পশ্চিম মেদিনীপুর : সাল ২০০৮ থেকে ২০১১। মাওবাদী তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছিল সমগ্র জঙ্গলমহল। বিশেষত, অবিভক্ত মেদিনীপুর (ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর), পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া’র পরিস্থিতি ছিল ভয়ঙ্কর! খুন হয়েছিলেন একাধিক বাম নেতা-কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ। বহু আদিবাসী, কুড়মি খেটে খাওয়া অসহায় মানুষকে বাধ্য হয়ে মাওবাদী দের সঙ্গ দিতে হয়েছিল, আর নাহলেই জুটতো অকথ্য অত্যাচার। কেউ কেউ সেই অন্ধকার পথে গিয়ে চিরতরে তলিয়েও গেছেন। মাওবাদীদের বিভিন্ন দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল, ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে শাসন ক্ষমতা থেকে সরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন। স্বভাবতই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর, মাও অত্যাচার মুক্ত হয়েছে জঙ্গলমহল সহ সারা রাজ্য। দুই আমলেই এনকাউন্টার করা হয়েছে একাধিক মাও নেতাকেও।
নতুন সরকারের আমলে অসংখ্য মাও নেতা-নেত্রী থেকে সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেছেন। জুটেছে চাকরি ও পুনর্বাসন। শুধু তাই নয়, মাওবাদীদের হাতে নিহত পরিবারগুলিকেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে বর্তমান সরকারের তরফে। কিন্তু, সেই ঘোষণা বা প্রতিশ্রুতি যে এখনও সম্পূর্ণ করা হয়নি, তা বিভিন্ন সময়ে অত্যাচারিত বা ভুক্তভোগী পরিবারগুলির আন্দোলন থেকেই বোঝা যাচ্ছে। সোমবার মেদিনীপুর শহরে জেলাশাসকের দপ্তরে এমনই ১৫৫ টি পরিবার এসেছিল শালবনী ব্লক থেকে। যাদের মধ্যে কোন পরিবার মাওবাদীদের দ্বারা অত্যাচারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত তো কোনো পরিবার বাধ্য হয়ে মাওবাদী দলে নাম লিখিয়ে রাজরোষে পড়ে এখনও মামলার জালে জড়িয়ে আছে! সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এসেও এখনও তাঁদের মাও-মামলা থেকে মুক্তি জোটেনি। শালবনী ব্লকের এরকমই দেড় শতাধিক পরিবার প্রশাসনের কাছে পুনর্বাসন ও মামলা থেকে অব্যাহতির করুণ আর্ত নিয়ে পৌঁছেছিল সোমবার।
রাজ্য সরকারের পুনর্বাসন প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত করা এবং মাওবাদী তকমা দিয়ে পুলিশী মামলার নিষ্পত্তির দাবিতে তাঁরা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসকের দপ্তরে বিক্ষোভ ডেপুটেশনে কর্মসূচি পালন করল। মাওবাদীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ এবং মাওবাদী মামলায় গ্রেপ্তার হওয়াদের পরিবার পরিজনেরা জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়। তাদের পক্ষে রাজীব মাহাত বলেন, “সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মাওবাদীদের হাতে ক্ষতিগ্রস্থ এবং মাওবাদী অভিযোগে জেল খেটেছেন এই ধরনের পরিবার গুলিকে সরকারি পুনর্বাসনের প্যাকেজ দিয়েছেন। কিন্তু শালবনী ব্লকের এই ১৫৫ টি পরিবার আজও বঞ্চিত। তাই মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এদিনের বিক্ষোভ ডেপুটেশন কর্মসূচি।”