গুজরাটের পাটানে রানি কি ভাব, মোধেরা সূর্যমন্দির ও ভাডনগর হল ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সহ গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্য


রবিবার,১২/১২/২০২১
6599

রানি কি ভাবের নির্মাণ উৎসর্গিত রানি উদয়মতীকে যিনি ছিলেন আনহিলওয়াড পাটানের সোলাঙ্কি রাজবংশের রাজা প্রথম ভীমদেবের স্ত্রী এবং জুনাগড়ের চৌদাসামা রাজবংশের রাজা রা খেনগারের কন্যা। তিনি স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের এই ধাপ-কুয়ো খুব সুন্দর নির্মাণ করেছিলেন একাদশ শতাব্দীতে। এই জয়া ধরনের ধাপ-কুয়োয় রয়েছে দেব ও দেবীর শিল্পকলাশোভিত মূর্তি। এইসঙ্গে পরী ও নাগকন্যারা এতে উৎকীর্ণ। গুজরাটের মাত্র দুটি স্থানকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা দিয়েছে, যার একটি হল রানি কি ভাব। শিল্প ও স্থাপত্যপ্রেমীদের জন্য এটি একটি চিত্তাকর্ষক পর্যটন গন্তব্য। রানাকি ভাব হল লোকগাথার সঙ্গে জড়িত সংস্কৃতির দুর্দান্ত উদাহরণ। 

পুষ্পবতী নদীর তীরে মোধেরায় সূর্যমন্দির নির্মাণ করেছিলেন সোলাঙ্কি রাজবংশের রাজা ভীমদেব সোলাঙ্কি 1026-1027 খ্রিস্টাব্দে। ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই মন্দিরকে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্তম্ভ বলে ঘোষণা করেছে। মন্দিরের ‘গর্ভগৃহ’-এর বাইরে সূর্যের 12টি পৃথক মূর্তি উৎকীর্ণ। এই মন্দির রয়েছে পূর্বদিকে মুখ করে। সকালে যখন সূর্য তাড়াতাড়ি ওঠে, এর কিরণ প্রবেশ করে মিন্দরের গর্ভগৃহে এবং সূর্য মূর্তির মুকুটের একেবারে মাঝখানে রত্নের ওপর পড়ে, যার ফলে জ্বলজ্বল করে গোটা মন্দির। এইসঙ্গে এই মন্দির হল ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের একটি মাস্টারপিস এবং শিল্পপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। প্রতি বছর তিন-দিনব্যাপী উত্তরার্দ মহোৎসব আয়োজন করা হয় এখানে রাজ্য পর্যটন বিভাগের উদ্যোগে, যেখানে ধ্রুপদী নৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। 

গুজরাটের ভাডনগরের রয়েছে পুরাতত্ত্ব, পুরাণ, সাহিত্য, মিউজিক, স্থাপত্য ও শহুরে জীবনের বিভিন্ন শৈলীর উজ্জ্বল অতীত। গুজরাটের মেহসানা জেলায় অবস্থিত ভাডনগর হল একটি প্রাচীন শহর। ভাডনগরের ঐতিহাসিক তাৎপর্য আছে। ভাডনগর অন্যান্য বহু নামে বিখ্যাত যেমন চমৎকারপুর, অনার্তপুর, আনন্দপুর, স্কন্দপুর, অর্কস্থলী ও বৃদ্ধনগর। চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাঙের ট্রাভেলগে ভাডনগরের উল্লেখ রয়েছে। এইসঙ্গে এটি গুজরাটের প্রিয় সন্তান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মস্থান।  

বহু ব্লগার ও ইনফ্লুয়েন্সার গুজরাটের এসব পর্যটন স্থান ঘুরেছেন। আসুন তাঁদের অভিজ্ঞতা জানি। 

ব্লগার1- (রানি কি ভাব)

রানি কি ভাব হল একটি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, যা সত্যিই ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের একটি মাস্টারপিস। এর প্রাচীরগাত্রে বিস্তৃত খোদাই দেখে আপনার চোখ বিস্ময়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। 340 পিলারের সঙ্গে অতুলনীয় খোদাইয়ের নির্মাণ এখানে দেখা যায়। এখানকার ট্যুরিস্ট গাইড এইসঙ্গে ধাপ-কুয়ো ও এর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তৃত ও আকর্ষণীয় বিবরণ দেন, যা এই ধাপ-কুয়োর রূপ সম্পর্কে উন্নত ধারণা জোগায়। আমরা কাছের পাটান শহরও ঘুরেছিলাম। বহু প্রশংসিত পাটানের পাটোলা শারি দেখেছি। এইসঙ্গে আমরা দেখেছি চমৎকার পাটোলা শারির মূল্য এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। শিল্পপ্রেমীদের জন্য পাটান এবং রানি কি ভাব হল সত্যিকারের আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য।

ব্লগার 2 – (মোধেরা সূর্যমন্দির)

মোধেরার সূর্যমন্দির ভ্রমণ করে অনন্য অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। ট্যুরিস্ট গাইড থেকে আমরা জেনেছিলাম যে সূর্যের প্রথম রশ্মি পড়ে গর্ভগৃহের সূর্য মূর্তিতে অর্থাৎ মন্দিরের মূল পবিত্র কেন্দ্রে, যা গোটা মন্দিরকে প্রজ্বলিত করে। এটা কী যে অসাধারণ দৃশ্য! মন্দিরের ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের কাজও এইসঙ্গে চমৎকার। এই মন্দির ভ্রমণ করে পরম শান্তির অভিজ্ঞতা পেয়েছি। মন্দিরের স্তম্ভগুলির ওপর উৎকীর্ণ রয়েছে ভারতের দুটি মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন ঘটনা। এই স্থানের সৌন্দর্যের বর্ণনা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সবার উচিত সূর্যমন্দির ভ্রমণ করা এর সৌন্দর্য উপভোগের জন্য। 

ব্লগার 3- (ভাডনগর)

ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মস্থান ভাডনগর ভ্রমণ করাটা ছিল এক রোমাঞ্চ। আমি সত্যিই এই প্রাচীন শহর ভ্রমণ উপভোগ করেছি। ভাডনগর হল মন্দির শহর সেজন্য এটা ভুল হবে না যদি একে ধর্মীয় স্থান বলা হয়। এখানে বহু মন্দির আছে যেমন আঞ্জোর মাতা, শীতলা মাতা, ছত্রেশ্বরী মাতা, আশাপুরী মাতা, অম্বাজি, সোমনাথ মহাদেব, ধুনেশ্বর, মহাকালেশ্বর, ছাবিলা হনুমান প্রভৃতি। আমরা এর মধ্যে কয়েকটি মন্দির ভ্রমণ করেছি। এইসঙ্গে আমি এখানকার হটকেশ্বর মহাদেব মন্দিরে গিয়েছিলাম। ট্যুরিস্ট গাইড থেকে আমি জেনেছি যে এটা হল নগর সম্প্রদায়ের মানুষের উপাসনা মন্দির। শর্মিষ্ঠা লেকের দৃশ্য খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয়। বৃষ্টির জল সিঞ্চন ও গ্রাউন্ডওয়াটার ব্যবস্থাপনার দুর্দান্ত উদাহরণ হল এটি। আমি এইসঙ্গে ভ্রমণ করেছি ভাডনগরের ঐতিহাসিক স্থানও যেমন গৌরী কুণ্ড, কীর্তি তোরণ ও বিখ্যাত ভগ্নী্দ্বয় টানা-রিরির টম্ব। গুজরাটের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য এখনও সংরক্ষণ করছে ভাডনগর।

চাক‌রির খবর

ভ্রমণ

হেঁসেল

    জানা অজানা

    সাহিত্য / কবিতা

    সম্পাদকীয়


    ফেসবুক আপডেট