পশ্চিম মেদিনীপুর:- পাত্র নিকেতনের বহু পুরানো পারিবারিক লক্ষী পুজোতে জৌলুস কমছে এবার। শুধু আড়ম্বরই কমছে তা নয়, আসছেন না দুরদুরান্তের আত্মীয়রা। শালবনীর সারসবেদিয়ার এককালের জমিদার ‘পাত্র বাড়ি’তে লক্ষী পুজো হয়ে আসছে প্রায় দুই শতকের কাছাকাছি। যেখানে পারিবারিক প্রথা ও ঐতিহ্য মেনে আরাধনা করা হয় ধনদেবীর। পুজো উপলক্ষে চলে দেদার জাকজমক। রঙচটা দালানে পড়ে নতুন রঙের ছোঁয়া, ঝাড়বাতি আর রকমারি আলোর রোশনাই এর ঝলকানিতে গোটা গ্রাম জুড়ে শুরু হয় আনন্দ উৎসব। বসে যাত্রার আসর, চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিন্তু করোনার কারনে এবার সেই বনেদি বাড়ির লক্ষী পুজোও ফিকে হয়ে উঠেছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর সারসবেদিয়া একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। এই গ্রামেই বাস করতেন তদানিন্তন জমিদার তিতুরাম পাত্র। প্রায় দশটি মৌজার কয়েক শত বিঘা জমির মালিক ছিলেন এই তিতুরাম৷
আশ্বিনের শারদ প্রাতে দিকে দিকে শিউলি পদ্মের সমারোহ। মাঠে মাঠে সোনালী ধানের ঢেউ খেলে যাচ্ছে। কথিত আছে আশ্বিনের এক দুপুরে জমিদার তিতুরাম প্রকৃতির এই অপরুপ শোভা দেখতে বেরিয়েছিলেন একাই। মাঠের অপরুপ শোভা দেখতে দেখতে কখন যে সুর্য মাথার উপর উঠে কিরন বিকিরণ করছে তা খেয়াল করেননি তিনি। সুর্যের প্রচন্ড দাবদাহে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি৷ ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে একটি গাছের নীচে একটু বিশ্রামের জন্য যান৷ গাছের নীচে যেতেই দেখেন নীল শাড়ি পরিহিতা একটি কন্যা বসে আছেন৷ কৌতুহলী হয়ে তিতুরাম জানতে চান তার নাম কি, কোথায় বাড়ি আর কোথায় যাবে? তিতুরামের এই প্রশ্ন শুনেই মেয়েটি জানান যে সে তার নাম নীলাম্বরী। সে তার সাথে যেতে চাই কারন তার অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কিন্তু যাবো বললেই তো আর যাওয়া হয় না। জমিদার কিছুতেই তাকে তার বাড়ি নিয়ে যেতে রাজি নয় আর নাছোড়বান্দা ওই মেয়েটিও যাবেই জমিদারের সাথে। জমিদার যখন কিছুতেই রাজী হলো না ঠিক তখনই নীল শাড়ি পরিহিতা কন্যা নিজের রূপ পরিবর্তন করে মা লক্ষীর রূপ ধারণ করে জমিদার কে জানান যে, তিনি যেন তার নিজের বাড়িতে আরাধনা করেন, তাতে পরিবারের মঙ্গল হবে৷ আর তিনি পুজিতা হবেন নীলাম্বরী রুপে। এই বলে মা লক্ষী আলোর এক ঝলকানির মধ্য দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান৷ আলোর ঝলকানিতে জমিদার তিতুরাম আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। পরে নিজের আচ্ছন্ন ভাব কাটিয়ে উঠে দেখেন কেউ কোথাও নেই। তিনি বাড়ি ফিরে আসেন আর মনস্থির করেন এই কোজাগরী লক্ষী পুজোর দিনই তিনি মা লক্ষীর আরাধনা করবেন জমিদারের দালান বাড়িতেই মায়ের মন্দির নির্মাণ করে মিস্ত্রী ডেকে মায়ের মুর্তি নির্মান করে কোজাগরী লক্ষী পুজোর দিন মায়ের পুজো শুরু করেন। তবে মায়ের কথা মতো মা কে নীল শাড়ি পরিয়ে দুই পাশে দুই দাসী রেখে গজের উপরে বসে থাকা মা নীলাম্বরী দেরীর আরাধনা শুরু করেন। সেই থেকে পাত্র বাড়িতে মা লক্ষীকে এখনো নীল শাড়ি পরিহিতা মা নীলাম্বরী রুপেই পুজো করা হয়।
কালের নিয়মে জমিদারি চলে গেলেও তিতুরাম পাত্রের শুরু করা পুজো নিয়ম ও নিষ্ঠাভরে মা লক্ষী পুজিতা হয়ে আসছেন বংশপরম্পরায়। বয়সের ভারে কাবু পাত্র পরিবারের এক সদস্য শ্যামসুন্দর পাত্র জানান, চার পুরুষ আগে শুরু করা পুজো এবার একশত তিরাশি বছরে পদার্পণ করছে। এখনো সেই নিষ্ঠা ও নিয়ম মেনেই মা কে পুজা করা হয়। পুর্ব পুরুষদের নিয়ম মেনে জন্মাষ্টমীর দিন অদুরে তাল পুকুরের মাটি তুলে আনা হয় প্রতিমা নির্মাণের জন্য৷ পুজোতে ঢাক বাজানো হয় না৷ তার পরিবর্তে ঢোল সানায়ের নহবতের সুর বাজে৷ পুজোর দিক বাজে না মাইক৷ পুজোর আটদিন পর মায়ের অষ্টমঙ্গলা করা হয়। পুজো উপলক্ষে দুরদুরান্তের আত্মীয়স্বজন এমন কি পাত্র বাড়ির সদস্যরা যারা কর্মসুত্রে বিভিন্ন স্থানে থাকেন তারাও এই পুজোতে সামিল হন। চলে খাওয়া দাওয়া হৈ-হুল্লোড়। পরিবারের সদস্যরা মিলিত ভাবে আয়োজন করেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিন্তু এবার করোনার কারনে সব ফিকে হয়ে গিয়েছে৷ কলেজ পড়ুয়া পাত্র পরিবারের সদস্যা সুপ্রীতি পাত্র জানান, ” এবার এই অতিমারির কারনে ঐতিহ্যবাহী পাত্র পরিবারের এই পুজো কিছুটা ম্লান হয়েছে। আসছেন না আত্মীয়রা, হবে না হৈ-হুল্লোড়। তবে নিয়ম মেনেই পুজো হবে। তিন দিন ধরে চলা পাত্র পরিবারের এই পুজোতে এবার মাস্ক ব্যাবহার আবশ্যিক। যারা প্রতিমা দর্শন করতে আসবেন বা পুজোর সঙ্গে যুক্ত সকলকেই মাস্ক দেওয়া হবে। প্রতিদিন মন্ডপ স্যানিটাইজার করা হবে। পাশাপাশি সুপ্রীতি পাত্র আরো জানান পৃথিবী তাড়াতাড়ি কঅরোনা মুক্ত হোক এই প্রার্থনা জানিয়েই এবার পাত্র পরিবারের সদস্যরা মাতবে মা নীলাম্বরীর আরাধনায়৷
Best Deals starting from 149
Best Deals on BISS products
Best Deals starting from 129
Cases and Cover starting from 119
Offers on Pet Food
Backpacks and Travel Accessories from Fur Jaden starting Rs. 299
High On Features Low on Price: Smart Watches from Gionee & More