নেতা তো অনেক, নেতাজী একজনই


মঙ্গলবার,১৪/০১/২০২০
1206

আনন্দ চট্টোপাধ্যায়: আজ থেকে অনেক বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজপুর হরিনাভির কাছে চাংড়িপোতা বলে একটা গ্রাম ছিল। শ্রী হরনাথ বোস বলে এক ভদ্রলোক সেখানে প্রায় দেড়শো বছর পূর্বে একটা বসত বাড়ি তৈরি করেন। তার পুত্র শ্রী জানকি নাথ বোস পরবর্তীকালে প্রভাবতী দেবীর সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন । এই প্রভাবতী দেবীর গর্ভে উড়িষ্যার কটকে ১৮৯৭ সালের ২৩-শে জানুয়ারী মহা বিপ্লবী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্ম হয় । সুভাষ চন্দ্র ছিলেন আট ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে অষ্টম । কিছুদিন পরে জানকি নাথ কটক থেকে পরিবার সমেত কলকাতায় চলে আসেন ও এলগিন রোড়ের বাড়ি যাকে এখন নেতাজী ভবন বলা হয় সেখানে বসবাস করতে আরম্ভ করেন । তবে তিনি প্রায়ই চাংড়িপোতার বাড়িতে এসে থাকতেন ।মহানায়ক সুভাষ চন্দ্র বসু কোনোদিনই নিজে বাড়ি তৈরি করার সময় পাননি । ফলে তিনি অনেকবারই হরিনাভির কাছে এই বাড়িতে এসে থেকেছেন । চাংড়িপোতা নামটা অনেকদিন আগেই বদলে গেছে । এখন এই জায়গাটার নাম কোদালিয়া । যাই হোক, নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত এই পৈতৃক বসত ভবনটি অনেক দিক থেকেই ঐতিহাসিক ।

বর্তমানে বাড়িটার কয়েকটা অংশ দেখতে পাবেন । প্রথমেই জাল দিয়ে ঢাকা বিরাট বারান্দা সহ ঠাকুর দালান । খানিকটা অংশ জুড়ে একটা পোস্ট অফিস চলছে । ঠাকুর দালানের উপর পোস্ট অফিসটি বহু বছরের পুরানো । ঠাকুর দালানের সামনেই আড়াআড়ি ভাবে দেখতে পাবেন একটা লাইব্রেরি, নাম হরনাথ বীণাপানি লাইব্রেরি । এই লাইব্রেরিটি নেতাজীর পিতা জানকি নাথ বোস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । লাইব্রেরি আজো খোলা হয় । এর ভিতরে একটা ছোট সংগ্রহালয় মতো আছে । যেখানে নেতাজীর ব্যবহার করা বেশ কিছু সামগ্রী সাজানো আছে । এই লাইব্রেরির পাশেই নেতাজীর বিরাট এক মূর্তি বসানো । ঠাকুরদালানের ডান দিক দিয়ে একটা রাস্তা একটু ভিতর দিকে ঢুকে গেছে । একটু ঢুকেই ডানদিকে তাকালে দেখতে পাবেন সেই বিখ্যাত বাড়িটা । বিরাট পাঁচিল দিয়ে ঘেরা । এই বাড়িটা রোজ খোলা থাকেনা । ২৩-সে জানুয়ারী, ১৫-ই অগাস্ট আর দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমুতি মেলে । বাইরে থেকে একটা বড়ো শস্য গোলা চোখে পড়ে ।গেটের ফাঁক দিয়ে দেখা যায় বাড়ির সামনে এক বিশাল প্রাঙ্গন । মাঝখানে পতাকা উত্তোলন করার বিরাট বেদি । বাড়িটা দোতালা । দরজা জানলা সবই বন্ধ । স্থানীয় লোকজনের মুখে শুনলাম যে দোতালা ওঠার সিঁড়ির মাঝ বারবার একটা গোপন দরজা আছে । যেটা দিয়ে সোজা বাড়ির পিছনে পৌঁছানো যায় । যদি কোনো ব্রিটিশের তাবেদার পুলিশ এসে পড়ে, তাই পালিয়ে যাবার ওটাই ছিল রাস্তা । স্থানীয় লোকজনেরাই সব কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখেন । প্রত্যেক বছরই ২৩-সে জানুয়ারী মূর্তিটি রং করা হয় ।
সামনেই ২৩-শে জানুয়ারী,বলি কি ঘুরে আসুন না একবার । খুব ভালো লাগবে । নেতা তো অনেক । নেতাজী একজনই ।

পথ নির্দেশ : যদি বাসে বা অটোতে যান তবে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া থেকে বারুইপুরগামী যে কোনো বাস বা অটো ধরে নিন । দূরত্ব ছয় কিলোমিটার মতো । নামবেন লালবাড়ি স্টপেজে । ওখান থেকে ডানদিকে ৩০০ মিটার মতো ঢুকলেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন । যদি শিয়ালদাহ থেকে আসেন তবে দক্ষিণ বিভাগের যে কোনো বারুইপুর লোকাল, ডায়মন্ড হারবার লোকাল বা লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল ধরে সুভাষগ্রাম স্টেশনে নেমে রিক্সা কিংবা ভ্যান গাড়ি ধরে আসুন ।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট