ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা: ইন্টারনেটে একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ছড়ানোর মাধ্যমে যৌন নিপীড়নে ভুক্তভোগীদের ৬৯ দশমিক ৪৮ শতাংশই আপনজনদের হাতে শিকার হন। এর মধ্যে ৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ও অপরাধীর মধ্যে প্রেম ঘটিত সম্পর্কের তথ্য উঠে এসেছে এবং ৩৫ দশিমিক ৭১ শতাংশ ঘটনায় অপরাধী ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত। প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বিষয়ে দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা না হলে এই সামাজিক ব্যাধি মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ১৮ এপ্রিল রোববার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন। ‘বাংলাদেশে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে যৌন নিপীড়ন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) চ্যাপ্টারের গবেষণা সেলের সদস্যরা। দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকাগুলো থেকে সংগৃহীত ২০২০ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫৪টি অপরাধের ঘটনা বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এ উপলক্ষে বেলা ১১টায় আয়োজিত ওয়েবিনারে সংগঠনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ, ঢাবির অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ ইউনিটের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সাইদ নাসিরুল্লাহ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম। গবেষণা প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সংগঠনের রিসার্চ সেলের আহ্বায়ক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার মনিরা নাজমী জাহান।
অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে কিশোর বয়স থেকে সন্তানদের মধ্যে যথাযথ প্যারেন্টিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। পিতামাতা দুজনেই চাকুরিজীবী হলে সন্তানদের মনিটরিং করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তরুণ-তরুণীদের স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ধারাবাহিক যথাযথ সেক্স এডুকেশন খুব প্রয়োজন। একইসঙ্গে ধর্মীয়-সামাজিক শিক্ষা ও সময়ের যথাযথ ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত কাজ দিতে হবে তরুণদের। খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, অপরাধের মাত্রায় বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে ভিন্নতা দেখা যায়। বর্তমানে কভিড পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে অনলাইন কার্যক্রম বেড়েছে। ফলে এ ধরনের অপরাধ করার জন্য সময় বেশি পাচ্ছে। এজন্য অপরাধ প্রতিরোধে বেশি বেশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়া প্রয়োজন। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, অপরাধের শিকার হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা বেশিরভাগই সামাজিক কারণে আপনজনদের সঙ্গে আলোচনা করে না। এটি একদমই উচিত নয়। ঘটনার শুরুতেই কাউকে না জানালে পরবর্তীতে বিষয়টি আরো জটিল হয়ে যায়। এটি সচেতনতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিজ নিজ জায়গা থেকে অপরাধ প্রতিরোধে আওয়াজ তুলতে হবে, তাহলে অপরাধের প্রবণতা কমবে। সৈয়দ নাসিরুল্লাহ বলেন, আইন না জানার কারণে অনেকে অপরাধ জড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে ব্যাপক সচেতনতামূলক কাজ করা প্রয়োজন। কারিগরী জ্ঞান যাদের রয়েছে তাদের অপরাধ করার প্রবণতা বেশি। সাধারণত মধ্যবয়সীরা এর মধ্যে পড়ে। তিনি বলেন, প্রতি থানায় সাইবার ইউনিট করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
এটি হলে অপরাধ আরো নিয়ন্ত্রণ হবে। তানজিম আল ইসলাম বলেন, বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য সাইবার অপরাধ বিষয়ক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি খুব প্রয়োজন। এছাড়া সাইবার অপরাধের বিচার কার্যক্রম কেন দীর্ঘায়িত হচ্ছে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই নিয়ে গবেষণা হতে পারে। গবেষণায় গত এক বছরে পুরো দেশব্যাপী এ ধরনের অপরাধপ্রবণতা, অপরাধীর আদ্যোপান্ত, ভুক্তভোগীর অবস্থান ও হয়রানির মাত্রা এবং সামগ্রিক অর্থে সাইবার স্পেসে ব্যক্তির নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার স্পেসে যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে ৯২ দশমিক ২০ শতাংশ ভুক্তভোগীই নারী । এর মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়স্ক ভুক্তভোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যা প্রায় ৫৬.৪৯ শতাংশ এবং ৩২.৪৭ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের নিচে)। জেন্ডারভিত্তিক ভুক্তভোগীর বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে ১৮ থেকে ৩০ বছর এবং ১৮ বছরের নিচে পুরুষের তুলনায় নারী ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রে পুরুষের সংখ্যা বেশি।
অঞ্চলভেদে ভুক্তভোগীর সংখ্যা: সবচেয়ে বেশি যৌন নিপীড়নের সংবাদ পাওয়া গেছে ঢাকা বিভাগে, যার পরিমাণ ৩৩.১২%। এর পরেই ১৬.৮৮% নিয়েই অবস্থান করছে চট্টগ্রাম। এছাড়া জেলা অনুযায়ী যৌন নিপীড়নের অধিকাংশ ঘটনা বিভাগীয় শহরে ঘটছে।
যৌন নিপীড়নের ধরন ও পরিণতি: ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও প্রচারের ভয় দেখিয়ে যৌন নিপীড়নমূলক অপরাধপ্রবণতার মধ্যে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, আত্মহত্যা, আত্মহত্যার চেষ্টা, যৌনপণ, হত্যা-চেষ্টার মতো ঘটনাগুলোকে পরিসংখ্যানমূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হয়রানিমূলক যৌন নিপীড়নের সংখ্যা শতকরা ৬২ দশমিক ৯৯ শতাংশ, যা সর্বাপেক্ষা বেশি । অন্যদিকে ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীর সংখ্যা শতকরা ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ, যৌনপণ ১৩.৬৪ %, আত্মহত্যা ৩.২৫ %, আত্মহত্যার চেষ্টা ১.৯৫ %, খুনের চেষ্টা ০.৬৫ % এবং অন্যান্য ১.৯৫ % ।
সাইবার স্পেসে যৌন নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যম: সাইবার স্পেসে যৌন নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড (ছবি ও ভিডিও) ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং ভুক্তভোগীকে নিষ্ক্রিয় কিংবা হয়রানিমূলক পরিস্থিতিতে ফেলতে নিপীড়নকারী গোপনে, চাপ প্রয়োগ করে কিংবা প্রতারণা-প্রলোভনের আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর বিকৃত কন্টেন্ট সংগ্রহ করতে যে মাধ্যমগুলো হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করে তার বিশ্লেষণমূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরলে দেখা যায় যে ভিডিও এবং স্থির চিত্র আকারে ধারনকৃত কন্টেন্টের সংখ্যা যথাক্রমে ৫১.৯১% এবং ৩৫.৫২%, যা অন্যান্য মাধ্যমের বিবেচনায় তুলনামূলক সর্বাধিক । যৌন নিপীড়নমূলক কন্টেন্টগুলোর মধ্যে ৩৫.৭১% প্রকাশ্যে সাইবার স্পেসে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে বিভিন্ন প্রকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । ৪০.৯১% ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নকারী কন্টেন্ট ব্যক্তিগতভাবে ভুক্তভোগীকে দেখিয়ে তার উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করেছে । এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে সর্বাধিক সংখ্যক কন্টেন্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর জন্য নিপীড়নকারী আশ্রয় নিচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের কূট কৌশল ও প্রতারণার।
ভুক্তভোগী এবং অপরাধীর মধ্যে সম্পর্ক: ভুক্তভোগী এবং অপরাধীর মধ্যেকার বিদ্যমান সম্পর্ক বিবেচনায় নিলে দেখা যাচ্ছে যে, ৩৫.৭১% ক্ষেত্রে অপরাধী ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত । এছাড়া প্রায় ৩৩.৭৭% ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী এবং অপরাধীর মধ্যে প্রেম ঘটিত সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। অন্যদিকে অপরিচিত নিপীড়নকারীর দ্বারা আক্রান্ত ভুক্তভোগীর সংখ্যা শতকরা ১৪.২৯ শতাংশ ।
যৌন নিপীড়নের কারণ: যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্য হিসেবে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে অন্যতম মুখ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে, যা ৬৩.০৭% ঘটনায় পাওয়া গেছে। পাশাপাশি কারণ হিসেবে প্রতিশোধমূলক প্রবৃত্তি ৬.২৫% ক্ষেত্রে, অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার প্রবণতা ২৩.৮৬% ক্ষেত্রে । এছাড়াও চাকরির বদলি সংক্রান্ত তদবির, খামখেয়ালিপনা এবং অন্যান্য বিবিধ কারণগুলো প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে যথাক্রমে ০.৫৭, ০.৫৭ এবং ৫.৬৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ।
প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ: প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উন্নত দেশগুলোর আদলে নারী ও শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ণ ও সচেতনতা তৈরিসহ ১১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে গণমাধ্যমে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচার, প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, যথাযথ প্রক্রিয়ায় সেক্স-এডুকেশন বৃদ্ধি, ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে প্রশিক্ষিত জনবল বৃদ্ধি, ভুক্তভোগী ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে যথাযথ সমন্বয় নিশ্চিত করা, বেকারত্ব দূরীকরণ ও অপরাধপ্রবণ বয়সসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে তরুণদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা, পর্ণোগ্রাফিক আগ্রাসন ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসন বন্ধে দেশীয় সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ও পৃষ্ঠপোষকতা, সন্তানদের সাইবার এক্টিভিটির উপর পিতামাতার নজরদারি।
Best Deals starting from 149
Best Deals on BISS products
Best Deals starting from 129
Cases and Cover starting from 119
Offers on Pet Food
Backpacks and Travel Accessories from Fur Jaden starting Rs. 299
High On Features Low on Price: Smart Watches from Gionee & More