সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ


বুধবার,০১/০১/২০২০
651

মিজান রহমান, ঢাকা: বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে রাজনৈতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা, সব সূচকে অগ্রগতি, সাফল্য আর উন্নয়নের ফানুস উড়িয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুরু হয়েছে উন্নয়নের পথে গণতন্ত্রের অনন্য যাত্রা। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন শুধু উন্নয়নের রোল মডেলই নয়, মানবিক রাষ্ট্র হিসেবেও প্রশংসিত। কথিত তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ আজ নিজের অর্থে স্রোতস্বিনী পদ্মায় স্বপ্নের বড় সেতু করার দেশ, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার দেশ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্র বিজয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান করার দেশ। আর এসবই সম্ভব হয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ তনয়া, গণতন্ত্রের মানসকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রমে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি সংগ্রাম করে চলেছেন প্রতি মুহূর্তে। এখন সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ, দুয়ারে জনগণতন্ত্রের হাতিছানি।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালির সংগ্রাম বহু দিনের। বাঙালি বরাবরই গণতন্ত্র প্রিয়। অর্থনৈতিক ও চিন্তার মুক্তির জন্য প্রথমিক শর্ত হিসেবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়ও শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তবে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা কখনোই আনন্দঘন ছিল না। বার বার তা বাধা পেয়েছে। ১৯৭১ সালে কোটি মানুষের স্বপ্নের বিজয় অর্জিত হয়েছিল জাতির লাখো বীরসন্তানের আত্মত্যাগ ও বীরত্বের মধ্যদিয়ে। শুরু হয়েছিল গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সমৃদ্ধ স্বাধীনসার্বভৌম আত্মমর্যাদা সম্পন্ন স্বপ্নযাত্রার। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে সেই যাত্রা থামিয়ে দেয় কুচক্রীমহল। তবে ২১ বছর পরে বাঙালি বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বেই আবার জেগে ওঠে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের গণতন্ত্র এখন মজবুত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। দেশের আর্থসামাজিক কাঠামোর এক ভঙ্গুর মুহূর্তে ১৯৯৬ সালে বাঙালির স্বপ্নপূরণের আলোকবর্তিকা হয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। নানা দুর্যোগ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে তিনি স্থিতিশীল অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে চালাতে শুরু করেন। কিন্তু ২০০১ সালে ফের ছন্দপতন ঘটে। নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে দেশ চলে যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের হাতে। বহু সংগ্রাম ও আন্দোলনের পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি মহাজোট সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা সুদৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দেশের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন; যার ফলে আজকের এই বাংলাদেশ। স্বাধীন দেশ হিসেবে এর জন্মের সূচনালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ এক স্বপ্নতাড়িত দেশ।

যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা, তার ভিত্তিমূল তৈরি করেছেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও ৭১এর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে জাতিকে করেছেন দায়মুক্ত। তিনি পিতার মতো রাজনীতিকে মানুষের সেবায় ব্রত হিসেবে গ্রহণ করার তাগিদ দিয়েছেন। ক্রয়ক্ষমতার সমতা বিচারে বর্তমানে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৩৩তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির রোল মডেল। বাংলাদেশ আর্থসামাজিক সূচকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন করেছে। তার রূপকল্প২০২১ এবং সংশ্লিষ্ট পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০ থেকে ২০২১) শুধু দেশের পরিকল্পনা মানচিত্রেই পরিবর্তন আনেনি, পরিবর্তন করে দিয়েছে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের সব পথনকশা; যার ফল অবলোকন করা যায় সব আর্থসামাজিক সূচকের ধনাত্মক প্রবণতায়। আর এই অর্থনৈতিক সূচকের ধনাত্মক ছাপ পড়েছে সামাজিক সূচকগুলোতেও। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যেসমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশশিরোনামের ইশতেহার তৈরি করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সুদৃঢ় অবস্থান জনমনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তার বিশেষ অঙ্গীকার হিসেবে ২১টি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

এগুলো হলোআমার গ্রামআমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ’, ‘পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা’, ‘তারুণ্য ও শক্তিবাংলাদেশের সমৃদ্ধি : তরুণযুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা’, ‘সব স্তরে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা’, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ’, ‘নারীর ক্ষমতায়ন’, ‘লিঙ্গ সমতা ও শিশুকল্যাণ’, ‘সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূল’, ‘মেগা প্রকল্পগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন’, ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা’, ‘সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি’, ‘দারিদ্র্য নির্মূল, ‘সব স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি’, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা’, ‘সার্বিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার’, ‘আধুনিক কৃষিব্যবস্থা’, ‘দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন’, ‘ব্লুইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়ন’, ‘নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা’, ‘প্রবাসীকল্যাণ কর্মসূচি’, ‘টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। এগুলো আজ উন্নয়নের রোল মডেল হওয়ারগোপন জাদু। এইজাদুযাত্রায় শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় অর্জন মানুষের ভালোবাসা। তিনি পরিবারের সব আপনজনকে হারিয়ে দেশবাসীর মধ্যেই তার পরিবার ও আপনজন খুঁজে পেয়েছেন। জনগণ তাকে রক্ষা করতে মানববর্ম তৈরি করে বুকে আগলে রেখেছে, বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের জন্যই। পিতার মতো বরাবরই তিনিও ঘাতকের ষড়যন্ত্রের টার্গেট। একবার নয়, দুবার নয়, ১৯ বার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া মৃত্যুঞ্জয়ী নেত্রী। তিনি প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায়; বাংলাদেশ বিনির্মাণের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখিয়েছেন উন্নত বাংলাদেশের। এ দেশে দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। দেশ ভাগের আগে ও পরের সব সরকার বলেছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কথা। কিন্তু একমাত্র ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় এসে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ আজ বিশে^র কাছে রোল মডেল, উন্নয়নের রোল মডেল। বিদেশি সাহায্য নির্ভরতা কমিয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে, জাতি হিসেবে আমাদের গর্বের বিষয়।

এর পেছনে মায়ের মতো মমতা দিয়ে সাহস জুুগিয়েছেন, দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার জন্যই আজ আমরা স্বপ্ন দেখি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, নতুন প্রজন্মের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মডেলস্বরূপ। বর্তমান প্রজন্ম জ্ঞান বিজ্ঞানের শিক্ষায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে নিজেরা যাতে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে এজন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার চেয়ে দেশপ্রেমিক এদেশে আর নেই। প্রধানমন্ত্রী চান নতুন প্রজন্ম উপযুক্ত শিক্ষালাভের মাধ্যমে আদর্শ নাগরিক হিসেবে নিজেদের তৈরি করবে। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী ট্যানেলসহ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন বিদেশিরা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অসাধারণ নেতৃত্বে উন্নয়ন ও অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বে বাঙালির পরিচয় বদলে দিয়েছেন। তিনি দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে দল চারবার ক্ষমতায় এসেছে। উন্নয়ন ও অর্জনের মাধ্যমে তিনি দেশকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাছে কেস স্টাডি। কারণ খাদ্য ঘাটতির দেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। দেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, অবিস্মরণীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশ। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় মর্যাদার। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তার একটা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। বাংলাদেশকে সবাই তখন আলাদাভাবে বিচার করবে। আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিরও সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানও মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি অনেক ইতিবাচক খবর। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে। বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে। আরো বেশি হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ সুগম হবে।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট