দূর থেকে কিন্তু কাছে এসে দেখি সেই তো রজনীগন্ধা আগে অপরিচিত এখনো পরিচিত শুধু গন্ধটা আলাদা।

খুব সুন্দর করে কথা বলেন। কে সে ভাগ্যবতী মেয়ে টি?

আপনি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করেন

না আবার করি

মানে

আসলে আমার ভাগ্যটা কখনো খারাপ কখনো ভালো আমি নিজেই বুঝতে পারি না এজন্য বললাম “না আবার করি”

ওহ!

নিলয় দূর থেকে ডাকছে বাসায় যেতে।

আপনাকে ডাকছি আপনার বন্ধু যাবেন না।

আপনি ছাড়লে তো যাবো।

মানে

আপনি উড়নির আঁচল আমার ঘড়িতে বেঁধে গিয়েছি।

ওহো আমি খুবই দুঃখিত এখনই চালিয়ে দিচ্ছি

এজন্য আপনাকে দুঃখ পেতে হবে না।

হাসালেন বটে।

আমি চলে যাচ্ছি

তবে আমি কিন্তু শুনে ছাড়বো আপনি কার প্রেমে পড়েছেন আজ না হয় কাল আপনাকে বলতেই হবে

আছে দেখা যাবে

ওকে বাই

——

নিলয় চল

এভাবে কেটে গেল আজকে দিনটা ।

তবে ভাবছি আমি ওকে বলবো কিনা?

ও বুঝতে পারছে না যে আমি ওকে ভালবাসি আর ওকে কথার ছলে ভুলাচ্ছি।

কি করে যে বোঝায়

ফোন বাজছে আবার। এখন আবার কে ফোন দিল।

হ্যালো কে বলছেন

কি বলছি সেটা বড় কথা না তুই কেমন আছিস সেটা বল।

আরে দোস্ত অনেকদিন পর।

অন্য নম্বর দিয়ে কতগুলি তো এজন্য বুঝতে পারি নাই।

কোন সমস্যা নেই বল কেমন আছিস।

এইতো বেশ ভালো আছি।

আমি আসছি বুঝলে জন্য তোকে কল দিলাম।

আচ্ছা আয় ঘুরে যা

ঠিক আছে কাল সকাল দশটায় দেখা হবে আমাকে নিতে আসিস রেলস্টেশনে।

হ্যাঁ নিতে আসবো তুইতো আবার মিনিস্টার তোকে না আসলে কাকে নিতে আসব।

তুই তো সেই আগের মতই আছিস আমার পিছু লাগা ছারলি না।

হ্যাঁ বলতে পারিস তবে তুই কি বদলেছিস।

আর হ্যাঁ কাল সকাল সকাল আছিস নয়টা নাগাদ পৌছে যাব।

আচ্ছা ঠিক আছে আসবো নে।

গুড নাইট

গুড নাইট, বাই

পরের দিন সকালে আমি যখন আমার বন্ধু রোহিতকে রিসিভ করার জন্য বাস স্টেশনে অপেক্ষা করছি। তখন দেখি ধানসিঁড়ি অপেক্ষা করছে।

আমি তখন ওর কাছে গিয়ে বললাম

হেই হ্যালো গুড মর্নিং

হুম সেম টু ইউ

তুমি এখানে

আমারও তো একই প্রশ্ন তুমি এখানে

আমি তো যাচ্ছি রেলস্টেশনে আমার বন্ধুকে রিসিভ করতে

আমিও তো যাচ্ছি রেলস্টেশনে আমার দাদাকে রিসিভ করতে।

ওহো তাহলে আমাদের গন্তব্য স্থানে একই ছিল তাহলে একসাথে যাই

রেল স্টেশনে পৌঁছেছি। এক দুই ঘন্টা কেটে গেল।তারপরেও আমার বন্ধুটার এলোনা আমি খুব বিরক্ত হয়ে ফোন করছি তাও ফোন বন্ধ বলছে।

ধানসিঁড়িও দেখি একই অবস্থা

আমি বলছি তোমার দাদার দেখা পেলে

না পাইনি এখনও এখনও কেন দেরি করছে এটাই বুঝতে পারছিনা ফোন করছি তাও ফোন বন্ধ বলছে।

আমার বন্ধুটা ও তাই। কি যে হলো না।

ন’টায় কথা ছিল এখন বাজে এগারোটা তাও এলোনা

যখন বারোটা বাজে তখন দেখি ও দূর থেকে আসছে আমি যখন দৌড়ে ওর কাছে গেলাম দেখি ধানসিঁড়ি আমার সাথে সাথে দৌড়াচ্ছে আর কাছে গিয়ে যেটা হলো সেটা হলো আমরা দুজন একই ব্যক্তি কে জড়িয়ে ধরলাম ওর দাদাকে আর আমি আমার বন্ধুকে। তখন ও বলল তুই এখানে

ধানসিঁড়ি

হ্যাঁ আমি এখানে তুই আসবি বলে আমি তোকে রিসিভ করতে যাচ্ছি আর কতক্ষণ বসে আছি জানিস তোর জন্য আমার মুড খারাপ হয়ে গেল।

হ্যাঁ কিন্তু আমারও মনটা খারাপ হয়ে গেল ।

কিন্তু ধানসিঁড়ি তোর বন্ধু তো আগে বলিস নি।

বলার কি আছে।

কেন তোরা দুজন দুজনকে চিনিস নাকি একসাথে আছিস

হ্যাঁ চিনি মানে ভালো করেই চিনি

একই সাথে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি

ও আচ্ছা

ঠিক আছে চল আমাদের বাড়িতে চল ধানসিঁড়ি রান্না করেছে খেয়ে আসবি।

না অন্য দিন যাব তুই আছিস বিকালে। আড্ডা দিব

না তুই চল না খেয়ে আছিস।

জোর করে আমাকে নিয়ে গেল। আর আমি আরো দুজনেই ধানসিঁড়ি হাতের রান্না খাচ্ছি।

খুবই সুন্দর রান্না। যেন একটি অমৃত পান করল

ধানসিঁড়ি বললো কেমন হয়েছে রান্না

আমাদের গ্রামের ওই কাঁঠালগাছ ।যষ্টি মাসে কাঁঠাল খেলে যে রকম লাগে ঠিক সেরকমই হয়েছে খুবই রসালো সুস্বাদু এবং অমৃত।

আপনি বুঝি কাঁঠাল খেতে খুবই পছন্দ করেন

খুব। বিশেষ করে আমাদের বাড়ির পিছনে দিকে একটা ছোটখাটো কাঁঠাল গাছ আছে। ওই গাছের কাঁঠাল না খেলেই তো আমার জষ্টি মাস শেষ হয়না।

তাই বুঝি

হ্যাঁ জানিস ধানসিঁড়ি

সত্যি বলেছিস একবার গিয়েছিলাম ওদের গ্রামে খুবই সুন্দর কাঁঠাল গাছ কিন্তু আমাকে না অল্প করে দিয়েছিল খেতে আর ওসব গুলি খেয়ে নিয়েছিল।

এসকেএইচ সৌরভ হালদার
বাংলাদেশ

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট