বিষন্নতা ও বর্তমান সমাজ
রামপ্রসাদ দাস
(শিক্ষক)
আমাদের সবার মনেই আবেগ আছে । আবেগ মনের একটি বিশেষ কাজ । আবেগ বা অনুভূতি আমাদের মনের ভাবকে পরিস্ফুট করে , যার ফলে আমাদের মনে যে সুখ দুঃখ হয় -সেটা বুঝতে পারি। প্রতিদিনের জীবনে যখন আমরা বিপদে পড়ি বা দুর্ভাগ্যের শিকার হই বা মনে দুঃখ পাই আবার যখন আমাদের কোনো প্রাপ্তি যোগ ঘটে অর্থাৎ যখন আমরা অনুকূল অবস্থায় পড়ি তখন আমাদের সুখের অনুভূতি হয় । স্বাভাবিক অবস্থায় এইরকমই ঘটে , দুঃখ বা সুখের অনুভূতির একটা কারণ থাকে কিন্তু ডিপ্রেশন বা বিষন্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বাস্তবে কোনো কারণ ছাড়াই দুঃখ সুখের অনুভূতি হয়।
মাথা থাকলে যেমন মাথাব্যথা হবেই, ঠিক তেমনি মন থাকলে মানসিক সমস্যাও হবেই। মানসিক অসুস্থতা মানেই কিন্তু পাগলামি নয়। আমাদের চারিপাশে অসংখ্য মানসিক রোগী ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যাদেরকে বাইরে থেকে দেখলে যথেষ্ট সুস্থ মনে হবে । তারা যথেষ্ট স্বাভাবিক । তারা আপনার সাথে একসঙ্গে বসে চা খাবে রাজনীতির কথাবার্তা আলোচনা করবে, আপনি ঘুণাক্ষরেও তার ভেতরের অস্থিরতাকে কিছুতেই আন্দাজ করতে পারবেন না । বিশেষ কোনো মুহুর্তে হঠাৎ এদের অসুস্থ সত্তাটি বেরিয়ে পড়বে ।
ডিপ্রেশন এবং তার লক্ষণ ডিপ্রেশনের অনেকগুলি লক্ষণ আছে:-
সভ্যতা যত উন্নত হচ্ছে মানুষের মধ্যে অবসাদ তত বাড়ছে। হতাশা এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বোঝা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। আবার সাধ ও সাধ্যের মধ্যে বিস্তর ফারাকে বিষন্নতার মাঝে নিজের জীবন ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা আশাহীনতাকে ত্বরান্বিত করে আত্মহননে বাধ্য করছে। বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার, মাদকাসক্তি প্রভৃতির পাশাপাশি যারা মনে করে যে তাদের আর কিছু করার নেই বা যন্ত্রণার মুক্তি নেই তারা সেই থেকে মুক্তিলাভের আশায় নিজের জীবন বিসর্জন দেয়।
পৃথিবীতে প্রতিবছর ১০ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে, গত ৫০ বছরে যা ৬০% বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে আবার পুরুষদের আত্মহত্যার হার মহিলাদের চেয়ে ৪ গুণ। অর্থাৎ যাদের দায়দায়িত্ব বেশি তারাই কিন্তু এর শিকার বেশি।
রবীন্দ্রনাথ এক জায়গায় বলেছেন : “আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন।” জীবনে দুঃখ,ব্যথা,বেদনা এতো নিত্য সঙ্গী।মৃত্যু চিরন্তন সত্য।কিন্তু জীবন যুদ্ধে হতাশ হয়ে মৃত্যু বরণ করা এটা কাম্য নয়।”suicide is not the solution” .
আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। এতে জীবনের অপ্রাপ্তি পূর্ন হয়না, বরং ফেলে রেখে যেতে হয় প্রাপ্তি গুলোকে। তাকিয়ে দেখলে সেগুলোর মূল্য কিন্তু কিছু কম ছিলো না। কাল থেকে আবার ফুল ফুটবে, গান, আনন্দ, হুল্লোড় সব চলবে। কারোর কিস্যু এসে যাবে না। শুধু একাই পরাজিত হয়ে চলে যেতে হয় অতীতের পাতায়। বড়ই হতাশার এই মৃত্যু।
বড় হতে হলে বড় মানুষের সাথে মিশতে হয়, চলতে হয়,ওদের কথা শুনতে হয়। এক্ষেত্রে School – College এ পড়াশুনার সময় বন্ধু নির্বাচনটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সাবকনশাস মাইন্ড আপনাকে আপনার বন্ধুদের কাজ দ্বারা প্রভাবিত করে। আমরা নিজেদের অজ্ঞাতসারেই আমাদের চাইতে ইনফেরিয়র লোকজনের সাথে ওঠাবসা করি, কারণ তখন আমরা নিজেদেরকে সুপিরিয়র ভাবতে পারি। এ ব্যাপারটা সুইসাইডাল। আশেপাশে কাউকেই বড় হতে না দেখলে বড় হওয়ার ইচ্ছে জাগে না। অনেকে আরেকটা ভুল করেন- সেটি হল,ধনীঘরের সন্তানদের সাথে মিশে নিজেকে ধনী ভাবতে শুরু করা। মানুষ তার বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। উজাড় বনে তো শেয়ালই রাজা হয়। আপনি কী শেয়ালরাজা হতে চান,নাকি সিংহরাজা হতে চান,সেটি আগে ঠিক করুন।
আমাদের জীবনটা অনেকটা পিরামিডের মতন । আমরা যত বেশি উপরের দিকে যাব তত , আমরা বেশি নিঃসঙ্গ হতে থাকব । আর এই অসুখ হঠাৎ হয় না , আস্তে আস্তে আসে । পাওয়া না পাওয়ার ব্যালেন্স তৈরি করতে না পারলেই বিষন্নতা তৈরি হয় । যা চেয়েছি সব পেয়েছি , না টাকে মেনে নিতে না পারা থেকেই বিষন্নতার জন্ম হয়। আর সাকসেসফুল মানুষদের মধ্যেই বিষণ্নতা বেশি কাজ করে। বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে। তারা সমাজে প্রকাশ করতে পারে না, ভাবে পাছে যদি কাপুরুষতার লক্ষণ হিসাবে প্রকাশ পায় । সমাজ কিভাবে নেবে, সেই চিন্তাও এক বড় সমস্যার।
ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা আসলে কেমিক্যাল ইমব্যালেন্সের কারণেই হয়। এটা আসলে মস্তিষ্কের এক অদ্ভুত সমস্যা যখন ভেতর থেকে উৎসাহদায়ক মৃত্যুকে আপন করে নিতে বলে তুমি পালিয়ে যাও তবেই তুমি মুক্তি পাবে । হাজারো কারণ থাকবে নিজেকে শেষ করে দেয়ার । শেষে বলি নিজের খেয়াল নিজেকেই নিতে হয়।।
ডিপ্রেশনের কিছু খুব স্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে। প্রিয়মানুষটির দিকে নজর দিন , দেখুন নিচের লক্ষণগুলোর কোনওটা তার মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন কিনা।
1. প্রতিদিনের কাজকর্মে অনীহা
2. অপরাধবোধ এবং আত্মপ্রত্যয়ের অভাব
3. রাত্রে না ঘুমোনো
4. খিদে না পাওয়া বা বেশি-বেশি খাওয়া
5. ক্লান্ত হয়ে পড়া এবং আশেপাশের ঘটনা থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া
6. অধ্যবসায়ের অভাব, দুর্বল স্মৃতি এবং নেগেটিভ চিন্তাভাবনা
7. আত্মহত্যা নিয়ে কথা বলা বা সেই বিষয়ে নেটসার্ফিং করা
লক্ষণগুলির তীব্রতার উপর নির্ভর করে হতাশাজনক পর্বকে হালকা, মাঝারি বা গুরুতর হিসাবে ভাগ করা হয়। মাঝারি ও তীব্র হতাশার কার্যকর চিকিত্সা রয়েছে। হতাশা দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে।
আজকাল অনেক রকম চিকিৎসা পদ্ধতি বেরিয়েছে সবার প্রথম অসুস্থ মানুষটির অসুস্থতাকে উপলব্ধি করতে হবে। তাকে কোন একজন ডাক্তার বাবুর কাছে নিয়ে যেতে হবে। ডাক্তারবাবুরা সাধারণত এস এস আর আই এবং ট্রাই গ্লিসারিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট দিয়ে চিকিৎসা করেন । সাথে সাথে কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ও বিহেভিয়ার থেরাপির কথাও বলে থাকেন । দক্ষ চিকিৎসক এবং উপযুক্ত পরামর্শদাতার সাইকোথেরাপি এই রোগকে বিনাশ করতে পারে।
সাহায্যের হাত:-
সন্তান যখন আপনার তখন সবচেয়ে বেশি দায়িত্বও আপনার। সে পড়াশোনা করছে কিনা সেটা দেখা যেমন কর্তব্য, সেরকমই তার মনে কী চলছে সেটা বোঝাটাও জরুরি। হোমওয়ার্কের খাতা দেখার সঙ্গে খোঁজ নিন সে সারাদিন স্কুলে বা কলেজে কী করেছে। তাকে কোনও বিশেষ ঘটনা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে কিনা সেটাও বোঝার চেষ্টা করুন। লক্ক্ষ্য রাখুন আচরণগত কোনো সমস্যা তৈরি হচ্ছে কিনা হতাশার কোন চিহ্ন তার মধ্যে পাচ্ছেন কিনা
একজন সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলার হিসেবে সবার কাছে অনুরোধ এরকম সিদ্ধান্ত নেবেন না। পরিবারের সাথে কথা বলুন, বন্ধুদের সাথে,প্রয়োজনে আমাদের সাহায্য নিন, আমরা আছি আপনাদের সমস্যার দূর করার জন্য। এভাবে শেষ হওয়া কোনো সমাধান না।
সবার উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা, আজকালকার শো অফ এর দুনিয়ায় নিজেকে প্রমাণ করতে গিয়ে নিজস্বতা হারিয়ে ফেলবেন না। মানসিক স্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মন খারাপ হলে শেয়ার করুন, মন যা ভালো চায় তাই করুন, অন্যের মন খারাপ শুনলে তার কথা শুনুন, চেষ্টা করুন তাকে ভালোরাখার। সর্বোপরি ভালো থাকুন, অন্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করুন,তা না হলে এভাবেই অকালে ঝরে পরবে সুশান্ত সিং রাজপুতরা।
সামাজিকতার ঠুনকো মুখোশ সরিয়ে আমারা আজ যদি ভালো না থাকতে পারি তাহলে খুব তাড়াতাড়ি এই ডিপ্রেশন পুরো সমাজকে গ্রাস করবে।
রামপ্রসাদ দাস
প্রধান শিক্ষক
OFDC PRIMARY SCHOOL
যশোর রোড কোলকাতা -28
Best Deals starting from 149
Best Deals on BISS products
Best Deals starting from 129
Cases and Cover starting from 119
Offers on Pet Food
Backpacks and Travel Accessories from Fur Jaden starting Rs. 299
High On Features Low on Price: Smart Watches from Gionee & More